Thursday 29 August 2019

"বন্দী কাশ্মীর"

"বন্দী কাশ্মীর"

(সিপিআইএমএল নেত্রী
কবিতা কৃষ্ণান, অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ, এআইডিডাব্লুএ-র  মৈমুনা মোল্লা ও এনএপিএম-এর বিমল ভাল - এই চারজনের একটি প্রতিনিধি দল কাশ্মীরে গেছিলেন সেখানকার প্রকৃত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে। সেখান থেকে ফিরে এসেই, ১৪ আগস্ট, দিল্লীতে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা তাঁদের রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সেখানে কাশ্মীরের মানুষের বয়ান সম্বলিত ভিডিও প্রদর্শন করতে দেয়নি দিল্লীর পুলিশ প্রশাসন। স্পষ্টতই কেন্দ্র সরকার প্রকৃত সত্য প্রকাশিত হতে দিতে চায়না। তথ্যানুসন্ধানী দলের পেশ করা এই রিপোর্টটি তাই সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া জরুরি।)

আমরা ৯ থেকে ১৩ই আগস্ট ২০১৯, পাঁচ দিন ধরে কাশ্মীরের বহু জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। ভারত সরকার যেদিন সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা বাতিল করে, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে মুছে দেওয়ার ও দুটি ইউনিয়ন টেরিটরিতে ভেঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, আমাদের সফর  শুরু হয়েছিল ঠিক তার চার দিন পরে, ৯ই আগস্ট ২০১৯এ।
৯ই আগস্ট শ্রীনগরে পৌঁছে আমরা দেখলাম কার্ফুর জন্য গোটা শহরটা চুপচাপ আর জনমানবহীন - কেবল ভারতীয় সামরিক বাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীতে শহর গিজগিজ করছে। কার্ফু জারি ছিল পুরোপুরি, যেমনটা ৫ই আগস্ট থেকেই চলছে। শ্রীনগরের রাস্তাঘাট জনশূন্য, সমস্ত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা (দোকান, স্কুল, গ্রন্থাগার, পেট্রোল পাম্প, সরকারী অফিস, ব্যাংক) বন্ধ। কেবল কয়েকটা এটিএম, ওষুধের দোকান আর সমস্ত থানা খোলা ছিল। এখানে ওখানে বিক্ষিপ্ত দুচারজন লোক ছিল, তবে দল বেঁধে নয়।

আমরা ব্যাপকভাবে ঘুরেছি, শ্রীনগরের ভিতরে ও বাইরে, শ্রীনগরের কেন্দ্রের ছোট্ট যে জায়গাটার থেকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম কাজ করে, সেটা ছাড়িয়ে অনেক দূরে ঘুরেছি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের চেনা ওই জায়গাটুকুতে সময়ে সময়ে একটা প্রায়-স্বাভাবিক অবস্থা দেখা দেয় – আর তাই দেখেই ভারতীয় মিডিয়া দাবি করছে যে কাশ্মীরের জীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। এর থেকে বড় সত্যের অপলাপ আর কিছু হতে পারে না।

আমরা পাঁচ দিন ধরে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত চষে বেড়িয়েছি, শ্রীনগর শহরে আর কাশ্মীরের গ্রাম ও ছোট শহরগুলোতে শতাধিক সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেছি। মহিলা, স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থী, দোকানদার, সাংবাদিক, ছোট ব্যবসায়ী, দিনমজুর, শ্রমিক, ইউপি, পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা অভিবাসী – আমরা সবার সঙ্গেই কথা বলেছি।  কথা বলেছি কাশ্মীর উপত্যকার  কাশ্মিরী পণ্ডিত, শিখদের পাশাপাশি কাশ্মীরি মুসলমানদের সঙ্গেও।

সব জায়গাতেই আমাদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানো হয়েছিল, এমনকি যাঁরা আমাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দিগ্ধ বা পরিস্থিতির জন্য খুব ক্ষুব্ধ, তাঁরাও আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। মানুষজন যখন ভারত সরকারের বিরুদ্ধে তাদের বেদনা, ক্ষোভ ও বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতি জানাচ্ছিলেন, তখনও আমরা তাঁদের উষ্ণ আর দিলখোলা আতিথেয়তার থেকে বঞ্চিত হই নি। এটা আমাদের খুব গভীর ভাবে নাড়া দিয়েছে।
একমাত্র বিজেপির কাশ্মীর বিষয়ক মুখপাত্র ছাড়া আমরা একজনও পাই নি, যিনি ভারত সরকারের ৩৭০ ধারা বাতিল করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন। উল্টোদিকে  ৩৭০ ধারা ( এবং ৩৫এ)  বাতিল করা নিয়ে এবং যেভাবে এটা বাতিল করা হল তা নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ।

সব জায়গাতেই দেখেছি প্রধান আবেগ হল রাগ আর ভয়। এমনি ঘরোয়া কথাবার্তায় লোকেরা নির্দ্বিধায় তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল, কিন্তু কেউ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি নয়। মুখ খুললেই সরকারের তরফের নিগ্রহের ঝুঁকি রয়েছে।

অনেকেই বলছিলেন যে এখনই হোক বা পরেই হোক ( বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পরে, সে ঈদের পরে , ১৫ই আগস্টের পরে বা আরও পরেই হোক), বড় মাপের বিক্ষোভ হবে বলেই মনে হয় -  তাঁদের ধারণা বিক্ষোভ যদি শান্তিপূর্ণও হয়, হিংস্রভাবে তা দমন করা হবে।

*আমাদের পর্যবেক্ষণের সংক্ষিপ্তসার*

•    ভারত সরকারের ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা বাতিল করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবং যে পদ্ধতিতে তা করা হয়েছে তা নিয়ে কাশ্মীরে তীব্র এবং কার্যত সর্বসম্মত ক্ষোভ রয়েছে।
•    এই ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার কাশ্মীরে কার্ফুর মতো অবস্থা তৈরি করেছে। কিছু এটিএম, ওষুধেরর দোকান, আর থানা ছাড়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান আপাতত বন্ধ রয়েছে।
•    জনজীবনকে থামিয়ে দেওয়া এবং কার্যত কার্ফু চাপিয়ে দেওয়ার ফলে কাশ্মীরের অর্থনৈতিক জীবনও বিকল হয়ে পড়েছে, তাও আবার বকরি ঈদ যা কিনা প্রাচুর্য এবং আনন্দ- উদযাপনের উত্সব, সেই সময়ে।
•    লোকজন সরকার, সেনাবাহিনী বা পুলিশের হয়রানির ভয়ে ভীত। লোকেরা খোলামেলা ঘনিষ্ঠ (ইনফর্মাল) কথাবার্তায় নির্দ্বিধায় তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু কেউ ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে রাজি না।
•    ভারতীয় সংবাদমাধ্যম কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা দ্রুত ফিরে এসেছে বলে যে দাবী করেছে তা চূড়ান্তভাবে বিভ্রান্তিকর। শ্রীনগরের কেন্দ্রস্থলে একটি ছোট এলাকার কিছু বাছাই-করা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তা তৈরি ।
•    পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, কাশ্মীরে কোনও ধরণের প্রতিবাদের কোন জায়গা নেই, এমনকি শান্তিপূর্ণ হলেও না। তবে, এখনই হোক বা পরে, ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হতে পারে।

