Saturday 22 June 2019

*মুহাম্মদ মুরসি : একজন মহানায়কের জীবনের খতিয়ান*

*মুহাম্মদ মুরসি : একজন মহানায়কের জীবনের খতিয়ান*

*ইফতেখার, জামিল*

মুহাম্মদ মুরসি। মিশর ও আরবের জনগণ মাঠে-ময়দানে যাঁর নামে বারবার শ্লোগান দিয়েছেন। রাজনীতি ও ইতিহাসের পাতা থেকে যাঁর নাম কখনো মুছে ফেলা যাবে না। যিনি রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে কারাগারে গিয়েছেন। একাকী সেলে বন্দী ছিলেন দীর্ঘদিন। এবং গতকাল প্রতারক বিচারকদের সামনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি থেকে আধুনিক মিশর ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম জননেতা হিসেবে কারাগারেই ইন্তেকাল করলেন।

*প্রাথমিক, জীবন*

মুহাম্মদ মুরসি ইসা আইয়াত ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে উত্তর মিশরের শারকিয়া জেলার আদওয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামে থাকতেই হিফজ শেষ করেন এবং সেখানেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য মিশরের রাজধানী কায়রোতে আসেন এবং কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক ও ১৯৭৮ সালে একই বিষয়ে সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। এ বছরই তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। ১৯৮২ সালে ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ক্যালিফোর্নিয়াতে মুহাম্মাদ মুরসির প্রকৌশল বিষয়ে গবেষণা শেষ হয় এবং তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

*কর্মজীবন*

স্নাতক শেষ করে তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৫-৭৬ সালে মিশর সেনাবাহিনীতে সেবা দান করেন। ১৯৮২ সালে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, নর্থরিজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৮৫ সালে শারকিয়া প্রদেশের যাকাযিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপনার চাকরি ছেড়ে মিশরে চলে আসেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি ২০১০ পর্যন্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া লিবিয়ান ফাতেহ বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন।

*আদর্শিক ও রাজনৈতিক, জীবন*

ছাত্রজীবন থেকেই মুহাম্মদ মুরসি ইসলামি ধারা গ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালে ইখওয়ানুল মুসলিমিনে যোগ দেন। শুরু থেকেই মুহাম্মদ মুরসি ইখওয়ানের সাংগঠনিক কাঠামোর সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৯২ সালে ইখওয়ান রাজনৈতিক শাখা গঠন করলে শুরু থেকেই এর সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন এবং পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ কমিটির সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। এর পাশাপাশি মুহাম্মদ মুরসি সবসময় সামাজিক ও সেবামূলক কাজে জড়িত ছিলেন। ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন।

২০০০ সালে মুহাম্মাদ মুরসি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাংগঠনিকভাবে তিনি ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সদস্য হলেও, নির্বাচনে তাঁকে ইখওয়ানের অন্যান্য নেতাদের মতো আইনত স্বতন্ত্রভাবে লড়তে হয়, কারণ হোসনি মুবারাকের শাসনামলে মুসলিম ইখওয়ান মিশরের প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ছিল। সংসদীয় মেয়াদে তিনি তাঁর ধারার নেতা হিসেবে দায়িত্তপ্রাপ্ত হন এবং সংসদে ভুমিকার জন্য বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন। বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন। এর মধ্যে ২০০৬ সালে বিচারক নিয়োগে অনিয়মের প্রতিবাদে ডাকা বিক্ষোভ থেকে তাঁকে আটক করা হয় এবং প্রায় সাত মাসের মতো তিনি বন্দী ছিলেন।

*আরব, বসন্ত*

২০১১ সালের ২8 জানুয়ারি অপর ২৪ ইখওয়ান-নেতার সাথে মুরসিও গ্রেপ্তার হন। দুই দিন পর তিনি কায়রোয় জেল থেকে পালিয়ে যান। দুর্গম ওদিউন নাতরুন কারাগার থেকে পলায়নের ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। মিশরের তৎকালীন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে কারাপ্রহরীরা পলায়ন করলে স্থানীয় জনতা তাঁদেরকে মুক্ত করেন। সিসি ক্ষমতা দখলের পর মুরসিকে এই ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

