Wednesday 27 February 2019

A short Biodata of Allama Tayeebur Rahman Barbhuiya (2nd Amir-e-Shariathof North East India)-- @@. Maulana Tayeebur Rahman Barbhuiya-was born on 26th June, 1931 at Rangauti, Hailakandi. After completing his primary education, he was admitted in Hailakandi Senior Madrassa. He secured 1st position in First Divisions in Intermediate & F.M. Examinations and 1st position in 1st Class in M.M. Examination under the State Madrassa Education Board, Assam in 1957. He alsostood 1st Class 1st in M.A. (Arabic) Examination under Gauhati University in 1971and obtained Gold Medal. He also achieved Bisharad Degree in Hindi in 1955.During his student life, he was engaged in Indias’ freedom struggle as a member of Congress-JamiatUlama Hind organization. Maulana Tayeebur Rahman Barbhuiya actively took part in the electioneering campaign in favour of Abdul Matlib Mazumder, a nationalist candidate in the election of1946 to the Legislative Assembly of Assam. As a nationalist minded student leader, he vehemently opposed the scheme of partition and worked a lot tospearhead the campaign of the nationalist group in Surma Valley.Maulana Tayeebur Rahman Barbhuiya started his brilliant and distinguished career as an Assistant Teacher(Hindi) in 1957 at Hailakandi Senior Madrassa. Moulana Tayeebur Rahman Barbhuiya had retired as Superintendent of the said Madrassa.He is a great author and learned scholar in English, Bengali, Hindi, Arabic, Urdu subjects. He has writtena good number of scholarly works, which bears the testimony of his depth of knowledge in different themes. His works include the following. 1. Tharikhul Ulumil Arabiyah. (History of Arabic Literature ) 2 . Nukbatul Adab. ( Arabic ) 3. Ath-ThahkiqatulMufidah. (Arabic ) 4. Qurbani O Aqiqah. 5. Sadkah–e-Fitr. 6. Ahkam-e-Hajj. 7. Idd O Betarbarta . 8. Nijam–e-Jama’th. 9. Namajer Kunji. 10. Aetakaf 11. Khajegan-e-Chisth. 12. Jiyarat –e–Madinah. 13. Tarikather Adi Katha 14. Hajj O Jiarath 15. Muslim Bektigatho Ayen Banam Sama Dedani Bidhi.Maulana Tayeebur Rahman Barbhuiya was honoured with “Efficiency Award, by the Central Walkf Council, Ministry of Law, the Govt. of India. He was also awarded the most prestigious “ President Award, or National Award by the President of India for his ideal teachership. As a recognition of his brilliant academic and social status he was also awarded various other awards like Maulana Abdul Jalil Choudhury Memorial Award, Sarada Charan Dey Memorial Award, Mukta Kanta Award, M. Q. H. Award.His scholarly works were highly appreciated in the academic field and the State Madrassa Education Board, Assam is following two of his scholarly books in their course curriculam. It was due to his profoundknowledge in Islamic Laws and Shariah, Maulana Tayeebur Rahman Barbhuiya is unanimously called “Allama", i.e. the great learned. However, Allama Tayeebur Rahman Barbhuiya was a favourate student and disciple of Hazrat Abdul Jalil Choudhury (R). It was after the death of Maulana Abdul Jalil Choudhury (R), the 1st Amir-e- Shariath, on 19th December, 1989, the Arbab-e-Hall and Aqd on the same day unanimously selected Allama Tayeebur Rahman Barbhuiya as the 2nd Amir-e-Shariathof North East India.Allama Tayeebur Rahman Barbhuiya is an outstanding and popular figure in North East India, who is honoured and respected both by academic, intellectual and political personalities of both Muslims and non- Muslims. He was a founder Working Committee Member of All India Milli Council. He was selected as patron of the organizations for two terms. He was also Working Committee Member of All India Muslim Majlis–e-Mushawarath for a long time He has been working as Working Committee Member of All India Muslim Personal Law Board from 1991.

Monday 25 February 2019

About Milad& Qiyam

মিলাদ-কিয়াম প্রমাণে ভারতবর্ষের কয়েকজন আলেমের বক্তব্যের ভুল প্রয়োগ ও তার স্বরূপ
মাওলানা ইমদাদুল হক

একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, মিলাদ-কিয়াম নবীজী, সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীনের কোনো আমল নয়; এটি অনেক পরের সৃষ্টি। একথা খোদ যারা মিলাদ-কিয়াম করে তারাও মানে। মিলাদ-কিয়ামের যারা প্রবক্তা তারা এর সমর্থনে কিছু আলেম-উলামার বক্তব্য পেশ করে থাকেন। ভারতবর্ষের বড় বড় কিছু আলেম-উলামার বক্তব্যও তারা তুলে ধরে থাকেন। বাস্তবে এসব দিয়ে দলীল পেশ করা সঠিক নয়। কেননা কোথাও মূল বক্তব্য না পড়ে শুধু কারো তরজমার উপর নির্ভর করা হয়েছে, কোথাও বক্তব্যের অর্থ সঠিক হয়নি, কোথাও আংশিক বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে।

নিম্নে ভারতবর্ষের কয়েকজনের বক্তব্য নিয়ে পর্যালোচনা পেশ করা হল এবং ভুল চিহ্নিত করে দেওয়া হল।



এক : শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী রাহ. (মৃত্যু : ১০৫২ হি.)

শায়েখ আব্দুল হক দেহলবী রাহ. ‘আখবারুল আখইয়ার’ নামে ছুফিয়ায়ে কেরামের একটি জীবনীগ্রন্থ লেখেন। এ জীবনীর শেষে একটি দীর্ঘ মুনাজাত লিখে কিতাবটি সমাপ্ত করেন। এ কিতাবটি ফার্সি ভাষায়। এর উর্দূ অনুবাদ হয়েছে। উক্ত অনুবাদের ৬২৪ নং পৃষ্ঠায় আছে যে, তিনি মুনাজাতে বলেন-

اے الله ميرا كوئی عمل ایسا نہیں ہے جسےآپکے دربار میں پیش کرنے کے لائق سمجھوں ،  میرے تمام اعمال میں فساد نیت موجود رہتی ہے  البتہ مجھ حقیر فقیر کا ایک عمل صرف تیری ذات پاک کی عنایت کی وجہ سے بہت شاندار ہے  اور وہ یہ ہے کہ مجلس میلادکے موقع پر میںکھڑے ہو کر سلام پڑھتا ہوں اور نہایت ہی عاجزی و انکساری محبت وخلوص کے  ساتھ تیرے حبیب پاک صلی اللہ علیہ و سلم پر درود و سلام بھیجتا رہا ہوں۔

اے اللہ وہ کونسا مقام ہے جہاں میلاد مبارک سے  زیادہ تیری خیر وبرکت کا نزول ہوتا ہے؟ اسلئے اے ارحم الراحمین مجھے پکا یقین ہے کہ میرا  یہ عمل کبھی بیکار نہ جائیگا بلکہ یقینا تیری بارگاہ میں قبول ہوگا اور جو کوئی درود وسلام پڑھے اور اسکے ذریعہ دعاکرے وہ کبھی مسترد نہیں ہوسكتى  ۔

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমার এমন কোনো আমল নেই, যা আপনার দরবারে পেশ করার উপযুক্ত মনে করি, আমার সব আমলেই মন্দ নিয়ত থাকে। তবে আমার মত নগণ্যের একটি আমল আপনার তাওফীকে অনেক মহান, তা হল আমি মীলাদের মজলিসে দাঁড়িয়ে সালাম পড়ি এবং খুব কাতর হয়ে অত্যন্ত মহব্বত ও ইখলাসের সাথে আপনার হাবীবের উপর দরূদ-সালাম পাঠ করি। হে আল্লাহ! কোন্ জায়গা আছে, যেখানে মিলাদ মোবারক থেকে বেশি আপনার খায়র ও বরকত নাযিল হয়? এজন্য আমার নিশ্চিত বিশ্বাস আমার এ আমল কখনো নিষ্ফল হবে না, বরং আপনার দরবারে অবশ্যই কবুল হবে, আর যে কেউ দরূদ-সালাম পড়ে এবং তার ওসীলায় দুআ করে তার দুআ কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’

এ হল উর্দূ অন্বুাদ ও তার বাংলা অনুবাদ। উর্দূ অনুবাদে স্পষ্টভাবে এসেছে যে, তিনি মিলাদ মাহফিলে কিয়াম করতেন এবং দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করতেন। আর মিলাদের মজলিশ থেকে উত্তম কোন জায়গা তার নিকট নেই, এ আমলটিই তার  শ্রেষ্ঠ আমল।

এ অনুবাদ হল মাওলানা সুবহান মাহমুদ ও মাওলানা মোহাম্মদ ফাযিল সাহেবের, এ অনুবাদটি ভারত, পাকিস্তান থেকে ছাপা হয়।

কিন্তু আমরা যখন মূল কিতাব দেখি সেখানে মিলাদ শব্দের অস্তিত্বও খুঁজে পাই না আর তা পাওয়ার কথাও না। কেননা তার বক্তব্যটি আরেক ক্ষেত্রের কিন্তু অনুবাদক নিয়ে গেছেন মিলাদের ক্ষেত্রে। শায়েখের বক্তব্য হল, শায়েখ যখন মদীনায় নবীজীর রওজায় যান এবং সেখানে দাঁড়িয়ে অন্যদের ন্যায় দরূদ-সালাম পাঠ করেন, সেটিই তার নিকট শ্রেষ্ঠ আমল। আর নবীজীর রওযা থেকে উত্তম কোন্ জায়গা আছে, যেখানে খায়র-বরকত অধিক নাযিল হয়। এবার আমরা শায়েখের হুবহু বক্তব্য পাঠ করি-

خداونداہیچ عملے ندارم کہ شائستہ درگاہ تو بود ،ہمہ بعلت نقصان معلول وبمفسدات نیت مشمول جز یک عمل کہ ہر چند نسبت بایں جانب حقیر باشد ، ولیکن بذات پاک تو کہ بس عظیم و خطیر است  اگر چہ اعمال بندگان ہمہ نقصان وتقصیر موصوف است اما زبان ادب نیست تقصیر بآں عمل راضی نیست ، آں عمل کدام است ، قیام بندگان در حضرت حبیب تو باتحفۂ صلاۃ وسلام برآں حضرت صلی اللہ علیہ و آلہ وسلم بنعت تضرع وانکسار و عجز وافتقار، خداوندا! کدام موقف ومحل  باشد کہ افاضۂ خیر ونزول رحمت دروے زیادہ ازینجا باشد، خداوندا! یقین صادق است کہ ایں عمل مقبول درگاہ تو خواہد بود ورد وبطلان را بداں راہ  نہ۔ حاشا حاشا ومن جاء ہذا الباب لا یخشی الرد۔

‘হে আল্লাহ! আমার এমন কোনো আমল নেই, যা আপনার দরবারের উপযুক্ত। সব আমলই অসম্পূর্ণতা ও বদ নিয়তের দোষে দূষিত; শুধু একটি আমল ব্যতীত, যা আমি অধমের দিকে লক্ষ্য করলে একেবারে ক্ষুদ্র কিন্তু আপনার হিসেবে অনেক বড়। যদিও বান্দার সব আমলই দোষ-ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতায় ভরপুর। একদিকে আমার নিকট আদবপূর্ণ ভাষা নেই অপরদিকে এ মহিমান্বিত আমল ত্রুটিযুক্ত হওয়াও বাঞ্ছনীয় নয়। অর্থাৎ আপনার হাবীবের দরবারে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত অনুনয়-বিনয় এবং আদব ও মিনতির সাথে সালাত ও সালামের তোহফা পেশ করা।

কিন্তু হে আল্লাহ! কোন্ জায়গা আছে, যেখানে এ জায়গার তুলনায় অধিক রহমত ও কল্যাণ নাযিল হয়?