সরকারের জম্মু-কাশ্মীরের প্রতি আচরণের প্রতিক্রিয়া

•    আমাদের বিমানটি নামার সময় যখন এয়ারলাইন্সের কর্মীরা ঘোষণা করলেন যে যাত্রীরা মোবাইল চালু করতে পারেন, উড়ানের সমস্ত লোকজন (বেশিরভাগই কাশ্মীরী ছিলেন) বিদ্রূপের হাসিতে ফেটে পড়েন। "কী অসাধারণ রসিকতা", এই ছিল প্রতিক্রিয়া, কারণ সেই ৫ই আগস্ট থেকেই মোবাইল, ল্যান্ডলাইন ফোন আর ইন্টারনেট সবকিছু বন্ধ।
•    শ্রীনগরে পা রাখার সাথে সাথেই আমরা একটা পার্কে কয়েকটা ছোট বাচ্চাকে খেলতে দেখলাম, শুনলাম তারা বলছে 'ইবলিশ মোদী’। ‘ইবলিশ' মানে 'শয়তান'।
•    জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত বাবদে আমরা বার বার লোকদের কাছ থেকে যে শব্দগুলি শুনছিলাম তা হ'ল 'জুলম' (নিপীড়ন), 'জ্যাদতি’(অতিরিক্ত / নিষ্ঠুরতা) এবং 'ধোকা '(বিশ্বাসঘাতকতা)। সাফাকাদালের (শ্রীনগরের কেন্দ্রে) একজন যেমন  বললেন, "সরকার আমাদের কাশ্মীরিদের সঙ্গে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করেছে, আমাদের বন্দী করে রেখে আমাদের জীবন এবং ভবিষ্যত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা তো আমাদের মাথায় বন্দুক ধরে, হাত-পা বেঁধে, জোর করে গলা দিয়ে কিছু ঢেলে দেওয়ার মতো"।
•    শ্রীনগর শহরের প্রতিটা গলি, প্রতিটা শহর, প্রতিটা গ্রাম আমরা যে দেখতে গেছি, সবজায়গাতেই  সাধারণ লোকেরা, যার মধ্যে স্কুলের ছাত্ররাও আছে, আমাদের কাশ্মীর নিয়ে দ্বন্দ্বের ইতিহাস বিষয়ে প্রচুর জ্ঞান দিয়েছেন। ভারতীয় গণমাধ্যম যেভাবে এই ইতিহাসকে চুনকাম করে দিয়েছে তাতে তাঁরা ক্ষুব্ধ, হতবাক। অনেকে বলেছেন: "৩৭০ ধারা হল কাশ্মীরের নেতৃত্ব ও ভারতের মধ্যে চুক্তি। এই চুক্তি সই না হলে, কাশ্মীর কখনই ভারতের অন্তর্ভুক্ত হত না। এই চুক্তি না থাকলে ভারতেরও আর কাশ্মীরের উপর দাবীর কোন ভিত্তি নেই।" লাল চকের কাছের জাহাঙ্গীর চক এলাকায় এক ব্যক্তি ৩৭০ ধারাকে  'মঙ্গলসূত্র' হিসাবে বর্ণনা করেছেন (বিবাহিত মহিলারা যে পবিত্র কন্ঠহারটি পরেন), যা কিনা কাশ্মীর ও ভারতের মধ্যে , বৈবাহিক চুক্তির অনুরূপ, একটি চুক্তির প্রতীক । ( ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা বাতিল করা নিয়ে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া নীচে রইল)
•    ভারতীয় মিডিয়ার বিরুদ্ধে মানুষের ব্যাপক ক্ষোভ । লোকেরা তাদের বাড়িতে বন্দী, একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না, সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে পারছেন না বা কোনওভাবেই তাদের কথা তুলে ধরতে পারছেন না। ঘরে বসে তারা দেখছেন যে ভারতীয় টিভি দেখাচ্ছে যে কাশ্মীরীরা সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে। তারা ক্ষোভের সঙ্গে দেখছে যে তাদের বক্তব্যকে মুছে দেওয়া হচ্ছে। সাফাকদলের এক যুবক যেমন বললেন, "কিসকি শাদি হো /, ঔর কৌন নাচ রহা হ্যায়?  (কার বিয়ে  আর কে নাচে) এই সিদ্ধান্ত যদি আমাদের লাভ আর উন্নতির জন্য হয় , তাহলে কেন আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হবে না যে আমরা এ সম্বন্ধে কি ভাবছি?"

৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা বাতিলের প্রতিক্রিয়া
•    অনন্তনাগ জেলার গুড়ী গ্রামের এক জন ব্যক্তি বললেন: "হামারা উনসে রিশতা আর্টিকল ৩৭০ ঔর ৩৫এ সে থা। অব উনহনে আপনে হি পয়ের পর কুলহাড়ি মার দি হ্যায়। আর্টিকলস কো খতম কর দিয়া হ্যায়। অব তো হাম আজাদ হো গয়ে হ্যায়।" ওদের( ভারতের) সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ৩৭০ আর ৩৫এ ধারার মধ্যে দিয়েই ছিল। এখন ওরা নিজেরাই এই ধারাগুলো তুলে দেওয়ার বোকামি করেছে। সুতরাং এখন আমরা মুক্ত।" ইনিই "আমরা স্বাধীনতা চাই" বলে স্লোগান দেন আর তারপর "৩৭০ এবং ৩৫ ধারার পুনরুদ্ধার চাই" বলে স্লোগান দেন।
•    অনেকেই ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারাকে কাশ্মীরের "পেহচান" (পরিচয়) হিসাবে বর্ণনা করছিলেন। তারা মনে করছেন যে এই ধারাগুলো বাতিল করা কাশ্মীরের আত্ম-সম্মান এবং আত্ম-পরিচয়ের উপর অপমানকর আক্রমণ।
•    সবাই অবশ্য ৩৭০ ধারার পুনরুদ্ধারের দাবি করছেন না। অনেকে বলেছেন যে শুধু সংসদীয় দলগুলিই লোকদের বিশ্বাস করতে বলত ভারত  ৩৭০ ধারাকে সম্মান করবে। এঁরা মনে করেন যে  ৩৭০ ধারা  বাতিল হওয়ায় এই "ভারতপন্থী দলগুলিরই" মুখ পুড়েছে। আর যারা ভারতের থেকে কাশ্মীরের "আজাদি"(স্বাধীনতা)  পাওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছিল তাদের কথাই ঠিক তা প্রমাণ করে দিয়েছে। বাতামালুতে এক ব্যক্তি বলেছেন: "যো ইন্ডিয়া কে গীত গাতে হ্যায়, আপনে বান্দে হ্যায়,  ওহ ভি বন্ধ হ্যায়!  যারা ভারতের গুণ গাইত, ভারতের নিজস্ব এজেন্ট ছিল, তারাও বন্দী" একজন কাশ্মীরী সাংবাদিক জানিয়েছেন, "মূলধারার দলগুলি  যে ধরণের ব্যবহার পাচ্ছে, তাতে অনেকেই খুশি। এই দলগুলি ভারত রাষ্ট্রের হয়ে কথা বলত আর এখন তাদের লাঞ্ছনা করা হচ্ছে।"
•    "মোদী ভারতের নিজস্ব আইন, নিজস্ব সংবিধান ধ্বংস করেছেন" এটাও বার বার শোনা গেল। যারা এটা বলেছিলেন তারা মনে করেন যে কাশ্মীরের জন্য ৩৭০ ধারা যত না গুরুত্বপুর্ণ, কাশ্মীরের উপর নিজের দাবীকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ভারতেরই ৩৭০ ধারা বেশি দরকার। তবে মোদী সরকার কেবল কাশ্মীরকেই ধ্বংস করার চেষ্টা করেনি, ভারতের নিজের আইন ও সংবিধানকেও ধ্বংস করেছে।
•    শ্রীনগরের জাহাঙ্গীর চকের এক হোসিয়ারি ব্যবসায়ী বললেন, "কংগ্রেস নে পীঠ মে ছোড়া ভাঙ্কা থা, বিজেপি নে সমনেসে ছোরা ভাঙ্কা হ্যায়।" (কংগ্রেস আমাদের পেছন থেকে ছোরা মারত, বিজেপি আমাদের সামনে থেকে ছোরা মেরেছে)। তিনি আরও বলেন, "ওরা ওদের নিজের সংবিধানকে গলা টিপে মেরেছে। এটা হিন্দু রাষ্ট্রের দিকে প্রথম পদক্ষেপ।"
•    কিছু দিক দিয়ে,  মানুষ ৩৭০-এর তুলনায় ৩৫এ বাতিলের প্রভাব নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। এটি মোটামুটি সবাই মানে যে  যে  ৩৭০ধারা শুধু নামমাত্র, প্রতীকী স্বায়ত্তশাসন ধরে রেখেছে এবং ইতিমধ্যেই  অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু ৩৫এ-ও চলে যাওয়ার পরে মানুষ আশঙ্কা করছেন যে "বিনিয়োগকারীদের কাছে রাষ্ট্রীয় জমি সস্তা দরে বিক্রি করা হবে। আম্বানি, পতঞ্জলি ইত্যাদি সহজেই আসতে পারে। কাশ্মীরের সম্পদ ও জমি দখল করা হবে। কাশ্মীরে এখন যা অবস্থা, তাতে ভারতের মূল ভুখন্ডের থেকে এখানে শিক্ষার এবং কর্মসংস্থানের অবস্থা ভাল তবে আগামীদিনে কাশ্মীরীদের অন্যান্য রাজ্যের লোকদের সাথে সরকারী চাকরির  জন্য প্রতিযোগিতা করতে হবে। এক প্রজন্মের পরে, বেশিরভাগ কাশ্মীরিরা চাকরী পাবে না বা মূল ভূখণ্ডে চলে যেতে বাধ্য হবে। "