*মিশরের,রাষ্ট্রপতি,নির্বাচন ২০১২*

মূলত দলীয় উপনেতা ও রাজনৈতিক প্রধান খাইরাত এল-শাতেরই ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের মূল রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। কিন্তু একটি আদালত প্রচারণা শুরুর আগে শাতের-সহ একাধিক প্রার্থীকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করলে ইখওয়ানের রাজনৈতিক শাখা-পক্ষ থেকে প্রার্থী হিসেবে মুহাম্মাদ মুরসির নাম উঠে আসে, যিনি মূলত সংগঠনটির দ্বিতীয় মনোনয়ন ছিলেন। পরে ইখওয়ানের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিজ পার্টি মুরসিকে তাদের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে।

ইখওয়ানের এক দলত্যাগী জনপ্রিয় নেতার অংশগ্রহণ সত্ত্বেও মুহাম্মাদ মুরসি ২৩ মে, ২০১২-এর নির্বাচনে ২৫.৫ শতাংশ ভোট পান, যা ছিল সর্বোচ্চ। প্রথম পর্বের পর মুহাম্মাদ মুরসি এবং আহমেদ শফিক দ্বিতীয় পর্বের চূড়ান্ত ভোটাভুটির জন্য মনোনীত হন। দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনের আগে মুহাম্মাদ মুরসি মিশরের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহমেদ শফিকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান।

মুরসির রাজনৈতিক দল আহমেদ শফিককে, যিনি সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এবং হোসনি মুবারাকের অধীনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, ক্ষমতাচ্যুত মুবারাকের রক্ষাকর্তা হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রচার করে এবং বলে শফিক নির্বাচিত হলে মিশরের ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসন নতুন জীবন পাবে। ২৪ জুন ২০১২ তারিখে মুরসিকে দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচনে জয়ী, অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। এর পরপরই মুরসি ইখওয়ান ও ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি থেকে আনুষ্ঠানিক অব্যাহতি গ্রহণ করেন।

*প্রতিবিপ্লব*

এক বছর যেতে না যেতেই মুরসি সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবদুল ফাত্তাহ সিসি মুরসির বিরুদ্ধে অনাস্থা জানান এবং সাময়িকভাবে সংবিধান স্থগিত করা হয়। বিচারপতি আদলি মনসুর অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। জনবিক্ষোভের অজুহাতে সামরিক বাহিনী মুরসির সরকারকে বরখাস্ত করে।

মুরসিকে আটক করে অজানা স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক মাস পর তাঁকে আদালতে হাজির করে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করা হয়। যার মধ্যে কারাগার থেকে পলায়ন ও হামাসের সাথে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ অন্যতম। এ দুটো অভিযোগে তাঁকে ২০১৫ সালে যথাক্রমে ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

*মৃত্যু*

গতকাল (১৭ জুন ২০১৯, সোমবার) তাঁকে আদালতের সামনে হাজির করা হয়। তিনি আদালতের কাছে বক্তব্য দানের অনুমতি চান। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে গোপন কিছু তথ্য আছে, মিশরের নিরাপত্তার কথা ভেবে তা আমি প্রকাশ করছি না।’ বক্তব্য দানের মাঝপথে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বিরতিতে চলে যাওয়া হয়। বিরতির সময়েই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়েন। আসামী সেলে তিনি একাই ছিলেন। পাশের সেল থেকে চিৎকার চেচামেচি শুরু করা হয়। আধা ঘণ্টা পর উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবেই একজন মহামানবের জীবনের সমাপ্তি ঘটে ।

Saturday 15 June 2019

বিবাহের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাইতুল্লাহর সাবেক ইমাম শাইখ সালিহ আলে তালিব এর ঐতিহাসিক খুৎবাহটির অনুবাদ৷
============================
মূলঃ শাইখ সালেহ আলে-তালিব (হাফিযাহুল্লাহ)
অনুবাদঃ Rashid Ahmad Qasemi (সাল্লামাহুল্লাহ)
খুৎবাহটির হুবহু অনুবাদ তুলে ধরছি, শাইখ হামদ-সালাতের পর বলেন,
বর্তমানে বিবাহের কথা হল সবচেয়ে কষ্টের কথা, আজকের এই খুৎবাহতে গোটা বিশ্বের মুসলমানদের কল্যাণকামনায় এবং সতর্কতার লক্ষ্যে; বিবাহের এমন কিছু বাহ্যিক কারণ আলোচনা করব যে গুলো বিবাহকে বাধাগ্রস্ত করে মুসলিম উম্মাহ'র গোটা জীবনযাত্রায় চরম অশোভনীয় প্রভাব ফেলছে৷