হে আল্লাহ আমার সত্যিই বিশ্বাস যে, এ আমল আপনার দরবারে কবুল হবে এবং তা ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।’

আমাদের নিকট আখবারুল আখইয়ারের প্রাচীন দুইটি ছাপা আছে, একটি হল মাওলানা আহমদ আলী সাহারানপুরীর মাতবাআয়ে আহমদী থেকে ১২১৭ হিজরী সনের ছাপা, তাতে উক্ত বক্তব্যটি ৩৬৫-৩৬৬ পৃষ্ঠায়, আরেকটি হল মাতবাআয়ে মুহাম্মদ দিল্লী থেকে ছাপা, তা এখানে স্পষ্ট এসেছে যে (در حضرت حبیب تو) আপনার হাবীবের দরবারে উপস্থিতিতে অর্থাৎ ‘মদীনায় নবীজীর রওযায়’। আর এমন কোন্ জায়গা আছে, যেখানে এ জায়গা থেকে অধিক খায়র ও রহমত নাযিল হয়? কেননা মদীনাতে যেহেতু স্বয়ং নবীজী বিদ্যমান তাই সেখানে খায়র ও বরকত বেশি নাযিল হয়। আর প্রচলিত মিলাদ মাহফিলে (তাদের কথা অনুযায়ী) যদি খায়র ও বরকত নাযিল হয়ও, তাহলেও তো তার থেকে অধিক রহমত নাযিল হয় এমন জায়গা আছে, আর তা হল যে স্বয়ং নবীজী শুয়ে আছেন।

শায়েখ দেহলবী রাহ.-এর পুরো বক্তব্যে একবারও মিলাদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। কিন্তু উর্দূ তরজমায় দুই-দুই বার শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেখান থেকে বাংলা অনুবাদেও তা লুফেফ নেওয়া হয়েছে। তো যাই হোক শায়েখ দেহলবী রাহ.-এর বক্তব্য হল নবীজীর রওযায় দাঁড়িয়ে সালাত-সালাম পাঠ করা সম্পর্কে, মিলাদ মাহফিলের কিয়ামে সালাত-সালাম পাঠ সম্পর্কে নয়।

আখবারুল আখইয়ারের আরেকটি তরজমা আছে, যা আনওয়ারে ছুফিয়া নামে লাহোর থেকে ছেপেছে, তাতে উক্ত বক্তব্যের তরজমা সঠিকভাবে এসেছে-

میرا کوئی عمل ایسا نہیں جو تیری درگاہ کے لائق ہو۔ سب علت نقصان وفساد نیت سے پر ہیں ، بجز ایک  عمل کے کہ ہر چند میری نسبت سے حقیر ہے لیکن تری ذات پاک کی قسم کہ بہت عظیم و خطیر ہے ،اگر چہ بندوں کےسب اعمال نقصان وتقصیر کے ساتھ موصوف ہیں مگر خاکم بدھن اس عمل کے ساتھ تقصیر پسندیدہ نہیں ، وہ کیا عمل ہے ، یعنی ترے حبیب (صلی اللہ علیہ وسلم) کے حضور میں بندوں کا قیام آنحضرت صلی اللہ علیہ پر بنعت تضرع وانکسار وعجزوفروتنی تحفۂ صلاۃ وسلام کے ساتھ ، خداوندا! وہ کونسا موقف ومحل ہوگا جہاں افاضۂ خیرونزول رحمت اس سےزیادہ ہوتا ہے؟ خداوندا! مجھ کویقین صادق ہے کہ یہ عمل تیری درگاہ میں مقبول ہوگا اور ہرگز باطل نہ ہوگا۔ حاشاحاشا ومن جاء ھذا الباب لایخشی الرد۔

আনওয়ারে সুফিয়া পৃ : ৫৭৬



দুই : ফুয়ূযুল হারামাইনে শাহ ওলিউল্লাহ রাহ.-এর বক্তব্য

১১৪৩-৪৪ হিজরীতে শাহ ওয়ালীউল্লাহ রাহ. হজ্বে গমন করেন। এ হজ্বে তিনি অনেক ইলহাম, দিলের নূরানী হালাত ইত্যাদি অর্জন করেন। এসব কিছু নিয়ে তিনি একটি গ্রন্থ রচনা করেন। নাম দেন ফুয়ূযুল হারামাইন।

এ কিতাবের ৮০নং পৃষ্ঠার বরাতে শাহ ওলিউল্লাহ রাহ.-এর একটি বক্তব্য পেশ করা হয়, তাতে নাকি তিনি লিখেছেন, তিনি মক্কা শরীফে এক মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত হয়েছেন এবং তাতে অনেক নূর ও বরকত প্রত্যক্ষ করেছেন।

আসলে এক হল ‘মীলাদুননবী’ (যা জনসাধারণের মাঝে প্রসিদ্ধ) আরেকটি হল ‘মাওলিদুন্নাবী’, যার অর্থ নবীজীর জন্মের স্থান অর্থাৎ নবীজী যে ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন। মক্কাতে এখনো সে স্থান সংরক্ষিত আছে, যেখানে নবীজী জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মাওলিদুন্নাবী নামে তা প্রসিদ্ধ। হাজ্বী সাহেবান অন্যান্য স্মৃতিময় স্থানসমূহের ন্যায় এ ঘরও দেখতে যান। দেখতে গিয়ে স্বীয় আবেগে সেখানে কেউ কেউ দরূদ পড়েন, কেউ তিলাওয়াত, যিকির-আযকার করেন। শাহ ওলিউল্লাহ রাহ.-ও তার সেই সফরে নবীজীর জন্মস্থানে যান, সেখানে মানুষ দরূদ পাঠ করছিল এবং তাঁর জন্ম বৃত্তান্ত নিয়েও আলোচনা করছিল। শাহ ওলিউল্লাহ রাহ. এসব অবস্থা প্রত্যক্ষ করলেন এবং খুব আলোকময়তা অনুভব করলেন।

وكنت قبل ذلك بمكة المعظمة في مولد النبي صلى الله عليه وسلم في يوم ولادته والناس يصلون على النبي صلى الله عليه وسلم ويذكرون إرهاصاته التي ظهرت في ولادته ومشاهدته قبل بعثته، فرأيت أنوارا سطعت دفعة واحدة، لا أقول إني أدركتها ببصر الجسد، ولا أقول أدركتها ببصر الروح فقط، والله أعلم كيف كان الأمر بين هذا وذلك، فتأملت تلك الأنوار فوجدتها من قبل الملائكة الموكلين بأمثال هذه المشاهد وبأمثال هذه المجالس، ورأيت يخالط أنوار الملائكة أنوار الرحمة.

অর্থ : আমি একবার নবীজীর জন্মের তারিখে মক্কা মুয়াযযামায় ‘মাওলিদুন্নাবী’-নবীজীর জন্মস্থানে ছিলাম। দেখলাম উপস্থিত মানুষেরা দরূদ পাঠ করছে। নবীজীর জন্মের সময় ও তার পূর্বে যেসব অলৌকিক ঘটনাবলী ঘটেছিল সেসবের আলোচনা করছে, আমি সেখানে অনেক নূর প্রত্যক্ষ করলাম, যেগুলো একইসাথে ঝলমল করে উঠেছিল। আমি বলি না যে, তা আমি চর্মচক্ষে দেখেছি এবং এও বলি না যে, আমি তা আত্মার দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেছি, আল্লাহই ভালো জানেন, যেমনই হোক আমি নূরগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলাম তখন দেখলাম এ নূরগুলো সেসব ফেরেশতাদের পক্ষ হতে, যেসব ফেরেশতাদের এসব স্থান ও এসব মজলিশের জন্য নিযুক্ত করা হয়। আর দেখেছি যে, ফেরেশতাদের নূরের সাথে রহমতের নূরও মিশ্রিত হচ্ছে। -ফুয়ূযুল হারামাইন, পৃ. ৮০ (মাতবায়ে সাঈদী, করাচী থেকে প্রকাশিত)

তো শাহ ছাহেব গিয়েছেন ‘মাওলিদুন্নাবী’ তথা নবীজীর জন্মস্থানে, প্রচলিত ‘মীলাদুন্নবীতে’ নয়।

ফকীহুননাফ্স মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রাহ.-এর নিকট ফুয়ূযুল হারামাইন-এর বক্তব্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন-

فیوض الحرمین میں حاضری مولد النبی میں کہ مکان ولادت آپ علیہ السلام کا ہے  لکھا ہے وہاں ہر روز زيارت کے واسطے لوگ جاتے ہیں  يوم ولادت ميں بھی لوگ جمع تھے اور صلاۃ و ذکر کرتے تھے،  نہ وہاں تداعی سے اہتمام طلب کے  تھے نہ کوئی مجلس تھی بلکہ وہاں لوگ خود بخود جمع ہوکر کوئی درود پڑھتا تھا  کوئی ذکر معجزات کرتا تھا  نہ کوئی شیرہنی نہ چراغ نہ کچھ اورنفس ذکر کو کوئی منع نہیں کرتا واللہ تعالی اعلم ۔

ফুয়ূযুল হরামাইনে নবীজীর জন্মস্থানে উপস্থিতির কথা উল্লেখিত হয়েছে, (মীলাদ মাহফিল নয়)। সেখানে দেখার জন্য প্রতিদিন মানুষ যায়, নবীজীর  জন্মের তারিখেও লোকেরা একত্রিত হয়েছে এবং যিকির ও দরূদ পাঠ করেছে। এ একত্রিত হওয়ার পেছনে কোনো আয়োজন ছিল না, কেউ কাউকে ডাকেওনি; বরং প্রত্যেকে  ব্যক্তিগতভাবে এসেছে এভাবে একত্রিত হয়ে গেছে। এরপর কেউ দরূদ পাঠ করেছে কেউবা জন্মকালীন মুজিযা নিয়ে আলোচনা করেছে, সেখানে না কোন শিরনি ছিল, না আলোকসজ্জা না অন্য কোনো কিছু। তো শুধু জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা কে নিষেধ করে?

ফাতাওয়া রশিদিয়া, পৃ. ২৩৬

তো একটি হল ‘মীলাদুন্নবী’ আরেকটি হল ‘মাওলিদুন্নাবী’। শাহ ছাহেব রাহ.-এর বক্তব্যে এসেছে দ্বিতীয়টি আর এটাকে মনে করা হচ্ছে ‘মীলাদুন্নবী’।



তিন : মুজাদ্দিদে আলফে সানী (মৃত্যু: ১০৩৪ হি.)