"স্বাভাবিকতা" - নাকি "কবরখানার শান্তি"?
কাশ্মীরের পরিস্থিতি কি "স্বাভাবিক" ও "শান্তিপূর্ণ"? এর উত্তর একটা জোরালো 'না'।
•    সোপোরের এক যুবক বলছিলেন: "এটা বন্দুককি খামোশি (বন্দুকের সামনের নীরবতা), কবরিস্তান কি খোমোশি (কবরখানার শান্তি)। "
•    'গ্রেটার কাশ্মীর' সংবাদপত্রের সামনের একটা পাতা খবর আর পিছনে এক পাতা খেলার খবর ছিল: ভিতরে দুটো পাতা শুধু বিয়ে বা রিসেপসন বাতিলের ঘোষণায় ভর্তি ছিল!
•    ৫ থেকে ৯ই আগস্ট মানুষ খাবার, দুধ এবং প্রাথমিক চাহিদার অভাবে খুব ভুগেছে। এমনকি অসুস্থতার ক্ষেত্রেও মানুষকে হাসপাতালে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
•    সরকার দাবি করেছে যে কেবল ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে, "কার্ফু" নয়। তবে বাস্তবে, শ্রীনগরে পুলিশ ভ্যান  সারাক্ষণ টহল দিচ্ছে আর সবাইকে সতর্ক করছে যে তারা যাতে  "নিরাপদে বাড়িতে থাকেন এবং কার্ফ্যু চলাকালীন বাইরে না বেরোন", আর দোকানগুলোও বন্ধ রাখতে বলছে।
•    গোটা কাশ্মীরে কার্ফু চলছে। এমনকি ঈদের দিনেও রাস্তাঘাট ও বাজার নিঃঝুম, জনহীন ছিল। শ্রীনগরের সর্বত্র, রাস্তার কনসার্টিনা তার এবং বিশাল আধাসামরিক বাহিনীর উপস্থিতি মানুষের চলাচলকে সীমিত রেখেছে। এমনকি ঈদের দিনেও একই অবস্থা। অনেক গ্রামে আধা সামরিক বাহিনী আজান দিতে বারণ করেছে – সবাই মিলে একসঙ্গে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার বদলে মানুষ নিজের বাড়িতে বসে নামাজ পড়তে বাধ্য হয়েছে।
•    ঈদের দিন অনন্তনাগ, শোপিয়ান আর পাম্পোরে (দক্ষিণ কাশ্মীর) আমরা একদম ছোট বাচ্চাদেরই শুধু ঈদের সাজে সেজেগুজে ঘুরতে দেখলাম। আর সবাই শোকগ্রস্ত। "মনে হচ্ছে আমরা যেন জেলে রয়েছি” , গুড়ির ( অনন্তনাগ) এক মহিলা বলেছিলেন।  নাগবাল (শোপিয়ান) এর মেয়েরা জানিয়েছেন, "আমাদের ভাইরা পুলিশ বা সেনা জিম্মায় থাকলে, আমরা  কীকরে ঈদ পালন করব! "
•    ১১ই আগস্ট, ঈদের আগের দিন,  সোপোরের এক মহিলা আমাদের জানালেন যে জে অল্প একটু সময়ের জন্য কার্ফ্যু উঠেছে, সেই সময়টুকুর মধ্যে ঈদের জন্য কিছু জিনিস কিনতে তাঁকে বাজারে আসতে হয়েছে। তিনি জানান: "সাতদিন ধরে আমরা আমাদের নিজের বাড়িতে বন্দী। এমনকি আমার গ্রাম লাঙ্গাতে আজও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে, তাই আমি ঈদের কেনাকাটা করতে আর আমার নার্সিং-এর ছাত্রী মেয়ের সঙ্গে দেখা  করতে সোপোর শহরে এলাম। "
•    "এটি সেনাবাহিনীর শাসন,  মোদীর শাসন নয়। জনগণের চেয়ে এখানে সৈন্যের সংখ্যা বেশি", বান্দিপোরার কাছে ওয়াটপুরার এক তরুণ বেকার বলছিলেন। তাঁর বন্ধু যোগ করলেন, "আমরা সন্ত্রস্ত, কারণ কাছের আর্মি ক্যাম্প অসম্ভব অসম্ভব সব নিয়মকানুন চাপাতেই থাকছে। ওরা জোর করছে যে বাড়ি থেকে একবার বেরোলে, আধ ঘন্টার মধ্যে আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে। এবার যদি আমার বাচ্চার শবীর খারাপ হয়, আর আমাকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়, তাহলে আধ ঘণ্টার বেশি সময় লাগতেই পারে। কেউ যদি পাশের গ্রামে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যায়, তাহলে ফিরে আসতে আধঘণ্টার বেশি দেরি হতেই পারে। কিন্তু দেরি হলেই, ওরা আমাদের নাজেহাল করবে।" কাশ্মীরের প্রায় প্রতিটি বাড়ির বাইরে সিআরপিএফের আধাসামরিক বাহিনী  হাজির। স্পষ্টতই এরা কাশ্মীরীদের "সুরক্ষা" দেওয়ার জন্য নেই – উল্টোদিকে, এদের উপস্থিতি মানুষকে আরও ভয় দেখাচ্ছে।
•    বিক্রি না হওয়া ভেড়া ও ছাগল নিয়ে ভেড়া ব্যবসায়ী এবং মেষপালকদের দেখা যাচ্ছে। সারা বছর ধরে পালন করা প্রাণীগুলো বিক্রি হল না। এর মানে তাদের একটা বড় ক্ষতি। লোকেরা পয়সা উপায় করতে না পারায়, অনেকেই ঈদের কোরবানির জন্য পশু কিনতে পারে নি।
•    বিজনোর (ইউপি) এর এক দোকানদার আমাদের বিক্রি না হওয়া মিষ্টি এবং অন্যান্য খাবারের রাশি দেখালেন, সব নষ্ট হচ্ছে যেহেতু লোকেরা কিনতে পারে নি। দোকান, বেকারিগুলো সব ঈদের আগের দিন বসে বসে মাছি তাড়াচ্ছে - নষ্টযোগ্য খাবারগুলো বিক্রি না হয়ে পড়ে আছে।
•    শ্রীনগরের এক হাঁপানি-রোগি অটোচালক আমাদের তার শেষ সালবুটামল এবং অ্যাসথালিনের ডোজটা দেখালেন। তিনি গত কয়েকদিন ধরেই আরও কটা কেনার চেষ্টা করছেন - তাঁর এলাকার সব ওষুধের দোকান আর হাসপাতালের স্টক শেষ। তিনি অন্য বড় হাসপাতালে যেতে পারতেন, সিআরপিএফ তাকে বাধা দিচ্ছে । উনি আমাদের অ্যাসথালিন ইনহেলারের একটা খালি, দুমড়ানো কভারটি দেখালেন – উনি যখন সিআরপিএফ-এর একজনকে বলেছিলেন যে ওঁকে ওষুধ কিনতে দূরে যেতে হবে, লোকটা বুট দিয়ে কভারটা মাড়িয়ে দেয়।  "কেন মাড়ালো ? ওরা আমাদের ঘেন্না করে, তাই", অটোচালক বললেন।