তন্মধ্যে ছেলে-মেয়ে উভয়ের বিবাহ বিলম্বের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে কারণটি আমরা দেখি তা হল, ছেলে-মেয়ের একাডেমিক পড়াশোনা শেষ না হওয়া, অথবা পড়াশোনা শেষ হয়েছে কিন্তু ভাল চাকরি না থাকার অজুহাত করা; অথবা আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী না হওয়ার অজুহাত করা; অথবা কম বয়সে বিবাহ করে ফেললে লোকে কি বলবে? এই খোড়া অজুহাত গুলো দাঁড় করিয়ে বিবাহ বিলম্ব করা হয় বর্তমান সমাজে৷
#এই_সব_গুলো_অজুহাত_হল_শয়তানের_সূক্ষ্ম_অপকৌশল_চক্রান্ত_ও_পরিস্কার_ধোঁকা_ষড়যন্ত্র ৷

বর্তমান সময়ে শয়তান, বিভিন্ন অশ্লিল ফিল্ম ও নাটকের সিরিয়াল, বিভিন্ন অশ্লিল চ্যানেল, ম্যাগাজিন, মাসিক পত্রিকা, পর্ণোগ্রাফীর অশ্লিলতার মাধ্যমে মানুষের দেমাগ বিশেষ করে যুবকদের দেমাগকে ধোলাই করে বিবাহ থেকে অনাগ্রহ সৃষ্টি করছে৷
এই সমস্ত কারণে মানুষের চারিত্রিক নৈতিকতা আজ ধ্বংস হয়ে সর্বক্ষেত্রে বিরাট অমঙ্গল, অশান্তি বিরাজ করছে৷

ইখওয়াতাল ঈমান!
বিবাহ বিলম্ব করা যেমন স্বভাগত নিয়ম পরিপন্থী ঠিক তেমনি শরঈ ভাবেও সুন্নাহ পরিপন্থি ৷
সমস্ত সমাজ-বিজ্ঞানীগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন, যে বিবাহের উপযুক্ত সময় হল প্রাপ্ত বয়স্ক হতেই দেরী না করে দ্রুত বিবাহ করে ফেলা৷ যা বর্তমান সমাজে খুবই কঠিন ব্যপার৷
এবং আত্মিক ও শারিরিকভাবে সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে অল্প বয়সে বিবাহ করা৷
এবং অল্প বয়সে বিবাহ করলে মেধা শক্তি, মনোবল, শারিরিক সুস্থতা, অনেক অনেক বেড়ে যায়৷

এছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, দ্রুত বিবাহের ফলে দ্বীনের পূর্ণাঙ্গতা লাভ হয়, ও চারিত্রিক অবক্ষয় থেকে নিজেকে হেফাযত করা যায়, বিশেষ করে যৌবনের শুরু থেকেই চারিত্রিক নির্মলতা অর্জিত হয়৷

কিন্তু আফসোসের কথা হল, ,এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতটিতে যখন বিভিন্ন অজুহাতে বাধা তৈরী করা হল সাথে সাথে পুরো সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিভিন্ন অন্যায়, অনিষ্টতা ঢুকে গেল৷
বিবাহ যদিও সামাজিক একটি বন্ধন কিন্তু তা শুধু সামাজিক নয় বরং আল্লাহ তাআলার অনেক বড় একটি হুকুম ও নবী সঃ এর সুন্নাতও, তাই এই সুন্নাতটি আদায় করতে গিয়ে সামাজিকতার প্রতিবন্ধকতায় আটকে না থেকে আল্লাহর উপর ভরসা করে বিবাহ করে ফেলা উচিত, আল্লাহ বলেন,
وَأَنكِحُوا۟ ٱلْأَيَٰمَىٰ مِنكُمْ وَٱلصَّٰلِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَآئِكُمْ إِن يَكُونُوا۟ فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضْلِهِۦ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ
অর্থঃ তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
সূরা আন নূর আয়াত: ৩২