এ প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদে আলফে সানীর মাকতুবাত থেকেও একটি বক্তব্য পেশ করা হয়। তাঁর নিকট তাঁর এক মুরিদ পত্র প্রেরণ করে। তাতে মিলাদ সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করা হয়, জবাবে মুজাদ্দিদ রাহ. লিখেন-

نفس قرآں خواندن بصوت حسن و درقصائد نعت ومنقبت خواندن چہ مضائقہ است ممنوع تحریف وتغییر حروف قرآن است والتزام رعایت مقامات نغمہ وتردید صوت بآں طریق الحان بالتصفیق مناسب آں کہ درشعر نیزغیر مباح است اگر برنہجے خوانند کہ تحریفے در کلمات قرآنی واقع نشود و در قصائد خواندن شرائط مذکورہ متحقق نگردد و آں راہم بغرض صحیح تجویز نمایند چہ مانع است؟

সুমিষ্ট স্বরে কুরআন পড়া এবং নবীজীর প্রশংসায় কবিতা পাঠে দোষের কী আছে? নিষিদ্ধ তো হল কুরআনের বিকৃতি, অক্ষর পরিবর্তন ইত্যাদি। আর সুরের পথ ধরে গানের ন্যায় ছন্দময় সুর তোলা ও সে অনুযায়ী তালি বাজানো, যা কবিতার মধ্যেও নাজায়েয। আর যদি কুরআনের অক্ষর ও শব্দ বিকৃত না হয় এবংনবীজীর প্রসংসায় কবিতা পাঠে উল্লেখিত বিষয় না থাকে। সাথে সাথে নিয়তও সহীহ হয় তাহলে তাতে নিষিদ্ধতার কী আছে?। -মাকতুবাত, দফতর ৩, মাকতুব নং ৭২

মুজাদ্দিদ রাহ.-এর উদ্দেশ্য হল, মিলাদে যদি সুন্দরভাবে কুরআন পাঠ হয় আর তাতে অন্যান্য শরয়ী সমস্যাবলী না থাকে তাহলে তা পাঠে অসুবিধা নেই।

যারা মুজাদ্দিদ রাহ.-এর বক্তব্যটি উদ্ধৃত করে থাকে তারা শুধু এতটুকুই উদ্ধৃত করে থাকে। অর্থাৎ তাঁর পূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরে না। মুজাদ্দিদ রাহ. এটুকু বলার পর আরো যা বলেন, সেটিই হল বিবেচ্য বিষয়। তিনি এরপর বলেন,

مخدوما بخاطر فقیر میرسد ایں باب مطلق نکنند، بو الہوسان ممنوع نہ میکردند اگر اندک تجویز کردن بتجربہ بسیار خواہد شد قلیلہ یفضي الی کثیرہ قول مشھور ست۔

অধমের মন বলে, এ পথ যেন না খোলা হয়, তা না হলে পেট-পূজারীদের পথ বন্ধ হবে না, অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, যদি সামান্যও ছাড় দেওয়া হয় তাহলে অনেক বেশিতে পৌঁছে যাবে, ‘এর সামান্যও অনেক বেশির দিকে নিয়ে যাবে’। -প্রাগুক্ত

অর্থাৎ সুর তরঙ্গ, কুরআন বিকৃতি, ইত্যাদি থেকে মুক্ত হলেও এ ধরনের মিলাদের পথ খোলা যাবে না। কেননা এটুকু যদি খোলা হয় তাহলে  সেটি অনেক ফাসাদের দিকে নিয়ে যাবে।

তাহলে সারকথা দাঁড়াল, যেসব মিলাদকে শরীয়াবিরোধী বিষয় থেকে মুক্ত বলা হয় এবং বিদআতে হাসানা আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় সেগুলোর ব্যাপারেও তিনি নিজ মুরীদদেরকে নিরুৎসাহিত করেছেন।

তারিখ : ২৩-১২-১৪৩৯ হি.

Wednesday 20 February 2019

অসুস্থ জমিয়ত নেতা

*হজরত মাওলানা সৈয়ীদ আর্শাদ মদনি সাহেবে দাঃ বাঃ এর স্বাস্থ্যের আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছ ।

*বদরপুরঃ* সর্বভারতীয় জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সভাপতি তথা দারুল উলুম দেওবন্দের অধ্যাপক, বিশ্ব বিখ্যাত আলিম, হাজার হাজার আলিমের শিক্ষাগুরু, বিশ্ব মুসলিম লিগ এর কর্ণধার, মুসলিম পার্সোনেল লো বোর্ডের দীর্ঘদিনের সদস্য,  রাবেতা আলমে ইসলামীয়া (মক্কা আল মকররমা) এর আজীবন সদস্য, শেরে হিন্দ, ক্বায়িদে মিল্লাত, বিশ্বের লক্ষ কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বীর শ্বেখুল ইসলাম হজরত মাওলানা সৈয়ীদ হুছাইন আহমদ মদনি রাহঃ এর সু যোগ্য সন্তান আওলাদে রাছুল  হজরত *মাওলানা সাইয়ীদ আরশাদ মাদানী* হাফিজাহুল্লাহ গত মঙ্গলবারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন, তৎক্ষনাৎ রাজদানী দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। খবর শুনে হাসপাতালে উপস্থিত হন সর্বভারতীয় জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সাধারণ সম্পাদক *হজরত মাওলানা সৈয়ীদ মাহমুদ মদনি*, অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কোমেটির সদস্য *নাদিম জাবেদ*, বি এস পি এর প্রাক্তন সংসদ *মোঃ সালিম আনসারি*, সহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গরা। হাসপাতালে উপস্থিত হওয়ার মূহুর্তে সাক্ষাৎ করেন ইন কেলাব এর চিফ অব ন্যাশন *ডঃ মুমতাজ আলম রেজবি*, সিয়াসি তাকদির এর এডিটর *মোঃ মুস্তাকিম*, হিন্দ নিউজ এর এডিটর *মাজিদ নেজামি* ও অন্যান্যরা। সর্বভারতীয় জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের অন্যতম সদস্য *মাওলানা ফজলুর রহমান* সাহেব হজরতের স্বাস্থ্যের আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছে বলে জানান।  তাছাড়া করিমগঞ্জ জিলা জমিয়তের প্রচার সম্পাদক *আবুল হাছান মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ* ফোন যোগাযোগে খবর নেন এবং তিনিও জানান যে হজরতের স্বাস্থ্যের আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছে। হজরতের অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে বিশ্বের হিন্দু, মুসলিম, জৈন,  খ্রিস্টান লক্ষ কোটি অনুগামী । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হজরতের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে চলছে মুনাজাত। আমাদের নয়নমণি ক্বায়িদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য সভার কাছে দোয়ার বিনম্র অনুরোধ জানান করিমগঞ্জ জিলা জমিয়তের কর্তৃপক্ষ। মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের কাছে দোয়া করি তিনি যেন আমাদের ক্বায়িদকে দ্রুত আরোগ্য দান করে দীর্ঘ জীবন দান করুন।

Sunday 17 February 2019

*স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী তথা মরোনত্তর ভারত রত্ন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এর ১৩০ তম জন্মদিন উপলক্ষে ১০ তম রাষ্ট্রীয় শিক্ষা দিবস ২০১৮।*

*ইন্ডিয়া উইনস ফ্রীডম থেকে সংগৃহীত কিছু তথ্য।*

*সারাংশ ও বঙ্গানুবাদ শেখ আমিনুল ইসলাম।*

*নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো...*
 ‌‌‌‌‌
ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম” বইটি মওলানা আবুল কালাম আজাদের আত্নজীবনীমূলক রচনা হলেও, ভারতীয় ইতিহাসের পাতায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে মৌলানা আজাদের অন্যতম প্রধাণ ভূমিকা ছিল। এই গ্রন্থে তিনি ভারত-ভাগের পটভূমিসহ ১৯৩৫-৪৮ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাবলীর অত্যন্ত নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনা দিয়েছেন।অনেক ইতিহাসবিদের কাছেই বইটি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি নির্ভরযোগ্য দলিল হিসেবে অনন্য স্থান করে নিয়েছে।



মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ছিলেন একাধারে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, ভারতীয় উপমহাদেশের আধুনিক সংবাদপত্র ধারার রূপকার, কবি, দার্শনিক ও শিক্ষা-সংস্কারক। ১৯২৩ সালে মাত্র ৩৫ বছরে তিনি নিখিল ভারত কংগ্রেসের কনিষ্ঠতম সভাপতি নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্রান্তিকালীন সময়ে ১৯৩৯-৪৬ সাল পর্যন্ত নিখিল ভারত কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে ভারতকে নিয়ে গেছেন স্বাধীনতার বন্দরে। চিরন্তন অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী মওলানা আজাদ আমৃত্যু হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কতৃক প্রস্তাবিত দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ভারত-ভাগকে তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারেন নি। তিনি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন ভারত-ভাগ ঠেকানোর। কারন, তিনি বিশ্বাস করতেন এর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানরাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাঁরা উপমহাদেশের বিভিন্ন অংশে বিভাজিত হয়ে আরো সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে, সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র দুইটিতে বজায় থাকবে চিরকালীন অশান্তি, উভয় দেশেই বার্ষিক বাজেটের উন্নয়ন বরাদ্দ কমে গিয়ে সামরিক বরাদ্দ বাড়বে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ জনগণ। ভারত-ভাগের এত বছর পরে, তাঁর আশঙ্কাই যেন আজ এই উপমহাদেশের জন্য চির বাস্তবতা।



মাওলানা আজাদ ১৮৮৮ সালে মক্কায় এক সমভ্রান্ত রক্ষনশীল মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলানা খয়রুদ্দিন সেকালে আরব, পারস্য ও ভারতবর্ষে ধর্মগুরু হিসেবে ব্যপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তিঁনি ১৮৯০ সালে বসবাসের জন্য কলকাতায় ফিরে আসেন। রক্ষণশীল পরিবারের সদস্য হওয়ায় মওলানা আজাদকে বাড়িতে বসেই সাবেকি পদ্ধিতে শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। মাত্র পনের বছর বয়সেই তিনি আরবী ও ফার্সী ভাষায় বিশেষ দখল অর্জন করেন। তিঁনি আরবীতে দর্শন, জ্যামিতি, গনিত ও বীজগনিতের উপর শিক্ষালাভ করে সাবেকি পদ্ধতিতে শিক্ষা-অর্জনের সমস্ত ধাপ সমাপ্ত করেন এবং শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে উঠে মওলানা আজাদের মন মুক্তির আশায় ছটফট করতে থাকে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে স্যার সৈয়দ আহমদ খানের লেখা তাঁর নজরে আসে। তিনি আধুনিক দর্শন, বিজ্ঞান ও সাহিত্য সম্পর্কে উৎসাহী হয়ে উঠেন। এজন্য তিনি ততকালীন প্রাচ্যশিক্ষা পাঠক্রমের প্রধাণ পরীক্ষক মৌলভী মোহাম্মদ ইউসুফ জাফরীর কাছে ইংরেজী শিখেন। পারিবারিক কক্ষপথ ছেড়ে সত্যের সন্ধানে নিজস্ব পথে বেড়িয়ে পড়েন মৌলানা আজাদ। তিনি এ সম্পর্কে বলেছেন, “প্রথমে যে জিনিসটা আমাকে ফাঁপরে ফেলল, সেটা হল মুসলমানদের নানা গোষ্ঠীর মধ্যকার প্রভেদ নিয়ে শোরগোল। তারা দাবি করে যে, তাদের সকলেরই উৎসস্থল এক; তাহলে কেন তারা একে অন্যের পরিপন্থী, সেটা আমার ঢুকতো না। যেভাবে চোখ বুঝে কোনরকমে ভাবনা চিন্তা করে এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়কে ভ্রান্ত আর অবিশ্বাসী বলে দাগিয়ে দিত, তার সঙ্গে আমি নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছিলাম না। গোঁড়া ধর্মবিশ্বাসীদের এই ভেদবুদ্ধি ক্রমশ ধর্ম জিনিসটার ওপরই আমার মনে সন্দেহ ধরাতে থাকে। ধর্ম যদি বিশ্বজনীন প্রকাশ হয়, তাহলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এত কেন চুলোচুলি আর ঠোকাঠুকি? প্রত্যেকটি ধর্মই বা কেন নিজেকে সত্যের একমাত্র আধার বলে দাবি করবে এবং কেনই বা অন্য সব ধর্মকে নস্যাৎ করবে?...... এই সময় নাগাদ আমি ‘আজাদ’ বা ‘মুক্ত’ এই ছদ্মনাম গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিই। এই নামের সাহায্যে আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম যে আমি আর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বিশ্বাসের বন্ধনে বাধা নই।” (পৃ. ১১-১২)।



১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন বৃটিশরাজের শাসন সুবিধার্থে বঙ্গভঙ্গ করলে ভারত বিশেষ করে বাংলায় চরম ক্ষোভ দেখা দেয়। তারা ব্রিটিশরাজ থেকে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য স্বদেশী আন্দোলনে উদ্ধুধ হয়ে বিপ্লবী দল গঠন করেন। এ সময় মৌলানা আজাদ বিপ্লবী শ্রী অরবিন্দ ঘোষ ও শ্রী শ্যামসুন্দর চক্রবর্তীর সংস্পর্শে আসেন এবং বিপ্লবীদের দলে নাম লেখান। বিপ্লবীদলগুলোকে মৌলানা আজাদ একক প্রচেষ্টায় বাংলা থেকে সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে দেন। দেশব্যাপী জনমত গড়ে তোলার উদ্দ্যেশে তিনি ১৯১২ সালের জুনে ‘আল-হিলাল’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। “উর্দু সাংবাদিকতার ইতিহাসে ‘আল-হিলাল’ প্রকাশ এক যুগান্তকারী ঘটনা। অল্প সময়ের মধ্যে এই কাগজ অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা লাভ করল। লোকে এর প্রতি আকৃষ্ট হল শুধু এর উন্নত ধরনের ছাপা আর সৌকর্যের জন্যই নয়, বরং তার চেয়েও বেশি এর প্রচারিত বলিষ্ঠ জাতীয়তাবাদের অভিনব সুরের জন্য” (পৃ. ১৫)।