প্রতিবাদ, দমন, নিষ্ঠুরতা

•    প্রায় ১০,০০০ মানুষ ৯ই আগস্ট সৌরায় (শ্রীনগর) প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। সামরিক বাহিনী ছররা-বন্দুক (পেলেট গান)চালিয়ে জবাব দেয়, বেশ কয়েকজন আহত হয়। আমরা ১০ই আগস্ট সৌরায় যাওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু সিআরপিএফের ব্যারিকেডে থেমে যেতে হয়। তরুণ প্রতিবাদকারীদের দেখলাম সেদিন, রাস্তা অবরোধ করে আছেন।
•    শ্রীনগরের এসএমএইচএস হাসপাতালে ছররা-বন্দুকের গুলিতে আহত দুজনকে দেখলাম। দুই যুবকেরই (ওয়াকার আহমদ ও ওয়াহিদ) মুখ, হাত এবং শরীর  ছররা গুলিতে ভর্তি। চোখগুলো টকটকে লাল, দেখতেও পাচ্ছে না। ওয়াকারকে একটি ক্যাথিটার পরানো ছিল, সেখান থেকে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের থেকে বেরোন রক্তে লাল প্রস্রাব দেখা যাচ্ছিল। তাদের পরিবারের সদস্যরা, শোকে, ক্রোধে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন যে এরা দুজন পাথর ছুঁড়ছিল না। এরা তো শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিল ।
•    ৬ই অগাস্ট, 'রাইজিং কাশ্মীর' সংবাদপত্রের গ্রাফিক ডিজাইনার সমীর আহমদ, (বয়স কুড়ির কোঠার শুরুতে) শ্রীনগরের মন্দারবাগ এলাকায় তার বাড়ির কাছে সিআরপিএফের একজনের সঙ্গে একজন বুড়ো মানুষকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। সেই দিনই কিছু পরে, সমীর যখন তার বাড়ির দরজা খুলছেন, সিআরপিএফ কোন প্ররোচনা ছাড়াই তার দিকে লক্ষ্য করে ছররা গুলি চালায়। তার হাতে, মুখে চোখের কাছে ১৭২টা গুলি বিঁধেছিল, তবে তার চোখ ঠিক আছে।  এটা স্পষ্ট যে ছররা-বন্দুকগুলো ইচ্ছা করেই মুখ এবং চোখের দিকে লক্ষ্য করা ছোঁড়া হয়েছিল এবং নিরস্ত্র, শান্তিপুর্ণ, নিজের-বাড়ির-দরজায়-দাঁড়ানো নাগরিকরাও  লক্ষ্যবস্তু হতে পারেন।
•    কমপক্ষে ৬০০ জন রাজনৈতিক নেতা এবং সুশীল সমাজের কর্মীরা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য কোন আইন প্রয়োগ করা হয়েছে বা কোথায় তাদের রাখা হয়েছে সে সম্পর্কে কোনও পরিষ্কার তথ্য নেই।
•    একটা বড় সংখ্যক রাজনৈতিক নেতাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে – ঠিক কতজন তা বার করা অসম্ভব। আমরা সিপিআইএম এর বিধায়ক মোহাম্মদ ইউসুফ তারিগামীর সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছিলাম, তবে শ্রীনগরে তাঁর বাড়িতে, যেখানে তিনি গৃহবন্দী হয়ে আছেন, সেখানে আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয় নি।
•    আমরা যেসব গ্রামে গিয়েছি, তার প্রতিটি গ্রামে, এমনকি শ্রীনগরের কেন্দ্রস্থলেও,  খুব অল্প বয়স্ক স্কুলছাত্রদের আর কিশোরদের পুলিশ বা সেনা / আধাসামরিক বাহিনী ইচ্ছেমত তুলে নিয়ে যাচ্ছে আর অবৈধভাবে আটকে রাখছে। পাম্পোরে আমাদের ১১ বছরের একটি ছেলের সঙ্গে দেখা হয়, যাকে ৫ই আগস্ট থেকে ১১ই আগস্ট পুলিস স্টেশনে আটকে রাখা হয়। তাকে মারা হয়, সে জানায় যে কাছের গ্রামগুলো থেকে তার থেকেও ছোট  ছেলেদের আটকে রেখেছে।
•    শয়ে শয়ে ছেলে এবং কিশোরকে মাঝরাতে অভিযান চালিয়ে বিছানা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই অভিযানের একমাত্র উদ্দেশ্য হল ভয় সৃষ্টি করা। এইসব অভিযানের সময় সশস্ত্র বাহিনী  শ্লীলতাহানির ঘটনা মহিলা ও মেয়েরা আমাদের জানিয়েছেন। বাবা-মারা আমাদের সাথে দেখা করতে, তাদের ছেলেদের "গ্রেপ্তার" (অপহরণ) নিয়ে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। তাদের আশঙ্কা হয়ত জন সুরক্ষা আইনের ধারায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। তাছাড়াও আরেকটা ভয় হল ছেলেরা "হারিয়ে যেতে পারে" - অর্থাৎ কাস্টডিতে মেরে ফেলে গণকবরগুলিতে ফেলে দেওয়া হবে, কাশ্মীরে এ নিয়ে মারাত্মক ইতিহাস আছে। একজন গ্রেপ্তার-হওয়া ছেলের এক প্রতিবেশী যেমন বলেছিলেন, "এইসব গ্রেপ্তারের কোনও রেকর্ড নেই। এগুলো অবৈধ আটক। সুতরাং যদি ছেলেটি 'নিখোঁজ' হয় - - অর্থাৎ কারাগারে হত্যা করা হয় - পুলিশ / সেনাবাহিনী শুধু বলতেই পারে যে তারা প্রথমতঃ তাকে কখনওই নিজেদের জিম্মায় নেয় নি। "
•    তবে বিক্ষোভগুলো থামার সম্ভাবনা কম। সোপোরের এক যুবক বলেছিলেন: "জিতনা জুলম করেঙ্গে, উতনা হাম উভরেঙ্গে" ( যত বেশি অত্যাচার হবে, আমরা ততই জ্বলে উঠব)। অনেক জায়গাতেই আমরা এক মন্তব্য  শুনেছি: "নেতারা গ্রেপ্তার হলে কিছু আসে-যায় না। আমাদের নেতাদের দরকার নেই। যতক্ষণ একজন কাশ্মীরি বাচ্চাও বেঁচে থাকবে, ততক্ষণ আমরা লড়ব।“

সংবাদমাধ্যমের মুখবন্ধ

•    একজন সাংবাদিক আমাদের বলেছিলেন: "সবকিছু সত্ত্বেও সংবাদপত্রগুলি ছাপা হচ্ছে। ইন্টারনেট না থাকায় আমরা এজেন্সিগুলির থেকে কোনও ফিড পাচ্ছি না। সংসদে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে যা ঘটছে, এনডিটিভি থেকে আমরা শুধু সেটুকুই দেখাচ্ছি! এটা অঘোষিত সেন্সরশিপ। সরকার যদি পুলিশকে ইন্টারনেট এবং ফোন সংযোগ দেয়,  কিন্তু মিডিয়া হাউসগুলিকে সেটা না দেয়, তাহলে এর মানে কি দাঁড়ায়? কয়েকজন আমাদের অফিসে এসেছিল, সেনাবাহিনীর ও সিআরপিএফের হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনারা কার্ফু-আক্রান্ত রাস্তার ছবি ছাপছেন কেন?"
•    কাশ্মীরি টিভি চ্যানেলগুলি সম্পূর্ণ বন্ধ এবং কাজ করতে অক্ষম।
•    কাশ্মীরি সংবাদপত্রগুলিতে বিক্ষোভের সামান্য উল্লেখ থাকলেই (যেমন সৌরার ঘটনার কথা) কর্তৃপক্ষের অগ্নিচক্ষু দেখতে হচ্ছে।
•    বিদেশী সংবাদপত্রের সাংবাদিকরা আমাদের জানান যে কর্তৃপক্ষ তাদের চলাচলে বিধিনিষেধ চাপাচ্ছে। এছাড়াও, ইন্টারনেট না থাকার দরুন, তারা তাদের নিজেদের প্রধান অফিসগুলির সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
•    আমরা ১৩ই আগস্ট শ্রীনগরের প্রেস এনক্লেভে গিয়ে দেখি যে সংবাদপত্র অফিসগুলি বন্ধ - কয়েকজন ছুটকো সাংবাদিক এবং কিছু সিআইডির লোক ছাড়া জায়গাটা শুনশান। একজন সাংবাদিক আমাদের বলেন যে কাগজপত্র অন্তত ১৭ই আগস্ট পর্যন্ত কাগজ ছাপা যাবে না, কারণ তাদের নিউজপ্রিন্ট ফুরিয়ে গেছে আর সেটা  দিল্লি থেকে আসে।
•    উপরে যেমন বলা হয়েছে, একটি সংবাদপত্রের কর্মী, একজন গ্রাফিক ডিজাইনার সিআরপিএফ-এর এক  সম্পূর্ণ বিনা প্ররোচনার আক্রমণে ছররাবন্দুকের গুলিতে আহত হন।

কাশ্মীরের কি উন্নয়নের অভাব আছে?