তিরমিযী শরীফে আছে,
রাসূল সঃ বলেন,
ثلاثة حق على الله عونهم المجاهد في سبيل الله والمكاتب الذي يريد الأداء والناكح الذي يريد العفاف.
অর্থ, আল্লাহ্ তা‘আলা তিন প্রকার মানুষকে সাহায্য করা নিজের কর্তব্য হিসাবে নির্ধারণ করেছেন।
১৷ আল্লাহ্ তা‘আলার পথে জিহাদকারী,
২৷ মুকাতাব গোলাম- যে চুক্তির অর্থ পরিশোধের ইচ্ছা করে,
৩৷ এবং বিবাহে আগ্রহী লোক, যে বিয়ের মাধ্যমে পবিত্র জীবন যাপন করতে চায়৷
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৫৫

কিছু চরম মূর্খ পরিবার রয়েছে যারা মেয়ের মোহর এত বেশী পরিমাণে ধার্য করে, যেন এটি বাজারের একটি পণ্য, যে যত বেশী লাভ আর দরাদরি করে বিক্রি করতে পারে!

এর বিপরিতে এমন কিছু গুণী পরিবার রয়েছে যারা মেয়ের মোহর কম ধার্য করে এমন ছেলে তালাশ করে যে মেয়ের জন্য দ্বীনদারির ক্ষেত্রে সহযোগী হিসাবে থাকবে,
এটাই হল আসল তাকওয়া ও সুন্নাত, রাসূল সঃ বলেন,
إن من يمن المرأة تيسير خطبتها وتيسير صداقها.
সবচেয়ে লক্ষী মেয়ে হল, যার বিবাহের কাজ ঝামেলামুক্ত ও মোহর কম হয়৷
(মুসনাদে আহমদ ২৪৬০৭)
আরেক হাদীসে আছে,
إِنَّ أَعْظَمَ النِّكَاحِ بَرَكَةً أَيْسَرُهُ مَئُونَةً
সবচেয়ে বরকতময় বিবাহ হল, যে বিবাহের মোহর কম৷
(মুসনাদে আহমাদ ২৪৫২৯)

কিন্তু বর্তমান সমাজে মোহর মহামারির আকৃতি ধারণ করেছে, মেয়ে পক্ষ সাধ্যের বাহিরে মোহর নির্ধারণ করে (যা নিতান্তই লোভ ও নির্ভেজাল নিম্ন মন-মানুষিকতার পরিচয়) আর ছেলে এই মোহর আদায় করতে গিয়ে ঋণ করে এবং বিভিন্ন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে৷

বেশী মোহরের লোভে লম্বা সময় মেয়েরা ঘরে পড়ে থাকতে থাকতে এক সময় দেখা যায় আইবুড়ো মেয়ে দিয়ে ঘর ভরে গেছে৷
এর কুফল পরবর্তীতে এতই ছড়িয়ে পড়ে যে, এই সমস্ত প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েরা নিজেদের যৌবনের চাহিদা মেটাতে গোপনে চাচাতভাই, ফুফাতভাই, মামাতভাইদের সাথে ফিজিক্যালী অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে৷ যা মারাত্মক অপরাধ, গোনাহ৷

বিবাহের ক্ষেত্রে অভিবাবকদের উচিত, ছেলে-মেয়ে উভয়ের পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া৷ কোনো দ্বীনী প্রতিবন্ধকতা না থাকলে অভিবাববকের উপর আবশ্যক হল, সন্তানের খুশী মত বিয়ে দিয়ে দেওয়া, পারিবারিকভাবে অন্যত্র বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি না করা৷
এই সম্পর্কে সহীহ বুখারী মুসলিমে অনেক হাদীসও রয়েছে৷

শাইখুল ইসলাম ইবনিয়া তাইমিয়া রহঃ বলেন,
 ليس لأحد الأبوين أن يلزم الولد بنكاح من لا يريد، حتي أنه إذا امتنع فلا يكون عاقا
ছেলে যাকে বিবাহ করতে চাই তাকে বিয়ে করতে বাধা দেওয়ার বা ছেলে যাকে বিয়ে করতে চায়না তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করা, পিতা-মাতা কারো এই অধিকার নেই, এই ক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ে যদি পিতা-মাতার কথা অমান্য করে তাহলে হাদীস অনুযায়ী সেই সন্তান পিতা-মাতার অবাধ্য বলে বিবেচিত হবে না৷

ঠিক ঐরকমভাবে মাতা-পিতার জন্য মেয়েকে টাকাওয়ালা বা প্রভাবশালী ছেলের সাথে ধন-সম্পদের লোভে বিয়ের জন্য বাধ্য করা পরিস্কার যুলুম ও হারাম৷