১৯২০ সালে মওলানা আজাদ তুরস্কের খেলাফত ও ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে ভারতীয় মুসলমানদের উদ্বেগকে সামনে রেখে তাদেরকে সংগঠিত করেন, গড়ে তোলেন খেলাফত আন্দোলন। ততদিনে ভারতীয় রাজনীতিতে মহাত্না গান্ধীর আবির্ভাব হলেও, মৌলানা আজাদ জেলে অন্তরীন থাকায় তাঁর সাথে সাক্ষাত হয় নি। গান্ধীজী, লোকমান্য তিলকসহ কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতারা খেলাফত প্রশ্নে ভারতীয় মুসলমানদের মনোভাব সমর্থন করেন। ১৯২০ সালের সেপ্টেম্বরে কলকাতায় কংগ্রেসের অধিবেশনে গান্ধীজী স্বরাজলাভ এবং খেলাফত সমস্যার সন্তোষজনক মীমাংসার জন্য অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহন করেন। এই সময় গান্ধীজী এবং মওলানা আজাদ সারা ভারতবর্ষে ব্যপকভাবে সফর করে অসহযোগ আন্দোলনের জন্য জনসমর্থন আদায় করেন। ১৯২০ সালের ডিসেম্বরে কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত নাগপুরে এবং এই অধিবেশনেই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ চূড়ান্তভাবে কংগ্রেস ত্যাগ করেন।



১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে, ভারতীয় রাজনীতি নতুন দিকে মোড় নেয়। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব এ যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে মত-বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। গান্ধীজী খোলাখুলিভাবেই যুদ্ধে জড়ানোর বিরুদ্ধে মত দেন, এমনকি এর বিনিময়ে ভারত স্বাধীনতা পেলেও। “আন্তর্জাতিক দৃশ্যপটে ঝড়-ঝঞ্ঝা যত ঘনিয়ে আসছিল, ততই ঘোরতর বিষাদে গান্ধীজীর মন ভরে উঠছিল। ইউরোপ আর আমেরিকার নানা সমিতি আর ব্যাক্তিবর্গ তাঁর কাছে ব্যগ্রতা জানাচ্ছিলেন, আসন্ন যুদ্ধ ঠেকাবার জন্যে তিনি কিছু করুন-এইসব আবেদন তাঁর ব্যক্তিগত দুঃখ আরও ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল। সারা দুনিয়ার শান্তিবাদীরা শান্তিরক্ষার কাজে তাঁকেই স্বাভাবিকভাবে তাদের নেতা হিসেবে দেখেছিল। গান্ধীজী গভীরভাবে এ বিষয়ে ভেবে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির কাছে প্রস্তাব করেন যে,…..আসন্ন যুদ্ধে ভারত কোনোক্রমেই যোগ দেবে না, এমনকি তা যদি ভারত স্বাধীনতা লাভ করে, তাহলেও নয়-এই ছিল গান্ধীর মত” (পৃ. ২৭-২৮)। জওহরলাল নেহুরু ও মওলানা আজাদ ভিন্নমত প্রকাশ করেন। ইউরোপ ও আমেরিকার গণতান্ত্রীক রাষ্ট্রগুলো আক্রান্ত হওয়ায় নেহুরু তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পারছেন না দেখে, ভিতরে ভিতরে খুব অশান্তিবোধ করেন ও বিচলিত হয়ে পড়েন। মওলানা আজাদ ভারতের স্বাধীনতাপ্রাপ্তী সাপেক্ষে নাৎসীবাদ ও ফ্যাসীবাদ শক্তির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রীক শক্তির পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহনের প্রস্তাব করেন।



৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ বৃটেন জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোকে যুদ্ধ ঘোষণা করতে আহবান জানায়। ডমিনিয়নের পার্লামেন্টগুলো বসে যুদ্ধ ঘোষণা করলেও, ভারতের ক্ষেত্রে স্বয়ং বড়লাট লর্ড লিনলিথগো কারো সাথে আলোচনা না করেই জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ভারতকে যুদ্ধে ভিড়িয়ে দেয়। এতে গান্ধীজী মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েন। “ভারতকে যখন অভদ্রভাবে যুদ্ধে টেনে নামানো হল, গান্ধীজীর মানসিক অশান্তি প্রায় সহ্যের সীমা ছাড়াল। যুদ্ধে ভারতের যোগ দেওয়ার ব্যাপারটা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারেন নি।…..গান্ধীজীর পক্ষে এটা ছিল খুবই কঠিন সময়। গান্ধীজী দেখতে পাচ্ছিলেন যে, যুদ্ধে বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং তা রোধ করার আর কোনো ক্ষমতা নেই। তাঁর মর্মপীড়া এমন পর্যায়ে পৌছেছিল যে, তিনি বেশ কয়েকবার এমন কি আত্নহত্যা করার কথাও বলেছিলেন। আমাকে তিনি বলেছিলেন যে, যুদ্ধজনিত দুঃখযন্ত্রণা ঠেকানোর ক্ষমতা যদি তাঁর না থাকে, তাহলে অন্তত তাঁর জীবনের অবসান ঘটিয়ে এ জিনিস চোখে দেখার দায় থেকে রেহাই পেতে হবে” (পৃ.২৮-৩১)।



১৯৪২ সালের শুরুতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে পড়লে, যুদ্ধে ভারতীয় জনগণের সার্বিক সমর্থন ও অংশগ্রহণ লাভের আশায় মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্র ও চীনের অনুরোধে ভারতীয় সমস্যা সম্পর্কে বৃটিশ সরকার মনোভাব বদল করে। বৃটিশ সরকারের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্রিপস কমিশন ভারতীয় সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করতে ভারতবর্ষে আসেন। তার প্রস্তাব ছিল, “ বৃটিশ সরকার তখনই এই মর্মে ঘোষণা করবে যে, যুদ্ধ মিটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করা হবে। ঘোষণায় এই মর্মে আরও একটি ধারা যুক্ত থাকবে যে ব্রিটিশ কমনওয়েলথের ভেতর থাকা না থাকার বিষয়টি ভারত স্বাধীনভাবে স্থির করতে পারবে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের জন্যে একজিকিউটিভ কাউন্সিল পুনর্গঠিত হবে এবং তার সদস্যরা মন্ত্রীর পদমর্যাদা পাবে। বড়লাট থাকবেন নিয়মতান্ত্রিক প্রধান হিসেবে। এইভাবে এটা হবে প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতা হস্তান্তর তবে এই হস্তান্তর আইন মোতাবেক হতে পারবে কেবল যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর” (পৃ. ৪১)। প্রথম থেকেই গান্ধীজী যুদ্ধে অংশগ্রহণের বিপক্ষে ছিলেন, তাই তিনি এই প্রস্তাব সমর্থন করেন নি্, কিন্তু কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্বকে ভারতের মঙ্গলের স্বার্থে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিলেন। ২৯ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল, ১৯৪২ একটানা কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির অধিবেশনে দিনের বেলায় ক্রিপসের প্রস্তাবগুলো আলোচিত হয় এবং সন্ধ্যায় মওলানা আজাদ ও জওহরলাল নেহেরু ক্রিপসের সাথে কথা বলেন। কংগ্রেস যুদ্ধের পরে ভারতকে স্বাধীনতা প্রদান করা হবে, একজিকিউটিভ কাউন্সিল মন্ত্রীসভার ন্যায় ক্ষমতাভোগ করবেন, যুদ্ধ একজন ভারতীয় মন্ত্রীর অধীনে পরিচালিত হবে ও বড়লাট থাকবেন নিয়মতান্ত্রিক প্রধান এই মর্মে লিখিত ঘোষণা চাইছিল। স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস শেষ পর্যন্ত তাঁর পূর্ব অবস্থান থেকে সরে এলে, এই মিশন ব্যর্থ হয়ে যায়।



১৯৪২ সালের জুনে জাপান কর্তৃক ভারত আক্রমণ বিশেষকরে বাংলা দখলের আশঙ্কা, ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। করণীয় নির্ধারণে কংগ্রেস নেতৃত্ব দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। যুদ্ধের শুরুর দিকে মৌলানা আজাদ বিভিন্নভাবে গান্ধীজীকে বৃটিশের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে আন্দোলনের কথা বললেও তিনি নির্লিপ্ত ছিলেন, কিন্তু জাপানী বাহিনীর ভারত আক্রমণের আশঙ্কাকে কেন্দ্র করে গান্ধীজী নতুনকরে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের কথা বলেন। মৌলানা আজাদ ও জওহরলাল নেহুরু গান্ধীজীর এই মতকে সমর্থন করতে পারেন নি। মওলানা আজাদের আশঙ্কা ছিল, ভারতীয় সীমান্তে যখন শত্রুপক্ষ দাঁড়িয়ে, বৃটিশ সেসময়ে সংঘবদ্ধ কোনো আন্দোলন সহ্য করবে না, সব কংগ্রেস নেতাকে গ্রেপ্তারসহ প্রয়োজনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে আন্দোলন দমন করবে। “গান্ধীজী ধারণা করেছিলেন যে যুদ্ধ ভারতের সীমান্তে এসে যাওয়ায় আন্দোলন শুরু হওয়া মাত্র বৃটিশ কংগ্রেসের সঙ্গে একটা রফা করে নেবে। যদি তা নাও হয় তবু জাপানীরা যখন ভারতের দোরগোড়ায় তখন কোনো চরম পথ নিতে বৃটিশ ইতস্তত করবে। তিনি ভেবেছিলেন এর ফলে কংগ্রেস একটি সার্থক আন্দোলন গড়ে তোলার সময় এবং সুযোগ পাবে” (পৃ. ৬১)। ১৯৪২ সালের ১৪ জুলাই মওলানা আজাদ ও জওহরলাল নেহুরুর সমর্থন ছাড়াই কংগ্রেস ব্রিটিশ বিরোধী অহিংস বিপ্লব “ভারত ছাড়” আন্দোলন ঘোষণা করে এবং পরবর্তীতে মওলানা আজাদের আশঙ্কাই সত্যি হয়। সরকার গান্ধীজীসহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে দীর্ঘ সময়ের জন্য জেলে পাঠায় এবং “ভারত ছাড়” আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যায়।