৯ই আগস্ট ২০১৯ এ টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি উত্তর-সম্পাদকীয়তে প্রাক্তন পররাষ্ট্রসচিব এবং রাষ্ট্রদূত নিরুপমা রাও লিখেছেন: "কয়েক মাস আগে,  এক তরুণ কাশ্মীরি এই লেখককে বলেছিলেন যে তাঁর জন্মস্থানটি 'প্রস্তর যুগে' পড়ে ছিল; অর্থনৈতিক বিকাশের প্রেক্ষিতে কাশ্মীর বাকী ভারতের থেকে দু'শো বছর পিছিয়ে।"

আমরা এই "পশ্চাদপদ", "প্রস্তর যুগ" কাশ্মীরটিকে যে কোনও জায়গায় খুঁজে পেতে অনেক চেষ্টা করেছি।

•    আমরা খুবই অবাক হয়েছি যে প্রতিটি কাশ্মীরি গ্রামে আমরা অল্পবয়সী ছেলে-মেয়ে পেয়েছি যারা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, তারা কাশ্মীরি, হিন্দি এবং ইংরেজীতে অনর্গল কথা বলে; আর কাশ্মীর বিরোধের বিষয়ে সাংবিধানিক এবং আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে সঠিক তথ্য আর পান্ডিত্যপুর্ণ যুক্তি দিয়ে তর্ক করতে পারে।   এই দলের চারজন সদস্যই উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের গ্রামগুলির সাথে পরিচিত। এই উচ্চস্তরের শিক্ষা বিহার, ইউপি, এমপি বা ঝাড়খন্ডের যে কোনও গ্রামেই অত্যন্ত বিরল।
গ্রামীণ কাশ্মীরের বাড়িগুলি সমস্ত পাকা বাড়ী। বিহার, ইউপি, ঝাড়খন্ডের গ্রামে যেমন ঝুপড়ি দেখা দেখা যায়, তেমনটা কাশ্মীরে দেখতে পাইনি।
•    কাশ্মীরে অবশ্যই গরীব মানুষ আছেন। কিন্তু উত্তর ভারতের অনেক রাজ্যে যেমন রিক্ততা, অনাহার এবং চরম দারিদ্র্য দেখা যায়, গ্রামীণ কাশ্মীরে তা অনুপস্থিত।
•    আমরা অনেক জায়গায় উত্তর ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা অভিবাসী শ্রমিকদের সাথে দেখা করেছি। তাঁরা আমাদের বলেছেন যে তাঁরা এখানে নিজেদের নিরাপদ মনে করেন আর মহারাষ্ট্র বা গুজরাটের মত বিভিন্ন রাজ্যে যেধরণের জাতিগত হিংস্রতার মুখোমুখি হতে হয়, তার ভয়ও নেই বলে মনে করেন। প্রবাসী দিনমজুররা  বলছিলেন "কাশ্মীর আমাদের দুবাই। আমরা এখানে দিনে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা উপায় করি, অন্য রাজ্যে যা রোজগার হয় তার থেকে তিন বা চার গুণ বেশি। “
•    কাশ্মীর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বা মব-লিঞ্চিং থেকে স্বস্তিদায়করকমের মুক্ত। আমরা কাশ্মীরী পন্ডিতদের সঙ্গে দেখা করেছি, তাঁরা বলেছেন যে তারা কাশ্মীরে নিরাপদ আছেন আর কাশ্মীরিরা সবসময় তাদের উত্সবগুলো একসাথে উদযাপন করে। একজন কাশ্মীরী পন্ডিত যুবক বলেন , "আমরা ঈদ, হোলি, দিওয়ালি এক সাথে পালন করি। এটাই আমাদের কাশ্মীরিয়াত । এটা একটু আলাদা, স্পেশাল। “
•    "পিছিয়ে-পড়া" কাশ্মীরী মেয়েদের কথাই সম্ভবত সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা। কাশ্মীরী মেয়েরা খুব উঁচু স্তরের পড়াশোনার সুযোগ পায়। তারা স্পষ্টবাদী এবং দৃঢ়চেতা। অবশ্যই তাদেরও সমাজের পিতৃতন্ত্র এবং লিঙ্গ বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়, প্রতিহতও করতে হয়। তবে কিনা যে বিজেপির হরিয়ানার সিএম এবং মুজাফফরনগরের বিধায়ক "কাশ্মীরি বৌ" নিয়ে আসার কথা বলছেন, যেন কাশ্মীরি মহিলারা লুট নেওয়ার সম্পত্তি, সেই বিজেপির কাশ্মীরে নারীবাদ প্রচারের কোনও অধিকার আছে কি? কাশ্মীরী মেয়ে এবং মহিলারা আমাদের বলেছেন, "আমরা আমাদের নিজদের লড়াই লড়তে পারি। আমরা চাই না যে আমাদের অত্যাচারীরা  দাবি করুক যে তারা আমাদের স্বাধীন করেছে!"

বিজেপির মুখপাত্রের "সতর্কতা"

আমরা কাশ্মীর বিষয়ে বিজেপির মুখপাত্র অশ্বানী কুমার ছ্রুঙ্গুর সাথে কাশ্মীরের একটি সংবাদপত্র রাইজিং কাশ্মীরের অফিসে দেখা করি। প্রথমে বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে কথা হচ্ছিল। তিনি জানান যে জনগণকে  ৩৭০ ধারা বাতিল করার পক্ষে টেনে আনার জন্য তিনি জম্মু থেকে কাশ্মীরে এসেছিলেন। তাঁর মূল যুক্তি ছিল যে যেহেতু বিজেপি জম্মু-কাশ্মীরে  ৪৬% ভোটের ভাগ পেয়েছিল এবং সংসদে অভূতপূর্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল, তাই  ৩৭০ ধারা বাতিল করার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা তাদের শুধু অধিকার নয়, একটা কর্তব্য। "৪৬% ভোটের ভাগ - এটা একটা লাইসেন্স", তিনি বলেন।
এই ৪৬% ভোটের ভাগ পাওয়া আর তিনটি লোকসভা আসনে (জম্মু, উধমপুর এবং লাদাখ) জেতা শুধু সম্ভব হয়েছিল কারণ অন্য তিনটি লোকসভা আসনে (শ্রীনগর, অনন্তনাগ এবং বারামুল্লা) ভোট দিতে আসা মানুষের সংখ্যা ছিল দেশের মধ্যে সবথেকে কম ছিল, এটা তিনি মেনে নিতে অস্বীকার করেন।
কাশ্মীরের যে লোকেরা এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ভোট দেয়নি, এইরকম একটি অপ্রিয় সিদ্ধান্ত, বন্দুকের নলের ডগায় দাঁড় করিয়ে তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া কি সরকারের উচিত হচ্ছে? ছ্রুঙ্গু জানান, "নীতিশকুমার বিহারে যখন মদের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপান, তিনি তো মদ্যপায়ীদের কাছে অনুমতি বা সম্মতি চাননি। এখানেও একই ব্যাপার।" কাশ্মীরের মানুষের প্রতি তাঁর অবজ্ঞা এই উপমা থেকেই স্পষ্ট।
আলোচনার শেষের দিকে, আমাদের বলা ঘটনা আর যুক্তির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি ক্রমশঃ খিটখিটে হয়ে ওঠেন। তিনি উঠে দাঁড়ান আর  জঁ দ্রঁজের দিকে আঙুল নাড়িয়ে বলেন, “আপনার মতো দেশ-বিরোধীদের আমরা এখানে কাজ করতে দেব না। আমি আপনাকে সতর্ক করে দিচ্ছি।"

উপসংহার

পুরো কাশ্মীর, এই মুহুর্তে, সামরিক নিয়ন্ত্রণের অধীনে একটি কারাগার। মোদি সরকার জম্মু-কাশ্মীরকে নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও অবৈধ। মোদী সরকার কাশ্মীরিদের বন্দী করে রাখা এবং সম্ভাব্য বিক্ষোভ দমন করার জন্য যে পন্থা নিয়েছে তাও অনৈতিক, অসাংবিধানিক এবং অবৈধ।
•    আমরা আর্টিকল ৩৭০ এবং ৩৫এ’র অবিলম্বে পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছি।
•    আমরা দৃঢ়ভাবে বলছি যে জম্মু-কাশ্মীরের স্ট্যাটাস বা ভবিষ্যত নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত সেখানকার জনগণের সম্মতি ছাড়া নেওয়া উচিত নয়।
•    আমরা দাবি জানাচ্ছি যে অবিলম্বে ল্যান্ডলাইন টেলিফোন, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট সহ যোগাযোগ ব্যবস্থাগুলি পুনরুদ্ধার করা হোক।
•    আমরা দাবি জানাচ্ছি যে অবিলম্বে জম্মু-কাশ্মীরে যে বাকস্বাধীনতা, মত প্রকাশের এবং প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ করা চলছে তার অবসান হোক।   জম্মু-কাশ্মীরের লোকেরা উদ্বিগ্ন - তাদের অবশ্যই মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া, জনসমাবেশ এবং অন্যান্য শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ দেওয়া হোক।
•    আমরা দাবি জানাচ্ছি যে  জম্মু-কাশ্মীরে সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করার যে ব্যবস্থা চলছে, তা অবিলম্বে শেষ হোক।