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে বৃটিশ সরকার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ভারত-সচিব লর্ড পেথিক লরেন্স, বোর্ড অব ট্র-এর সভাপতি স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস এবং ফাস্ট লর্ড অব অ্যাডমিরালটি মিঃ এ. ভি. আলেক্সান্ডারের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট ক্যাবিনেট মিশন আলোচনার উদ্দেশ্যে ২৩ মার্চ, ১৯৪৬ ভারত আসেন। ভারতের স্বাধীনতা প্রদানের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভারতের সাম্প্রদায়িক সমস্যা। মুসলমানরা তিনটি প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সামগ্রিকভাবে ভারতে তারা সংখ্যালঘু। ১৯৩৯ সালে জিন্নাহর দ্বি-জাতিতত্ত্ব ঘোষণা, ১৯৪০ সালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলোতে পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত লাহোর প্রস্তাব, পরবর্তীতে সংশোধিত পাকিস্তান প্রস্তাবের মাধ্যমে মূলত মুসলমানরা বিচ্ছিন্নতাবাদের পথে অগ্রসর হয়। এসময় মুসলমানদের মন থেকে হিন্দুদের আধিপত্যের ভয় দূর করার বাস্তব উপায় খুঁজতে থাকেন মওলানা আজাদ। তিনি প্রস্তাব করেন, ভারতের সাম্প্রদায়িক সমস্যা দূর করার একমাত্র উপায় ভারতের সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রিয় সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন, কেন্দ্রিয় সরকারের হাতে থাকবে শুধু প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ ও পররাষ্ট্র, বাকি সব বিষয় থাকবে প্রদেশগুলোর হাতে। এভাবে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশে তাদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা ধরে রেখে সর্বভারতীয় সরকারে আলাদা ভূমিকা রাখতে পারবেন। তাঁর এই প্রস্তাব গান্ধীজীসহ শীর্ষ কংগ্রেস নেতৃত্ব সমর্থন করেন। পরবর্তীতে ১৬ মে ক্যাবিনেট মিশন সেই প্রস্তাব অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহন করে সমগ্র ভারতকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করেন, ‘ক’ অংশে পড়ে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল, ‘খ’ অংশে পাঞ্জাব, সিন্ধু প্রদেশ, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং বৃটিশ বালুচিস্তান এবং ‘গ’ অংশে বাংলা ও আসাম। এই পরিকল্পনা মুসলীম লীগ মেনে নিলে ভারত-ভাগের প্রধাণ বাঁধা সাম্প্রদায়িক সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু ইতিহাসের দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায় তখনও অপেক্ষায় ছিল। জওহরলাল নেহুরু ১০ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে বলে বসেন, “কংগ্রেস ‘বোঝাপড়ার কোনরকম বাঁধন না মেনে এবং সব সময় অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণের স্বাধীন মনোভাব নিয়ে’ গণপরিষদে প্রবেশ করবে। সংবাদপত্রের প্রতিনিধিরা আরও জিজ্ঞেস করেন, এর মানে এটা কিনা যে, ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনার হেরফের করা যাবে। এর উত্তরে জওহরলাল জোর দিয়ে বলেন যে, কংগ্রেস রাজী হয়েছে শুধু গণপরিষদে যোগ দিতে এবং মনে করে যে, তেমন বুঝলে কংগ্রেস অবাধে ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনার রদবদল বা ইতরবিশেষ করতে পারে” (পৃ. ১১৬)। নেহুরুর এই ঘোষণার পরে জিন্নাহ কংগ্রেসের মনোভাব নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। দেশ স্বাধীন হবার আগেই কংগ্রেস মত পরিবর্তনের ইংগিত দিলে, পরবর্তীতে মুসলমানরা কতটুকু নিরাপদ হতে পারে, এই ভাবনা থেকেই জিন্নাহ ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনা বিষয়ে মুসলীম লীগের পূর্ববর্তী সমর্থন প্রত্যাহার করে স্বাধীন পাকিস্তানের দাবী পুনর্ব্যক্ত করেন। ফলশ্রুতিতে ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়।



বৃটিশ প্রধাণমন্ত্রী মি. এটলি লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে ১৯৪৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়সীমা বেধে দিয়ে শেষ ভাইসরয় করে পাঠান। মৌলানা আজাদ লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সাথে বেশ কয়েকবার দেখা করে ক্যাবিনেট মিশন প্রস্তাব অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী জানান। কিন্তু মাউন্টব্যাটেন পাকিস্তান প্রস্তাবকে সামনে রেখে অগ্রসর হন। এক্ষেত্রে তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বল্লবভাই প্যাটেল ও জওহরলাল নেহুরুকে পাশে পান। জওহরলাল নেহুরু প্রথম দিকে ভারত-ভাগের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু লেডী মাউন্টব্যাটেনের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকায়, তিনি মত বদল করে ফেলেন। “জওহরলালের ভোল বদলের পেছনে একটা কারণ লেডি মাউন্টব্যাটেন। ভদ্রমহিলা যেমন অতীব বুদ্ধিমতি তেমনি ভারী মায়াবী আর বন্ধুভাবাপন্ন। তিনি ছিলেন তাঁর স্বামীর খুব গুনগ্রাহী এবং বহুক্ষেত্রে তাঁর স্বামীর সঙ্গে যাদের গোড়ায় মতের অমিল হত তাদের কাছে তিনি স্বামীর বক্তব্য ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেন” (পৃ. ১৩৭)। গান্ধীজীও প্রথম দিকে ভারত-ভাগের বিরোধী ছিলেন। মওলানা আজাদ ভারত-ভাগ ঠেকানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে গান্ধীজীর শরনাপর্ণ হয়ে বলেন, “যেমন এতদিন, তেমনি এখনও আমি দেশভাগের বিরুদ্ধে। বরং দেশভাগের বিরুদ্ধে আমার মনোভাব আগের চেয়েও কড়া।...এখন আপনিই আমার একমাত্র ভরসা। আপনি যদি দেশভাগের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, এখনও আমাদের শেষ রক্ষার আশা আছে। তবে আপনি যদি চুপ করে থাকেন তো আমার ভয়, ভারতের ভরাডুবি হবে” (পৃ. ১৪০)। গান্ধীজী প্রতিউত্তরে বলেন, দেশভাগ হলে আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে হবে। কিন্তু প্যাটেল ও নেহুরু বুঝিয়ে সুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের পক্ষে নিয়ে আসেন। মওলানা আজাদ গভীর দুঃখ নিয়ে বলেন, “প্যাটেলকে আজ জিন্নার চেয়েও দ্বিজাতিতত্ত্বের বড় সমর্থক হতে দেখে আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম। দেশ ভাগের পতাকা জিন্না তুলে থাকলেও তার প্রকৃত পতাকাবাহক এখন প্যাটেল” (পৃ. ১৩৯)।



১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট ভারতবর্ষ ভাগ যথাক্রমে পাকিস্তান ও ভারতের জন্ম হয়। মওলানা আজাদ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেও, তাঁর দেশপ্রেম ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে তাঁকে বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর স্পষ্ট মতামত, তাঁর সততা ও সাহসকে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ নতুন করে প্রশংসা করতে বাধ্য হবে।

(India Wins Freedom By Maulana Abul Kalam Azad

মূল অনুবাদঃ ভারত স্বাধীন হল (সুভাষ মুখোপাধ্যায়)

অরিয়েন্ট লংম্যান লিমিটেড, ১৯৮৯

পেপারব্যাক সংস্করণ। পৃষ্ঠা-১৯২)

জৈনক এক ব্যক্তি বলেছেন: যে তিনি বিশ্বাস করতেন এর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানরাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাঁরা উপমহাদেশের বিভিন্ন অংশে বিভাজিত হয়ে আরো সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে, সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র দুইটিতে বজায় থাকবে চিরকালীন অশান্তি, উভয় দেশেই বার্ষিক বাজেটের উন্নয়ন বরাদ্দ কমে গিয়ে সামরিক বরাদ্দ বাড়বে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ জনগণ।

এটা যে কত বড় সত্য মওলানা সাহেবের মত দুরদর্শী নেতা অনেক আগেই বুঝেছিলেন যা এখন মানুষ পদে পদে বুঝতে পারছে।
তার সে আটকে দেয়া পৃস্ঠাগুলো খুলে পুরো বইটা মুক্ত করে দেয়া হয়েছে তার নির্দেশ মত।
খুব সুন্দর বিশ্লেষন করেছেন।


শেখ আমিনুল ইসলাম এক বোনের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন: শুভেচ্ছা আপা। দেশ বিভাগের পূর্বে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে মুসলমান সংখ্যা গরিষ্ঠ প্রদেশে, মুসলীম লীগ একচেটিয়া জয়লাভ করে সরকার গঠন করেছে। শুধু ব্যতিক্রম ছিল উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ( যেটা বর্তমানে পাকিস্তানের অংশ)। সীমান্ত গান্ধী নামে পরিচিত খান আব্দুল গফফর খানের নেতৃত্ত্বে কংগ্রেস সব সময় ক্ষমতায় এসেছে এই প্রদেশে। কিন্তু দেশ ভাগের সময়, তাঁরা পড়ে যান বিপদে। কারণ এলাকাটা পাকিস্তানের অংশে পড়ে যায়। তিনি অনেক চেষ্টা করেছিলেন ভারতের সাথে থাকতে। কিন্তু কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেন নি। গান্ধীজীও নিশ্চুপ ছিলেন সেসময়। এই বই থেকে কিছু লাইন তুলে দিচ্ছি...

"এখন তিনি (গান্ধীজী) ওয়ার্কিং কমিটিতে (কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি) খোলাখুলি দেশভাগের পক্ষ্যে বললেন। আগেই আমি (মওলানা আজাদ) তাঁর মতিগতির আঁচ পাওয়ায়, তাঁর কথা শুনে আমার ঠিক আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা হয় নি। কিন্তু খান আব্দুল গফফর খানের মনে এর কী প্রতিক্রিয়া হবে সহজেই অনুমেয়। তাঁর তো শুনে একেবারে আক্কেলগুড়ুম এবং বেশ কয়েক মিনিট মুখ দিয়ে রা বেরলো না। তিনি তারপর ওয়ার্কিং কমিটির কাছে আর্জি জানালেন এবং মনে করিয়ে দিলেন যে, বরাবর তিনি কংগ্রেসের পাশে থেকেছেন। এখন যদি কংগ্রেস তাঁকে ত্যাগ করে, তাহলে সীমান্তে তার সাংঘাতিক প্রতিক্রিয়া হবে। তাঁর শত্রুরা তাঁকে উপহাস করবে এবং এমন কি তাঁর বন্ধুরাও বলবে যে, যতদিন কংগ্রেসের সীমান্তকে দরকার ছিল, ততদিন খুদাই-খিদমতগারদের তাইয়ে তুইয়ে রেখেছে। কিন্তু যখনই মুসলীম লীগের সঙ্গে কংগ্রেস রফা করে ফেলতে চাইল, অমনি সে দেশভাগের বিরোধতার পাট চুকিয়ে দিল- এমন কি তার আগে সীমান্তকে আর তার নেতাদের একটা জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করল না। খান আব্দুল গফফর খান বার বার বলতে লাগলেন যে, কংগ্রেস যদি খুদাই-খিদমতগারদের যমের মুখে ঠেলে দেয়, তাহলে সীমান্ত এটাকে বিশ্বাস ঘাতকতার কাজ বলে মনে করবে” (পৃ. ১৪৫)।

দেশভাগের পর খান আব্দুল গফফর খান ও তার ভাই ডাঃ খান সাহেবের অবস্থা খুব করুন হয়েছিল। “খান-ভাইদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষেরা জিন্নার কান ভাঙাতে দেরি করে নি। সীমান্তে যিনি মন্ত্রিসভা গড়েছিলেন, সেই আব্দুল কায়ুম খান স্বভাবতই চাননি জিন্না আর খান ভাইদের মধ্যে কোনো মিটমাট হোক। সুতরাং তিনি এমন সব কাজ কারবার চালাতে লাগলেন যাতে দুপক্ষের বোঝাপড়া অসম্ভব হয়ে পড়ল। বস্ততপক্ষে, তাঁর সরকারের কাজেকর্মে শোভনতা আর ন্যায়বিচারের বালাই থাকে নি; অবৈধভাবে এবং অন্যায়ের আশ্রয় নিয়ে খুদাই-খিদমতগারদের পিষে ফেলা হল। চূর্ণ হল গণতন্ত্র এবং বলপ্রয়োগ হয়ে দাঁড়াল রোজকার ব্যাপার। বৈধ অভিযোগ ছাড়াই অথবা বিনা বিচারে খান আব্দুল গফফর খান,ভাই ডাঃ খান সাহেব এবং খুদাই-খিদমতগারদের অন্যান্য নেতৃত্ববৃন্দকে জেলে পুরে দেওয়া হল। প্রায় ছয় মাস ধরে তাঁদের জেল খানায় পচে মরতে হয়েছে” (পৃ. ১৪৭)

শেখ আমিনুল ইসলাম কে এক বোন দীপান্বিতা বলেছে: খুব খারাপ লাগছে খান আবদুল গফফর খানের জীবনের শেষটা এমন গেছে জেনে..?
কিন্তু উনিতো ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন! ১৯৪৭ থেকে পুরটাই জেলে থাকতে হয়েছিল নাকি? আপনার মন্তব্য পড়ে এই মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেল।

শেখ আমিনুল ইসলাম বলেছেন: দিদি ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস যেমন গোরবের ইতিহাস, তেমনি এর সাথে লুকিয়ে আছে অনেক নিঃস্ব অসহায়ের চোখের জল, শরীরের রক্ত আর অনেকের ভিটে মাটি হারানোর দুঃখ। চিন্তা করতে পারি না, একজন মানুষ ঘুম থেকে উঠে দেখল সে পরবাসি হয়ে গেছে। তাঁর সব কিছুই গেছে। এমনই!

এই বইটা পড়তে গিয়ে অনেক যায়গাতেই কষ্ট লেগেছে। আজ বল্লভ ভাই, প্যাটেলকে আধুনিক ও অখন্ড ভারতের রূপকার বলা হয়। তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য, পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্ট্যাচু গুজরাটের নর্মদা নদীর পারে হবে "স্ট্যাচু অব ইউনিটি" নামে। অথচ তিনিই ভারতভাগের মূল কারিগর ছিলেন। সে কথা, এই পোস্টে আমার সেষ উদ্ধৃতি দেখবেন। মৌলানা আজাদ এই বইতে পরোক্ষভাবে গান্ধীজিকে হত্যার জন্য তাঁকে দায়ি করে গেছেন। বল্লভ ভাই তখন সরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি গান্ধীজির নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থাই নেন নি, কেননা গান্ধীজি দেশ বিভাগের সময় ঘটে যাওয়া দাঙ্গার জন্য তাঁর সমালোচনা করেছিলেন, ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। তিনি সেই দাবী প্রত্যাক্ষান করেছিলেনই, সেই সাথে গান্ধীজিকে অপমান করে চলে গিয়েছিলেন।

গান্ধীজি তাঁর ভগ্ন শরীর নিয়েই আমরণ অনশন শুরু করেন। বল্লভ ভাই পাষাণ হতে পারেন, ভারতের জনগণ নন। তারা কাঁদতে কাঁদতে গান্ধীজির সামনে অবনত মস্তকে হাজির হয়ে, কথা দেন এই দাঙ্গা আর হবে না। মুসলমানরা ভারতের সব জায়গায় নিরাপদ থাকবেন।

কিন্তু বল্লভ ভাই, গান্ধীজির এই অনশনকেও মেনে নিতে পারেন নি। তিনি এটি নিয়ে অনেক অপমানজনক কথা বলে, এই নাটক থামাতে বলেছিলেন।

আপনার জন্য, গান্ধীজির হত্যাকারী নথুরাম গডসের জবান বন্দীর লিংক Goggle এ Click করলে পাবেন এবং
কিছুটা ধারনা হয়ত পাবেন।


খান আবদুল গফফর খান

হ্যা দিদি, খান আব্দুল গফফর খান১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। কিন্তু তাঁকে পুরো ষাট ও সত্তরের দশক হয় জেলে থাকতে হয়েছে, নতুবা নির্বাসনে থাকতে হয়েছে।


গান্ধীজির সাথে খান আবদুল গফফর খান।

তাঁকে ১৯৮৫ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনিত করা হয়েছিল। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ভারতের নাগরিক না হয়েই প্রথমবারের মত ভারত রত্ন পুরস্কার পেয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালে তিনি যখন মৃত্যু বরণ করেন, তখন আফগান যুদ্ধ চলছিল। তাঁর অন্ত্যেষ্টেকৃয়ার মর্যাদা রক্ষার্তে, সোভিয়েত বাহিনী ও আফগানরা যুদ্ধ বিরতি পালন করেন।

মূল অনুবাদকের পোষ্টে এক ভাই মন্তব্য করেছে, মৌলানা আজাদের দৃষ্টিভঙ্গী হয়ত অনেক অংশেই সময়ের ব্যস্তবতার নিরিখে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তিনি সত্যিকারভাবেই আমৃত্যু মুসলমানদের ভালো চেয়েছেন, হিন্দু মুসলমান সম্প্রীতি চেয়েছেন।এজন্য তিনি শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে থাকবেন।

মাওলানা আজাদের ব্যপারে গান্ধিজীর একটা মন্তব্য আছে "মাওলানা আযাদ প্লেটো, এরিস্টেটল, পিথাগোরাসের সমকক্ষ পান্ডিত।"

সময়ের সংকীর্ণ তার জন্য পুরোপুরি সংগ্রহ করতে পারিনি বলে দুঃখিত তবে প্রয়োজন হলে দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ।
*সংগৃহীত ইকবাল হুসাইন ফাকিরাবাজার করিমগজ্ঞ আসাম।*

Saturday 16 February 2019

Salute to INDIAN ARMY


               تقلید کی شرعی حیثیت      محمد زین الحق –        
        مدرس - قاضیر بازار سنیر مدرسہ
                                                                                                                  راتاباڑی، کریم گنج ، آسام

تقلید کے لغوی معنی گلے میں کسی چیز کا لٹکانا پیروی کرنا کسی کے قدم بقدم چلنا تحقیق کی ضرورت نہ رکھنا وغیرہ    -
تقلید کے اصطلاحی معنی دینی معاملات میں آئمہ مجتہدین میں سے کسی کی فہم وہ بصیرت پر اعتماد کرتے ہوئے اس کے اوپر عمل کرنے کو اصطلاح میں تقلید کہتے ہیں
دین کی اصل دعوت یہ ہے کہ اللہ تعالی کی اطاعت کی جائے اور رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم کی اطاعت بھی اس لئے واجب ہے کہ حضور صلی اللہ علیہ وسلم نے اپنے قول اور فعل سے احکام الہی کی ترجمانی فرمائی ہے کہ کون سی چیز حلال ہے اور کون سی حرام ہے کیا جائز ہے اور کیا ناجائز لہذا حضور صلی اللہ علیہ وسلم کی اطاعت درحقیقت اللہ تعالی کی اطاعت ہے ارشادباری تعالی ہے "ومن يطع الرسوله فقد اطاع الله" لهذا شريعت کے تمام معاملات ميں الله اور اسکے رسول کی اطاعت ضروری ہے اور جو شخص خدا اور رسول صلی اللہ علیہ وسلم کے سوا کسی اور کی اطاعت کرنے کا قائل ہو اور اس کو مستقل بالذات متاع سمجھتا ہو یہ یقینا مذموم ہے لہذا ہر مسلمان کے لئے ضروری ہے کہ وہ قرآن و سنت کے احکام کی پاس داری اور اطاعت کرے –

        قرآن اور سنت میں بعض احکام ایسے ہیں جو آیات قرآنیہ اور احادیث صحیحہ سے صراحت ثابت ہے لیکن بعض احکام ایسے ہیں جن میں کسی قدر ابہام و اجمال ہے اور بعض آیات و احادیث ایسی ہے جو چند معنی کا احتمال رکھتی ہے بعض محكم ہے اوربعض متشابہ کوئی مشترک ہے تو کوئی مول اور کچھ احکام ایسے ہے کہ بظاہر قرآن کی کسی دوسری آیات یا کسی دوسری حدیث سے متعارض معلوم ہوتے ہیں مثلا قرآن شریف میں ہے" المطلقات یتربصن بانفسہن ثلاثۃ قروء " يعنى جن عورتوں کو طلاق دے دی گئی ہے وہ تين قروء گزرنے تک انتظار کرے اور لفظ قروء عربی زبان میں حائض اور طهر دونوں میں مستعمل ہے ایسے موقع پر یہ الجمہن ہوتی ہے کہ مطلقہ عورت کی عدت تین حیض آجانے پر ختم ہوگی یا تین طہر ختم ہونے پر پوری ہوگی –

         اسی طرح حدیث میں ہے " من کان لہ امام فقراءۃ الامام له قراءة " (ابن ماجه) یعنی جس کا امام ہو تو امام کی قراءت اس کے لئے کافی ہے دوسرے حدیث میں بھی اس طرح ہیں " انما جعل الامام ليؤتم به فإذا کبر فکبرو آو اذا قرأ فانصتوا" (مسلم شریف١٧٨) یعنے امام اس لیے بنایا گیا ہے کہ اس کی اقتداء کی جائے جب وہ تکبیر کہے تو تم بھی تکبیر کہو اور جب قراءة کریں تو خاموش رہو-
        اس کے بالمقابل دوسری حدیث میں ہے " لا صلاۃ لمن لم یقرا بفاتحۃ الکتاب"         ( بخاری شریف صفحه ١٠٤) یعنی جو شخص فاتحہ نہ پڑھی تو اسکا نماز نہ ہو گی اور بھی بہت سی مثالیں ہیں جن میں ایک حدیث دوسری حدیث کے معارض معلوم ہوتی ہے جن کی تشریح یادفع تعارض بھی صحابہ سے اتفاق منقول نہیں آوران کے علاوہ بے شمار مسائل ایسے ہیں جن کا حکم قرآن و سنت سے صراحت ثابت نہیں وہاں اجتہاد واستنباط سے کام لینا ہی پڑتا ہے ایسے موقع پر عمل کرنے والے کے لئے الجہن اور یہ دشواری پیدا ہوتی ہے کہ وہ کس پر عمل کریں اور کون سا راستہ اختیار کرے اس الجھن کو دور کرنے اور صحيح مسئلہ سمجھنے کے لئے ایک صورت تو یہ ہے کہ انسان اپنی فہم و بصیرت پر اعتماد کر کے اس کا خود کوئی فیصلہ کر لیں اور پھر اس پر عمل پیرا ہوجائے اور دوسری صورت یہ ہے کہ اس قسم کے معاملات میں از خود کوئی فیصلہ کرنے کے بجائے یہ دیکھے کہ قرآن و سنت کے ان ارشادات سے ہمارے جلیل القدر ائمہ یعنی صحابہ تابعین و تبع تابعین جن کے بارے میں لسان نبوت کا یہ فیصلہ ہے " خیر القرون قرنى ثم الذین یلونہم ثم الذین یلونہم" اور جو علوم قرآن وحدیث کے فہم سے زیادہ ماہر فہم و بصیرت ميں اعلی تقوی و طہارت میں فائق حافظه وذکاوت میں ا رفع تہے انہوں نے کیا سمجھا ہے اس پر عمل کرلیں –