১৩ই আগস্ট ২০১৯

(ইংরেজী রিপোর্টটি অনুবাদ করেছেন স্বাতী রায়)

Sunday 4 August 2019

আল্লামা মুশাহিদ বায়ামপুরী

আল্লামা মুশাহিদ বায়ামপুরী ১৩২৭ হিজরি মোতাবেক ১৯০৭ সালে মহররম মাসে শুক্রবার দিনে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বায়ামপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বায়মপুর বর্তমান কানাইঘাট পৌরসভার অন্তর্গত। তাঁর বাবার নাম কারী আলিম বিন কারী দানিশ মিয়া। আর মাতার নাম হাফেজা সুফিয়া বেগম। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।

ছোটবেলায় তাঁর বাবা মারা যান। মায়ের তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হন। মায়ের কাছেই তাঁর পড়াশোনার হাতেখড়ি। মাত্র সাত বছর বয়সে মায়ের কাছে কোরআন পড়া শিখেন। সঙ্গে বাংলা ও উর্দুও পড়েন।

শিক্ষাজীবন

আল্লামা বায়ামপুরী সাত বছর বয়সে গ্রামের পাঠশালায় ভর্তি হন। কানাইঘাট ইসলামিয়া মাদরাসা, যা বর্তমানে দারুল উলুম কানাইঘাট সেখান থেকে মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি প্রাথমিক পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনাও এখানেই সম্পন্ন করেন। এরপর কিছুদিন লালারচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে তিনি স্কুলের চাকরি ছেড়ে চলে যান ভারতে।

সেখানে রামপুর আলিয়া মাদরাসায় পাঁচ বছর এবং মিরাঠ আলিয়া মাদরাসায় দুই বছর পড়াশোনা করেন। এই সাত বছরে তিনি হাদিস, তাফসির, ফেকাহ, আকাইদ, দর্শন প্রভৃতি শাস্ত্রে বিশেষ পাণ্ডিত্ব গ্রহণ করেন। ছাত্র থাকাকালেই তিনি দরসে নেজামির গুরুত্বপূর্ণ কিতাব কাফিয়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ইযাহুল মাতালিবসহ দুটি কিতাব রচনা করেন।

তবে কিতাব দুটি প্রকাশিত হয় উস্তাদের নামে। ভারতে পড়াশোনা শেষ করে আবার দেশে ফিরে আসেন। সেই লালারচর রহমানিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। কিন্তু তিনি এতে তৃপ্তি পাচ্ছিলেন না। উচ্চশিক্ষার স্পৃহা তাঁকে অদৃশ্য থেকে টানছিল। চাকরি ছেড়ে আবারও ভারতে। ১৯৩৬ সালে ভর্তি হন বিশ্ববিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম দেওবন্দে।

সেখানে প্রায় দেড় বছর অত্যন্ত সুনাম ও সুখ্যাতির সঙ্গে হাদিসের ওপর সর্বোচ্চ ডিগ্রি গ্রহণ করেন। মেধা তালিকায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি রেকর্ডসংখ্যক নম্বর অর্জন করেন।

কয়েকটি বিষয়ে মোট নম্বরের চেয়েও বেশি নম্বর লাভের গৌরব তিনি অর্জন করেন। তাঁর বোখারি শরিফের পরীক্ষার খতা দেওবন্দ মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে রেখেছিল দীর্ঘকাল।

কর্মজীবন

আল্লামা বায়ামপুরী রহ. দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পর ভারতেই শিক্ষকতায় আত্মনিয়োগ করেন। বেশ কয়েক বছর ভারতের বদরপুর ও রামপুর আলিয়া মাদরাসায় ইলমে হাদিসের ওপর পাঠদান করেন। সিলেটবাসীর অনুরোধে পরে ফিরে আসেন দেশে। যোগ দেন সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসায় শাইখুল হাদিস হিসেবে।

সিলেটের গাছবাড়ী জামিউল উলুম কামিলা মাদরাসায়ও তিনি শাইখুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর শিক্ষকতাকালে গাছবাড়ী মাদরাসাকে ‘দ্বিতীয় দারুল উলূম দেওবন্দ’ হিসেবে অভিহিত করা হতো। তবে সেই মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ১৯৫৩ সালে চলে আসেন নিজ জন্মস্থান কানাইঘাটে। যোগ দেন কানাইঘাট ইসলামিয়া মাদরাসায়।

এই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘দারুল উলূম কানাইঘাট’। সেখানে তিনিই ১৯৫৪ সালে চালু করেন দাওরায়ে হাদিসের ক্লাস। একাধারে সেই মাদরাসার পরিচালক ও শাইখুল হাদিস ছিলেন আল্লামা বায়ামপুরী রহ.। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত এখানেই তিনি হাদিসের সুমহান খেদমত করে গেছেন।

তাঁকে ঘিরে সিলেটের এক প্রান্তের অঁজপাড়া গাঁয়ের এই মাদরাসায় ছুটে আসতেন দেশের নানা প্রান্তের শিক্ষার্থীরা। ১৯৫৭ সালে সর্বভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান নেতা দারুল উলূম দেওবন্দের শায়খুল হাদিস সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. ইন্তেকাল করেন।

তাঁর ইন্তেকালের পর দেওবন্দে শায়খুল হাদিস পদ শূন্য হয়। তখন সেই পদ পূরণে যে তিনজন ক্ষণজন্মা আলেমের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল আল্লামা বায়ামপুরী ছিলেন তাদের অন্যতম। কিন্তু তিনি নিজ জন্মভূমিতে হাদিসের দরস ছেড়ে তখন যেতে রাজি হননি।

পূর্ব সিলেটের সব মাদরাসাকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে ১৯৫৩ সালে তিনি গঠন করেন ‘পূর্ব সিলেট আযাদ দীনি আরবী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড’। তিনি আজীবন এই বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ওই বোর্ডের অধীনে প্রায় ১৭৫টি মাদরাসা পরিচালিত হচ্ছে।

সামাজিক সংস্কার আন্দোলন

তখন মুসলিম সমাজে শিক্ষাদীক্ষা তেমন ছিল না। শিরক, বেদআত আর কুসংস্কারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিল মুসলমানরা। মুসলিম সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন আল্লামা বায়ামপুরী রহ.। তিনি সিলেটের আনাচে-কানাচে মানুষের মধ্যে ওয়াজ-নসিহত করে বেড়াতেন।

সামাজিক নানা অসঙ্গতি, কুসংস্কার ও অনাচারের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। ধর্মীয় ও বিজ্ঞানভিত্তিক তাঁর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা সর্বমহলে জনপ্রিয় ছিল। রমজানে সিলেটের বন্দরবাজার জামে মসজিদে তারাবির পর থেকে সাহরি পর্যন্ত তাফসির ও ওয়াজ নসিহত করতেন।

শত শত মুসল্লি রাত জেগে তাঁর উপভোগ্য ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শুনতেন। অনেকে দূরদূরান্ত থেকে এসে হোটেলে অবস্থান নিতেন তাঁর বয়ান শোনার জন্য। শিক্ষার্থীরা খাতা-কলম নিয়ে তাঁর বয়ান শুনতে বসতো। তাঁর সেই মজলিস হতো সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত এক পাঠশালার মতো।

রাজনৈতিক জীবন

রাজনীতিতেও বিশাল ভূমিকা ছিল আল্লামা বায়ামপুরী রহ.-এর। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন তাঁর উস্তাদ ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান নেতা মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর অনুসারী।

শিক্ষকের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তিনি জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি তিনবার জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

সর্বপ্রথম ১৯৬২ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট নির্বাচনে চেয়ার প্রতীকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে এমএনএ (মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গোলাপফুল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।

১৯৭০ সালে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দলীয় প্রতীক খেজুর গাছ নিয়ে নির্বাচন করেন। প্রথমবার বিজয়ী হলেও শেষ দুইবার সামান্য ভোটে পরাজিত হন। এমএনএ থাকাকালে আল্লামা বায়ামপুরী রহ. দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে পার্লামেন্টে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন।