        ایسے موقع پر دونوں صورتوں میں سے دوسری صورت اختیار کرنا ایسی ہے جیسے ہم اپنی دنیاوی معاملات میں ماہرین فون کے مشورون پر عمل پیرا ہوتے ہیں بیمار ہوتا ہے تو ڈاکٹر کے پاس جاتے ہیں کوٹ میں کوئی مقدمہ ہوجائے تو وکیل کے پاس جاتے ہیں وغیرہ وغیرہ اور وہ جو کہتے ہیں اس کے سامنے سرتسلیم خم کردیتے ہیں کہ حجت بازی نہیں کرتے اسی طرح دینی معاملات میں ان مقدس ترین حضرات کی فہم و بصیرت پر اعتماد کرتے ہوئے ان ائمہ مجتہدین میں سے کسی کے قول پر عمل کریں اور اسیا عمل کرنے کو اصطلاح میں تقلید کہا جاتا ہے اور اس صورت میں مقلد اپنے امام کا اتباع یہ سمجھ کر کرتا ہے کہ وہ دراصل قرآن اور سنت پر عمل کر رہا ہے اور صاحب شریعت ہی کی پروی کر رہا ہے اور تصور کرتا ہے کہ اس کی اور صاحب شریعت کے درمیان امام صرف واسطہ ہے جس نے صاحب شریعت کے باتوں کی تشریح و توضیح کر کے اس پر عمل کرنے کی آسان صورت دکھا کر ہم پر احسان کیا ہے مثال کے طور پر جس طرح جماعت کے نماز میں جبکہ جماعت بڑی ہو امام کی آواز دور کے مقتدیوں کو سنائی نہیں دیتی ہوں تو اس وقت مكبر مقرر کیے جاتے ہیں وه مکبر امام کے اقتداء کرتے ہوئے بلند آواز سے تکبیر کہ کر امام کی نقل و حرکت رکوع اور سجدہ کی اطلاعات پچھلے صف والوں کو دیتا ہے اور پچھلی صف والے یہ تصور کرتے ہیں کہ ہم امام ہی کی اقتداء اتباع کر رہے ہیں اور اسی کے پیچھے نماز ادا کر رہے ہیں اگر چہ رکوع سجدہ مکبر کی آواز پر کر رہے ہیں اور خود مکبر بھی یہی سمجھتا ہے کہ میں خود امام نہیں ہوں بلکہ میرا اور پوری جماعت کا امام صرف ایک ہی ہے سب اس کی اقتدا کر رہے ہیں ميں تو صرف امام کی نقل و حرکت کی اطلاع دے رہا ہوں بالکل یہی صورت یہاں ہیں کہ م‍‍قلد کا تصور یہی ہے کہ میں خدا اور رسول کی اطاعت اور اتباع کر رہا ہوں اور امام کو درمیان میں صرف مکبر تصور کرتا ہوں وہ صرف صاحب شریعت کی باتوں کی مشرح و موضح ہے کی مستقل بالذات مطاع نہیں بلکہ مستقل بالذات مطاع صاحب شریعت ہی کو یقین رکھتا ہے آور پہلی صورت یعنی مجتہدین میں سے کسی پر اعتماد نہ کرتے ہوئے اپنی فہم و بصیرت کے مطابق از خود فیصلہ کرکے اس پر عمل کریں مگر اس صورت میں صاحب شریعت کی اتباع نہ ہوگی بلکہ اپنی خواہش کی اتباع ہوگی کیونکہ خود مجتہد نہیں کہ وہ فیصلہ کرے ناسخ کون سی آیات و حدیث ہے اور منسوخ کیا ہے راحج کیا ہے اور مرجوح کیا ہے وغیرہ وغیرہ اور دنیا کے عام حالات ایسی ہے کہ ہر شخص اپنی من مانی چیزوں کی طرف مائل ہوتا ہے اس لیے وہ اپنے خواہیش سے دل لگتی چیز پر عمل کرے گا لہذا اتباع خواہش نفس کی ہوگی اور شریعت کی نہ ہوگی اور انسان کو گمراہ کرنے کے لئے شیطان کا یہ کامیاب حربا ہے کہ انسان خواہشات نفسانی کے بندہ ہو جائے اور اس کے مطابق عمل کرنے لگے جو انسان کے دین کے لیے بہت ہی خطرناک ہے قرآن پاک میں بھی ہیں اللہ تعالی نے خواہشات نفسانی پر چلنے والوں کی بہت ہی مذمت فرمائی ہے کہ ایک جگہ اس کو خسيس ترین جانور کتے سے تشبیہ دی ہے - " ولكنه اخلد الى الأرض و أتبع هواه فمثله كمثل الكلب " یعنی وہ دنیا کی طرف مائل ہو گیا اور اپنی خواہشات نفسانی کی پیروی کرنے لگا تو اس کے حالات کتا کیسی ہوگئ ( سورہ اعراف پارہ ٩) اور ایک جگہ خواہش پرست کو بت پرست کے قائم مقام قرار دیا ہے جسے قولہ تعالی ‏" افرايت من اتخذ الہہ هواه واضله الله على علم وختم على سمعه و قلبه وجعل علی بصيرہ  غشاوۃ  " يعني سو کیا آپ صلی اللہ علیہ وسلم نے اس شخص کی حالت بھی دیکھیں جس نے اپنا خدا اپنی خواہش نفسانی کو بنا رکھا ہے اور خدا تعالیٰ نے اس کے باوجود سمجھ بوجھ کے گمراہ کردیا ہے اور کان اور دل پر مہر لگا دی ہے اور اسسکی آنکہوں پر پردہ ڈالديا ہے (سورہ جاثيہ پارہ ٢٥) يعنی خاہش  نفسانی پر عمل کرنے کی وجہ سے خدا اسکو گمراہ کرديتا اور کان و دل پر مہر لگا دی جاتی ہے پھر اس کے دل میں صحيح بات نہیں اترتی اور نہ راہ راست کيطرف اس کا دل مائل ہوتا ہے اور پھر وہ گمراہی کے گھڑے میں گرتا ہی چلا جاتا ہے ان کے علاوہ اور بہت سے آیات و حدیثوں میں خواہش نفسانی پر عمل کرنے کی مذمت آئی جس کی بنیاد پر علمائے کرام نے بھی ان کی مذمت کی ہے اس لئے انسان کے لئے بہترین اور نجات کا راستہ یہی ہے کہ بجائے خود فیصلہ کرنے کے ائمہ ہدیٰ کے تقوی و طہارت اور خداداد بصیرت پر اعتماد کرتے ہوئے ائمہ اربعہ جن کی تقلید پر امت کا اجماع ہوچکا ہے ان میں سے کسی کی تقلید کرے جس میں دینی مصلحت اور نجات مضمر ہے جیسا کہ حضرت شاہ ولی اللہ محدث دہلوی کا ارشاد گرامی ہے کہ " أعلم أن فى الا خذه بهذه مذاهب الاربعه مصلحة عظيمة و في الأعراض  عنها كلها مفسدات كبيره" یعنی جنا چاہئے کہ ان مذاہب اربع کے اختیار کرنے میں بڑی مصلحت ہے اور ان سب سے اعراض کرنے میں بڑا مفسدہ ہے( عقد جيد) حوالہ و فتوی رحیمیہ١٠١-
         قرآن اور سنت اور اقوال صحابہ و سلف صالحین سے تقلید کا ثبوت كما في قوله تعالى   " ولو ردوه الى الرسول والى اولي الامر منهم لعلمه الذين يستنبطونه منهم " یعنی اگر وہ لوگ اس امر کو رسول کی اور اوللامر کے حوالہ کرتے تو جو لوگ اہل فقہ اور اہل اسطنبات ہیں وہ سمجھ کر ان کو بتلہ دیتے کہ کون سی چیز قابل عمل ہے اور کونسی چیز نہ قابل عمل –

      (٢) " اتبع سبيل من اناب الي " يعنی اس شخص کی پیروی کرو جو میری طرف رجوع کئے ہوئے ہے

      (٣) "يا ايها الذين امنوا اطيعوا الله واطيعوا الرسول اولي الامرمنكم " اے ایمان والو اطاعت کرو اللہ کی اور اطاعت کرو رسول کی اور اولو الامر کی - 

      (٤) " فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون " اگر تم نہیں جانتے تو اہل علم سے دریافت کرلو-

       مذکورہ تمام آیاتوں ميں اہل علم و اجتہاد کے اتباع و تقلید کی تاکید فرمائی گئی جس سے تقلید کا لازمی ہونا واضح اور ظاہر ہے ان کے علاوہ اور بہت سی آیات اس بارے میں موجود ہے اب چند حدیثيں سنۓ –

      (١)  "عن حذيفه رضي الله قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم اني لا ادری ما بقائ فيكم فا قتدوا بالذين بعدی ابی بكر وعمر" حضرت حذیفہ رضی اللہ فرماتے ہیں کہ رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم نے ارشاد فرمایا کہ مجھے معلوم نہیں کہ کب تک تم لوگوں میں زندہ رہوں گا لہذا میرے بعد ان دونوں شخصوں یعنی ابوبکر عمر رضی اللہ عنہما کا اقتدا کرو (مشکوۃ٥٢٠)

      (٢) "عليكم بسنتي وسنهة الخلفاء الراشدين المجتهدين " یعنی تم میری سنت اور میرے ہدایت-یافتہ خلفائے راشدین کی سنت کو مضبوطی سے پکڑے رہو-

      (٣) "عن معاذ بن جبل رضي الله تعالى عنه ان رسول الله عليه و سلم لما بعثه الى اليمن قال كيف تقضى اذا عرض لك قضاء قال اقضي بكتاب الله قال فان لم تجد في كتاب الله قال بسنۃ رسول الله صلى الله عليه و سلم قال فان لم تجد في سنه رسول الله صلى الله عليه و سلم قال اجتهد برائ ولا آلو فضربه رسول الله صلى الله عليه و سلم علي صدره وقالوا الحمد لله الذي وفق رسول رسول الله صلى الله عليه و سلم لما يرضى به رسول الله صلى الله عليه و سلم " یعنی حضرت معاذ بن جبل سے مروی ہے کہ جب رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم نے ان کو یمن کا قاضی بنا کر روانہ کیا تو یہ دریافت فرمایا کہ جب کوئی قضيه پیش آیا تو کس طرح فیصلہ کرو گے عرض کیا کتاب اللہ سے فیصلہ کرونگا فرمایا اگر وہ مسئلہ کتاب اللہ میں نہ ہو تو عرض کیا رسول اللہ کی سنت سے فیصلہ کروں گا  فرمایا اگر اس میں بھی ہیں نہ ملے تو عرض کیا پھر اجتہاد واستنباط کر کے اپنی رائے سے فیصلہ کروں گا اور اس مسئلہ کا حکم تلاش کرنے میں کوئی کسر نہ چھوڑوں گا حضرت معاذ رضی اللہ فرماتے ہیں آپ صلی اللہ علیہ وسلم نے میرے اس جواب پر اپنے دوست مبارک میرے سینے پر مارا اور فرمایا کہ اللہ تعالی کا شکر ہے کہ اس نے اپنے رسول کے قاصد کو اس بات کی توفیق دے جسے اللہ کا رسول رضی اور خوش رہیں (ابوداود ١٤٩- مشکوۃ  ٣٢٤)

        مذکورہ پہلے دو احادیث سے ثابت ہوتا ہے کہ حضور صلی اللہ علیہ وسلم نے ابوبکر و عمر اور خلفائے راشدین کے اقتدار کو تقلید کرنے کا حکم دیا ہے اور تیسرے حدیث میں حضرت معاذ کو یمن کا قاضی بنا کر بھیجا جا رہا ہے اور مسائل کے حل کرنے اور معاملات کو سلجہانے کی تعلیم فرمائی جا رہی ہے حضرت معاذ کو صرف قرآن وسنت نہیں بلکہ ممووقع پڑھنے پر قیاس و اجتہاد سے فتوی دینے کی ترغیب فرمائیں اور حضور صلی اللہ علیہ وسلم نے اہل یمن کے لیے اپنے فقہاء صحابہ میں سے صرف معاذ رضی اللہ کو یمن بھیجا اور انہیں حاکم قاضی اور معلم بنا کر اہل یمن کے لئے یہ لازم کردیا کہ وہ انہیں کی تقلید و اتباع کرے جس کا مقصد اس کے سوا کیا ہو سکتی ہے کہ آپ صلی اللہ علیہ وسلم نے اپنے اہل یمن کو ان کی تقلید شخصی کی اجازت بلکہ اسکو ان کے لیے لازم کر دیا -
اقوال صحابہ

      (١) اعلام الموقعین للحافظ ابن القیوم اور سنن دارمی ميں منقول ہے کہ حضرت عمر رضی اللہ تعالی عنہ نے یہ قاعدہ مقرر فرمایا تھا کہ جس مسئلہ میں کوئی حدیث نہ ملے اس میں حضرت ابو بکر صدیق رضی اللہ تعالی عنہ کے فتوی پر عمل کیا جائے اگر آپ کا فتوی نہ ملے تو علماء کے مشورہ سے جو امر طے پائے اس کی تعمیل کی جائے (احسن الفتوی جلد ١ صفحہ ٤١٦) حضرت عمر رضی اللہ کے اس فیصلہ سے تقلید شخصی کی اہمیت اور ضرورت کا اندازہ لگائیے - خود محدث ' فقيۃ 'مجتہد اور تمام کمالات کے جامع ہونے کے باوجود حضرت صدیق اکبررضی اللہ کی تقلید کی التزام فرمایا اور عمر بھرآپ کے فتوی کے مطابق حکم دیتے رہے -

      (٢) بخاری مسلم اور ابو داؤد میں ہے - حضرت ابو موسی اشعری رضی اللہ سے ایک مسئلہ دریافت کیا گیا پھر وہی مسئلہ حضرت عبداللہ بن مسعود رضی اللہ سے پوچھا گیا حضرت عبداللہ بن مسعود رضی اللہ کا جواب حضرت ابو موسی اشعری رضی اللہ کے خلاف تھا جب ابو موسی اشعری کو اس کا علم ہوا تو سمجھ گئے کہ حضرت عبد اللہ بن مسعود ہی کا جواب اور فتوی صحیح ہیں اس کے بعد ارشاد فرمایا لا تسئلونى ما دام هذا الحبر فيكم یعنی جب تک یہ متبحر عالم (ابن مسعود) تم میں موجود رہے تمام مسائل انہی سے دریافت کیا کروں اور وہ جو فتویٰ دے اسی پر عمل کرو مجھ سے دریافت نہ کرو (مشکوۃ شریف ٢٦٤)

        مذکورہ روایت سے معلوم ہوتا ہے کہ حضرت ابو موسی اشعری نے عبداللہ بن مسعود کی تقلید کرنے کا حکم دیا ہے جس سے تقلید اور شخصی واضح اور بین طور سے ثابت ہوتا ہے –

        (٣) صحیح بخاری شریف میں ہے " عن عكرمة ان اهل المدينه سالو ابن عباس عن امرآۃ طافه ثم حاضت قال لهم تنفر قالوا لا ناخذ بقولك وندع قول زيد " (كتاب الحج ٢٣٧)  حضرت عکرمۃ رضی اللہ سے مروی ہے کہ اہل مدینہ نے حضرت ابن عباس سے اس عورت کے متعلق سوال کیا جو طواف فرض کے بعد حائضه ہوگئی تو ابن عباس نے جو اب میں فرمایا وہ طواف ادا کئے بغیر واپس جا سکتی ہے اہل مدینہ نے کہا ہم آپ کے قول پر عمل کرکے زید بن ثابت کے قول فتویٰ طرف نہیں کرینگے روایت مذکورہ سے ثابت ہوتا ہے اہل مدینہ زید بن ثابت کے تقليد کیا کرتے تھے اس روایت کے اس جملہ پر غور کیجئے کہ جب اہل مدینہ نے ابن عباس سے یہ بات کہی تو ابن عباس نے نکیر نہیں فرمائی کہ تم اتباع و تقلید کے لئے ایک معین شخص کو لازم کرکے شرک و بدعت اور گناہ کے مرتکب ہو رہے ہو بلکہ اس نے ان کو اس کی اجازت دے دی لہٰذا ثابت ہوا کہ تقلید دور صحابہ میں مروج تھی -

اقوال و تحریرات سلف صالحین

       (١) علامہ ابن تیمیہ فتاوی ابن تیمیہ میں تحریر فرماتے ہیں " في وقت يقلدون ما يفسد النكاح و في وقت يقلدون من يصححه بحسب الغرز و الهواء و مثل هذا لا يجوز" یعنی وہ لوگ کبھی اس امام کی تقلید کرتے ہیں جو نکاح کو فاسد قرار دیتا ہے اور کبھی اس امام کی جو اسے درست قرار دیتا ہے اپنی غرض اور خواہش کے مطابق اور اس طرح عمل کرنا بالاتفاق ناجائز ہے  (فتاوی رحمیہ)-

       (٢) علامہ جلال الدین محلی شرح جمع جوامع میں تحریر فرماتے ہیں " يجب علي العامی و غيره من لم يبلغ مرتبۃ الاجتهاد التزام مذهب معين من مذاهب المجتهدين " یعنی واجب ہے عامی اور غیر عامی پر جو کہ درجہ اجتہاد کو نہ پوچھا ہو مجتہدین کے مذاہب میں سے ایک مذہب معین کو عمل کے لیے اپنے اوپر لازم کر لینا ( فتوی رحیمیہ) -

        (٣) شارح مسلم شیخ محی الدین نووی رح (روضۃ الطالبین) میں تحریر فرمائی ہیں " اما الاجتہاد المطلق فقالو ١ختتم  با الائمۃ الاربعه حتى اوجبوا تقليد واحد من من هؤلاء على امته ونقل امام الحرمين الاجماع عليه " یعنی اجتہاد مطلق کے متعلق علماء فرماتے ہیں کہ ائمہ اربع پر ختم ہو گیا حتیٰ کہ مقتدر محققین علماء نے ان چار اماموں میں سے ایک ہی امام کی تقلید کو امت پرواجب فرمایا ہے اور امام الحرمین نے اس پر (ائمہ اربعہ ہی کی تقلید کے واجب ہونے ) پر اجماع نقل کیا ہیں  (فتاوی رحمیہ) -

       (٤) امام ابراہیم سرخسی مالکی مرعى رح الفتوحات الوهبيه شرح اربعین نوويۃ  میں تحریر فرماتے ہیں " اما في ما بعد ذلك كما قال ابن ا الصلاح فلا یجوز تقلید غیر الائمۃ الاربعۃ مالک و ابی حنیفۃ والشافعی واحمد لان ہؤلاء عرفت قواعد مذاہبہم واستقرت احکامہا  وخدمها تابعوہم و حرروها فرعا فرعا وحكما حكما " یعنی اس زمانہ کے بعد (صحابہ کے دور کے بعد) جس طرح کے ابن صلاح نے بھی کہا ہے ائمہ اربعہ امام مالک رضی اللہ امام ابو حنیفہ امام شافعی امام احمد بن حنبل کے سوا کسی کی تقلید جائز نہیں اس لیے کہ ائمہ اربعہ کے مذاہب کے قواعد معروف ہیں اور ان کے احکام مستقر ہو چکے ہیں اور ان حضرات کے تابع اداروں نے ان کے بعد ان مذاہب کے خدمت کی ہے اور تمام احکام کو فرعا فرعا لکھ دیا ہے  اور ہریک کا بھی بیان کردیا ہے  (فتاوی رحیمیہ  جلد -١)

        (٥) شاہ ولی اللہ محدث دہلوی حجۃ اللہ البالغہ میں تحریر فرماتے – " وفی ذالک (ای التقلید) من المصالح ما لا یخفی لا سیما فی ھذہ الایام التی قصرت فیھا الھمم  جدا  او اشربت النفوس الھواء واعجب کل ذی رای رآیہ "  ترجمہ : اور اسمیں ( یعنی مذاہب اربعہ میں سے کسی ایک کی تقلید کرنے میں) بہت سی مصلحتیں ہیں  جو مخفی نہیں ہے ۔ خاص کر اس زمانہ میں جب کہ ہمتیں بہت پست ہوگئی ہیں اور نفوس میں خوہشات نفسانی سرایت کر گئی ہیں اور ہر رائے والا اپنی اپنی رائ پر ناز کرنے لگا ہے ۔ اور "عقد الجید " میں تحریر فرماتے ہیں " باب تاکید الا خذ بمذہب الاربعۃ والتشدید فی ترکھا والخروج عنھا اعلم ان  فی الا خذ بھذہ المذاہب الا اربعۃ مصلحۃ عظیمۃ فی الاعراض عنھا کلھا مفسدۃ کبیرۃ " یعنی ان چار مذہبوں کے اختیار کرنے کی تاکید اور انکو چھوڑنے اور انسے باہر نکلنے کی ممانعت شدیدہ کی بیان میں (اعلم) جننا چاہئے کہ ان چاروں مذہبوں کے اختیار کرنیمیں ایک بڑی مصلحت ہے اور سب سے اعراض اور روگردانی میں بڑا مفسدہ ہے ( الجوالہ فتاوہ رحیمہ جلد- ١)

       (٦) فقیہ العصر علامہ مفتی رشید احمد صاحب ؒ تحریر فرماتے ہیں " تقلید شخصی کا وجوب" – واجب کی دو قسمیں ہیں – لعینہ ولغیرہ – واجب لغیرہ کا مطلب یہ ہے کہ خود اس کام کے تاکید شریعت نے نہ کی ہو  مگر شریعت نے جن امور کو واجب قرار دیا ہو انکی تعمیل بدون اسکے عادۃ ناممکن ہو۔ اسلئے یہ امر بہی واجب ہوگا ۔ "لان مقدمۃ الواجب واجب" جیسے قرآن وحدیث کے جمع  و کتابت کی شرعیت میں کہیں تاکید وارد نہیں ۔ مع ہذا اسے واجب کہا جاتا ہے۔ اسی طرح تقلید شخصی واجب لغیرہ ہے کیونکہ تقلید شخصی کے ترک میں ایسے مفاسد ہیں کہ انسے احتراز واجب ہے (احسن الفتاوی -٤١٣)

          مذکورہ تمام دلائیل سے یہ بات روز روشن کی طرح واضح اور ظاہر ہوگئی کہ کسی مجتہد امام کی تقلید کرنا ہر غیر مجتہد مسلمان کے لئے اپنی ایمان اور عمل کی صیانت وحفاظت کے لئے لازم وضروری ہے  ورنہ لا علمی کی وجہ سے خواہشات نفسانی میں مبتلا ہو کر دنیا اور اخرۃ تباہ و برباد ہو جائےگا – واللہ اعلم بالصواب ۔



===============

যে সকল আলেমগণ সঠিক পথের দিশারী কমিটির উদ্যোগে আগামী ২ মারচ "মাযহাব কি ও কেনো?" শিরোনামের সেমিনারে লেখনী সহ অংশগ্রহণ করবেন বলে কনফার্মেশন দিয়েছেন তাদের নাম-
 মউলানা তাহমিদুল মউলা, ঢাকা।
 মউলানা মুফতী নোমান কাছিমি, ঢাকা।
 মউলানা আব্দুল বাসিত ক্কাছিমি, বদরপুর।
 মউলানা আসহাব উদ্দিন, রাতাবাড়ি।
মউলানা জয়নুল হক, রাতাবাড়ি।
মউলানা আলিম উদ্দিন, বাশকান্দি।
মউলানা মশরুর আহমেদ, ফকিরবাজার।
মউলানা ফকরুল ইসলাম, বদরপুর।
মউলানা জামাল উদ্দিন, রাতাবাড়ি।
মউলানা ফয়সল আহমেদ, রাতাবাড়ি।
মউলানা সুহেইল আহমেদ, ইটখলা।
মউলানা আব্দুল অদুদ, শান্তিপুর।
মউলানা আব্দুল মুহিব চৌধুরী, বোয়ালিপার।
মউলানা মোস্তাক আহমেদ,বোয়ালিপার।
মউলানা আশরফ, বাশকান্দি।
মউলানা মাশুক উদ্দিন, জামিরা।
মউলানা নিয়াজ উদ্দিন, বদরপুর।
মউলানা সফিউল্লা, আলগাপুর।
মউলানা সাইফুল হক, রাতাবাড়ি।
মউলানা আয়ুব আলী, রতনপুর।
মউলানা আবু তালহা, জামিরা।
মউলানা বশির আহমেদ, মনাছড়া।
মউলানা মিসবাউজ্জামান, পাচগ্রাম।
মউলানা বিলাল আহমেদ, নীলাম বাজার।
মউলানা কমরুল হুদা, বেরেংগা।
মউলানা আব্দুল অদুদ,মুহাদ্দিছ, শান্তিপুর।
মউলানা আবু বক্কর,  শান্তিপুর।
মউলানা নূরূল ইসলাম,  শান্তিপুর।
মউলানা আবুল হুসেন, আলমমতাজ।
মউলানা আব্দুল হামিদ, জামিরা
মউলানা আবু তায়িব ইকরামা, নারাইনপুর।
মউলানা আলি আহমেদ, জামিরা।
মউলানা এসাম উদ্দিন, শ্রীগৌরী।
মউলানা আব্দুস সাত্তার চৌধুরী, জানকি বাজার।
মউলানা জালাল আহমেদ, আলগাপুর,।
মউলানা আব্দুস শাকুর, নারাইনপুর।
মউলানা  ফয়জুর রাহমান, পাঞ্চগ্রাম।

Thursday 14 February 2019

সুনাপুরস্ত খানকাহ থেকে অসুস্থ হয়ে গত কল্য বাড়ীতে এলাম । সকলের কাছে দুওয়া প্রার্থী যেন তাড়াতাড়ি সুস্থতা ফিরে পাই ।