রাষ্ট্রের নামকরণে পাকিস্তান প্রজাতন্ত্রের পরিবর্তে ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান’ লেখায় তাঁর ভূমিকা ছিল। কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করা যাবে না এই আইন তিনি পাকিস্তানের সংসদে উত্থাপন করেছিলেন। তার দাবির মুখে একটি অর্ডিন্যান্স থেকে ইসলামবিরোধী ধারা বাতিল করতে বাধ্য হয় আইয়ূব সরকার।

জাতীয় শিক্ষাপদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন এবং ইসলামি ভাবধারা প্রতিষ্ঠার জোর দাবি তিনি পার্লামেন্টে তুলে ধরেন। পূর্ব পাকিস্তানে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি তিনিই প্রথম করেন। তিনি কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক শোষণমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে গেছেন আজীবন।

রচনাবলী

এই ভূখণ্ডের আলেমদের মধ্যে কলমের চর্চা এতোটা জোরালো না থাকলেও ব্যতিক্রম ছিলেন আল্লামা মুশাহিদ আহমদ বায়ামপুরী রহ.। দ্বীনের বিভিন্ন অঙ্গনে অবদানের পাশাপাশি লেখালেখির লাইনেও তাঁর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

তিনি জাতিকে কয়েকটি অমূল্যবান বই উপহার দিয়ে গেছেন। তাঁর রচিত ‘ফাতহুল কারীম ফি সিয়াসাতিন্নাবিয়ীল আমীন’ রাজনীতি বিষয়ে একটি অমর গ্রন্থ।

১৯৪৮ সালে ভারতের রামপুর থেকে কিতাবটি মুদ্রিত হয়। পরবর্তী সময়ে ‘ইসলামের রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক উত্তরাধিকার’ নামে বইটির অনুবাদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত হয়। তাঁর রচিত ‘আল-ফুরক্বান বাইনাল হক্বে ওয়াল বাতিল ফি ইলমিত তাসাউফে ওয়াল ইহসান’ গ্রন্থটি তাসাউফ সংক্রান্ত।

তাঁর আরও কয়েকটি গ্রন্থ হচ্ছে: আল ফুরক্বান বাইনা আউলিয়াইর রহমান ও আউলিয়াইশ শাইতান, সত্যের আলো (দুই খণ্ডে), ইসলামে ভোট ও ভোটের অধিকার, সেমাউল কোরআন, ইজহারে হক্ব, আল লাতাইফুর রাব্বানিয়্যাহ ফি সূরাতি তাফসীরিল ফাতিহা। এছাড়া কিছু বই অপ্রকাশিত থেকে যায়।

কৃতিত্ব ও সম্মান

আল্লামা বায়ামপুরী রহ. তিনবার হজ পালন করেন। ১৯৪৭ সালে হজে তিনি মক্কার ইমামের খুতবায় ভুল ধরেন। হাদিসশাস্ত্রে তাঁর পাণ্ডিত্য আরবের আলেমদের তাক লাগিয়ে দেয়।

তৎকালীন সৌদি আরবের বাদশাহ তা দের রাষ্ট্রীয় সংবিধান এনে আল্লামা বায়ামপুরীর সামনে পেশ করে বলেন, আমাদের সংবিধানে কোথাও কোনো ভুল আছে কি না দেখুন।

পরে তিনি জানালেন অন্তত ১৪টি বিষয় সংশোধনযোগ্য। তাঁর জ্ঞানের গভীরতা দেখে সৌদি আলেমরা হতবাক। আল্লামা বায়ামপুরী রহ. তাঁর উস্তাদ হোসাইন আহমদ মাদানীর সঙ্গে অখণ্ড ভারতের পক্ষে ছিলেন। সে সময় অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে যাদের বাড়ি পাকিস্তানে ছিল তাদের ওপর নানা নির্যাতন হতো।

এজন্য এক পর্যায়ে বায়ামপুরী রহ. ভারতের আসামে চলে যান। এই খবর জানার পর সৌদি বাদশা পাকিস্তানি এক মন্ত্রীকে ডেকে বলেন এমন একজন বিজ্ঞ আলেমকে তাড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তান আবার মুসলমানদের রাষ্ট্র হয় কেমনে? এতে মন্ত্রী লজ্জিত হলেন এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আল্লামা বায়ামপুরীকে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) নিয়ে এলেন।

কানাইঘাট উপজেলা সদরে তথা আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরীরর বাড়ির পাশে সুরমা নদীর উপর যে ব্রিজ নির্মিত হয়, এই ব্রীজ মুশাহিদ বায়মপুরীরর নামে নামকরণ করা হয়েছে। এ ব্রীজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রীজ। সিলেট শহরের বাইরে কেবল কানাইঘাটে সুরমা নদীর উপর এমন ব্রীজ আছে।

ইলমের সমুদ্র

আল্লামা ছিলেন ইলমের এক সমুদ্র। তিনি নিজেই বলেছেন, দিল্লির সর্ববৃহৎ পাঠাগারের এমন অনেক কিতাব তিনি পাঠ করেছেন, যেগুলো আগে কেউ পড়েনি। তিনি সেগুলোর পাতা কেটে কেটে সর্বপ্রথম পাঠক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। লাইব্রেরিতে গিয়ে এমন কিতাবের খোঁজ তিনি করেছেন যা আগে কেউ করেনি।

কথিত আছে, তিনি যখন দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করে দেশে ফিরেন তখন তাঁর শিক্ষক সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. বলেছিলেন, আব ইলম সিলেট কি তরফ জা রহা হায় (এখন জ্ঞানবত্তা সিলেটের দিকে যাচ্ছে)। সমকালীন আলেমরা তাঁকে একবাক্যে পণ্ডিত আলেম হিসেবে মেনে নিয়েছেন।

আধ্যাত্মিক জীবন

আল্লামা বায়ামপুরী রহ. প্রথমে হাকীমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ.-এর সঙ্গে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। তবে নিজ উস্তাদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর কাছ থেকেও আধ্যাত্মিক লাইনে উপকৃত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি মাওলানা ইয়াকুব বদরপুরী রহ.-এর কাছে বায়াত হন এবং তাঁর খেলাফত লাভ করেন।

আধ্যাত্মিকতার জগতে বায়মপুরী রহ. ছিলেন খুব উচুঁমাপের সাধক। তবে তিনি কখনও এটা প্রকাশ হতে দিতেন না। সবসময় নিজেকে আড়াল করে রাাখতেন। বহু জ্ঞানী-গুণীজন তাঁর কাছে ইলমে তাসাউফের দীক্ষা নেন।

তাঁর খেলাফতপ্রাপ্ত কয়েকজন হলেন কানাইঘাট দারুল উলুম মাদরাসার সাবেক মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস মাওলানা শহরউল্লাাহ রহ., সিলেটের গোয়াইনঘাট লাফনাউট মাদরাসার সাবেক মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস মাওলানা আব্দুল করীম ছত্রপুরী রহ., গাছবাড়ী মুজাহিরুল উলুম মাদরাসার সাবেক মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস মাওলানা হাবীবুর রহমান রহ., জকিগঞ্জ শিতালঙ্গশাহ মাদরসাার সাবেক মুহতামিম মাওলানা তৈয়বুর রহমান রহ., দারুল উলুম কানাইঘাটের সাবেক মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস।

পারিবারিক জীবন

আল্লামা বায়াামপুরী রহ. ছিলেন ১১ সন্তানের জনক। ছেলেরা হলেন: ১. মাওলানা ফারুক আহমদ ২. মৌলভী ফরিদ আহমদ ৩. মাওলানা জামিল আহমদ ৪. হাফেজ হাবিব আহমদ ৫. রশিদ আহমদ। তাঁরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। মেয়েরা হলেন: ৬. রায়হানা বেগম ২. সফিনা বেগম ৩. আয়েশা বেগম ৪. সালমা বেগম ৫. জয়নব বেগম ৬. আমিনা বেগম।

ইন্তেকাল

আল্লামা মুশাহিদ বায়ামপুরী ১৩৯০ হিজরী ১০ জিলহজ মোতাবেক ১৯৭১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ঈদুল আজহার রাতে ইন্তেকাল করেন। ঈদুল আজহার দিন আসরের পর তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজায় ইমামতি করেন তাঁরই ছোটভাই আল্লামা মুজাম্মিল রহ.৷ তাঁর হাতেগড়া প্রিয় প্রতিষ্ঠান কানাইঘাট দারুল উলুম মাদরাসার সামনেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

কবর থেকে সুগন্ধি

আল্লামা বায়ামপুরী রহ.কে দাফনের পর কয়েক দিন পর পর্যন্ত কবর থেকে সুগন্ধি বের হয়। মাঝে বিরতি দিয়ে তিন মাস পর আবার এই সুগন্ধি অনুভব করেন এলাকাবাসী।

ইন্তেকালের ৪০ বছর পর ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে আবারও তাঁর কবর থেকে সুগন্ধি বের হতে থাকে। এই সুগন্ধি লাভের জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করেন।

তবে তাঁর কবরস্তান ঘিরে যেন শরিয়ত পরিপন্থি কোনো কর্মকা- না হয় সে ব্যাপারে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করে। তিনি আল্লাহর কত প্রিয় বান্দা ছিলেন এই কারামাত দ্বারাই কিছুটা অনুমান করা যায়।

-তথ্যসুত্র উইকিপিডিয়া

Thursday 1 August 2019

Ruler in Indian History

ভারতবর্ষে ইতিহাসের পাতায় শাসক দলের তালিকা :
 গৌরি সাম্রাজ্য থেকে নিয়ে নরেন্দ্র মুদি পর্যন্ত ।

1, মুহাম্মদ গৌরি।      1193
2,  কুতুব উদ্দিন আইব্যাক    1206
3, আরাম শাহ             1210
4,আল্তামিস।               1211
5, রুকনউদ্দিন ফিরুজ
   শাহ।                        1236
6, রাজিয়া সুলতান।      1236
7, মুইজ উদ্দিন বাহরাম
    শাহ ।                       1240
8, আলাদিন মাসুদ শাহ 1242
9, নাসির উদ্দিন মাহমুদ1246
10,  গিয়াস উদ্দিন বলবন
                                   1266
11,  রঙ খসরু             1286
12, মজদন কে কুবাদ   1287
13, সামস উদ্দিন কে
       মরস।                 1290

    গৌরি সাম্রাজ্য ( শাসনকাল অন্ততপক্ষে   97  শাল )
    খিলজি সাম্রাজ্য :
1, জালাল উদ্দিন ফিরুজ।          
     খিলজি ।              1290
2, ইলাহ দিন খিলজি  1292
3, শিহাব উদ্দিন উমর
   শাহ।                      1316
4,কুতুব উদ্দিন মুবারক
   শাহ।                     1316
5, নাসির উদ্দিন খসরু
    শাহ।                    1320
   খিলজি সাম্রাজ্যের সমাপ্তি "
( শাসনকাল অন্ততোপক্ষে 30
শাল )
    তুগলক সাম্রাজ্য ;-
1, গিয়াস উদ্দিন তুগলক 1st
                                   1320
2, মুহাম্মদ বিন তুগলক 2nd
                                   1325
3, ফিরুজ শাহ তুগলক 1351
4, গিয়াস উদ্দিন 2nd    1388
5,আবু বক্কর শাহ          1389
6, মুহাম্মদ তুগলক 3rd 1389
7, আলেক  জান্ডার
    শাহ 1st                   1394
8,নাসির উদ্দিন শাহ 2   1394
9,নুসরত শাহ               1395
10,    নাসির   উদ্দিন
      মুহাম্মদ শাহ 2nd  1399
11,দৌলত শাহ             1413

তুগলক সাম্রাজ্য সমাপ্ত:- (শাসনকাল অন্ততপক্ষে 37 শাল )

শয়িদ সাম্রাজ্য ;-
1,খিজির খান।             1414
2, মুয়ীজ উদ্দিন মুবারক
  শাহ 2nd।                  1421
3, মুহাম্মদ শাহ 4rt।      1434
4,ইলাহদ্বিন আলম শাহ 1445
   শয়িদ সাম্রাজ্য সমাপ্ত : ( শাসনকাল প্রায়  37 শাল )

লোধী সাম্রাজ্য :-
 1, বাহলুল লোধী।        1451
2, আলেকজান্দার
    লোধী 2nd               1489
3,ইব্রাহিম  লোধি।         1517
   
লোধী সাম্রাজ্য সমাপ্ত ;-
 ( শাসনকাল অন্ততপক্ষে 75 শাল )
মুগল সাম্রাজ্য ;-
1, জহির উদ্দিন বাবর।  1526
2, হুমায়ুন।                   1530
   মুগল সাম্রাজ্যের আংসিক পতন ":

 শুরি সাম্রাজ্য :-
1, সের শাহ শৌরি।        1539
2, ইসলাম শাহ শৌরি।   1545
3,মাহমুদ শাহ শৌরি।     1552
4,ইব্রাহিম শৌরি।          1553
5,পারবেজ শাহ শৌরি  1554
6মুবারক খান শৌরি    1554
7, আলেকজান্ডার শৌরি
                                  1555 শৌরি সাম্রাজ্য সমাপ্ত "; ( শাসনকাল প্রায়  16 শাল )

 মুগল সাম্রাজ্যের পুনঃ আগমন :-
1, হুমায়ুন পুণ: সিংহাসন    
     দখল                      1555
2,জালাল উদ্দিন আকবর
                                   1556
3, জাহাঙ্গির সালিম।     1605
4, শাহজাহান।              1628
5, আওরঙ্গজেব।          1659
6,শাহ আলম 1st         1707
7, বাহাদুর শাহ।            1712
8,ফারুক শের।             1713
9, রিফাথ রাজিদ।        1719
10,রিফাথ দৌলা।         1719
11,নি কাশিয়ার।          1719
12 মাহমুদ শাহ।           1748
13, আহমদ শাহ।          1748
14, আলমগীর।            1754
15, শাহ আলম।           1759
16, আকবর শাহ          1806
17,বাহাদুর শাহ জাফর 1837
 
    মুগল সাম্রাজ্য সমাপ্ত ; ( শাসনকাল প্রায় 315 শাল )

      বৃটিশরাজ  ;------
1, লার্ড কিং।               1858    
2,লার্ড জেমস ব্রুসিলিং1862
3, লার্ড জেন্স লোরেন্স 1864
4, লার্ড রিচার্ড মিউ।     1869
5, লার্ড নুরথবক।        1872
6, লার্ড এডুর্ড লাতিন।  1876
7, লার্ড জিব্রেজ রিপেন1880
8,লার্ড ডেফরীন।         1884
9, লার্ড হান্নি লেসেদুন। 1888
10, লার্ড বিক্টর ব্রুশিলিং
                                  1894
11, লার্ড জিব্রেজ কৃজণ
                                  1899
12,লার্ড গ্যালভার্ড মিন্টু1905
13, লার্ড চার্লস হার্ডজ  1910
14,লার্ড ফ্রিডার্কস লামস
      ফোর্ড।                  1916
15,লার্ড রেডস আইজেক
      রিডাগ।                  1921
16,লার্ড এডর্ড এরন।    1926
17,লার্ড   ফার্ম্যান  ভী                
      লিবডান                1931
18,লার্ড   এলেকজাদ            
         লানলাতঘু          1936
19,লার্ড আরকিবালড
     ভ্যাবেল।                 1943
20,লার্ড মাউন্ট বেটন।  1947


     বৃটিশ  সাম্রাজ্যবাদী সমাপ্ত
     
   ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকা :------
 1, পন্ডিত জওহরলাল      
         নেহেরু   ।          1947
2, গুলজারিলাল নন্দা 1964
3, লালবাহাদুর শাস্ত্রী   1964
4,গুলজারিলাল নন্দা  1966
5, ইন্দিরা গান্দী।         1966
6, মুরার্জি দেশাই।       1977
7, চরণ  শিং।              1979
8, ইন্দিরা গান্দী।          1980
9, রাজিব গান্দী।          1984
10,বিশ্বনাথ প্রথাপসা।   1989
11, চন্দ্রশেখর।             1990
12,  পি   ভি  নরসিমা
        রাও।                   1991
13,       অটলবিহারী
       বাজপায়ী।            1992
14,এইচ   ডি দেবগৌড়া 1996
15,  L K গুজরাল।       1997
16, অটলবিহারী বাজপেয়ী
                                   1998
17, মনমোহন সিং         2004
 18 নরেন্দ্র মোদি।
                                   2019

     ###############
        764   বত্সর মুসলমান বাদশা গণ ভারতবর্ষে শাসন চালায় , তদোপরিও আজ মুসলমানেরা এই ভারতবর্ষে নির্যাতিত ।
      দয়া করে এইপোস্টটি সকল পড়ুয়াদের নিকট প্রেরণ করেন ।        *PLZ*
   
  অনুবাদক : -
মুফতি হুছাইন আহমদ ক্বাছিমী  
  দয়াপুর উধারবন্দ কাছাড় ।