সুতরাং অভিবাবকদের উচিত, বিবাহের ক্ষেত্রে সম্পদের লোভে কোনো অন্যায় ও সীমালঙ্ঘন না করা৷ বিবাহ একটি আমানত, এই আমানতকে কোনো লোভে পড়ে নষ্ট করা হারাম৷
এমন অনেক অভিবাবক আছে যারা নিজের সতীসাধি চরিত্রবান নামাযী, মুত্তাকী মেয়েকে টাকার লোভে ফাসেক, বেনামাযী, চরিত্রহীন, নেশাখোর, লম্পট, লুচ্ছা ছেলেদের সাথে টাকার লোভে বিয়ে দিয়ে মেয়ের জীবনটাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়, অথচ মেয়ের কোনো দোষ নেই, সম্পূর্ণ দোষ অভিবাববকের যা সুস্পষ্ট হারাম৷

আর ছেলে-মেয়েদেরও উচিত বিবাহের ক্ষেত্রে মাতা-পিতা কিছু কল্যাণ মনে করলে তা সাদরে মেনে নেওয়া৷

আমরা মুসলমান হিসাবে আমাদের উচিত, বিবাহের ক্ষেত্রে কেবল দ্বীনদারিকেই প্রাধান্য দেওয়া, রাসূল সঃ বলেন,
إذا جاءكم من ترضون دينه وخلقه فأنكحوه إلا تفعلوا تكن فتنة في الأرض وفساد ‏"‏ ‏.‏ قالوا يا رسول الله وإن كان فيه قال ‏"‏ إذا جاءكم من ترضون دينه وخلقه فأنكحوه ‏"‏ ‏.‏ ثلاث مرات ‏.
 তোমরা যে লোকের দ্বীনদারী ও নৈতিক চরিত্রে সন্তুষ্ট আছ, তোমাদের নিকট যদি সে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তবে তার সাথে (তোমাদের পাত্রীর) বিয়ে দাও। তা না করলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিছু (ক্রটি) তার মাঝে থাকলেও কি? তিনি বললেনঃ তোমাদের নিকটে যে লোকের দ্বীনদারি ও নৈতিক চরিত্র পছন্দ হয় সে লোক তোমাদের নিকট বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সাথে বিয়ে দাও। (বর্ণনাকারী বলেন) একথা তিনি তিনবার বললেন।
(জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১০৮৫)

বর্তমান সমাজে সবাই বিবাহে দুনিয়াবী যত শর্ত আছে তা খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে কিন্তু কেউ দ্বীনদারিকে প্রাধান্য দেয়না৷
অথচ, বুখারী মুসলিমে আছে রাসূল সঃ বলেন,
تنكح المرأة لأربع لمالها ولحسبها وجمالها ولدينها فاظفر بذات الدين تربت يداك.
চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দীনদারী। সুতরাং তুমি দীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০৯০,  মুসলিম, হাদিস নং ৩৫২৭)

জেনে রাখুন! যারা দ্বীনদারিকে খাটো করে বাকি গুণাগুণ খুব যাচাই বাচাই করে বিবাহ করবে তারা কখনও দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পারবে না৷

বর্তমানে বিবাহ কঠিন হওয়ার দরুন নারী-পুরুষের অবাদ মেলামেশা, গায়ক- গায়িকাদের বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে অশ্লিল গান পরিবেশনা, বিনোদনের নামে নর্তকীদের নগ্ন দেহ প্রদর্শন, এই সব গোনাহের কাজে যুবক যুবতীরা জড়িয়ে পড়ছে, অথচ, সবগুলোই আল্লাহর সাথে মারাত্মক নাফরমানী করার শামিল৷
বিবাহ করে এই সমস্ত বিনোদন, মজা পাওয়া যায় না? অবশ্যই পাওয়া যায়, তাহলে বিবাহ করা ছাড়া কেন যুবসমাজ এই সমস্ত অপরাধের সাথে জড়াচ্ছে? যে গুলো দেশ ও জাতীকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছে, এবং যমীনী, আসমানী শাস্তি অবতীর্ণ হচ্ছে ৷
আল্লাহ সবাইকে বিবাহ করার এবং সমস্ত গোনাহ থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করুন, আমীন৷

এরপর শাইখ নিচের এই আয়াতটি পড়ে তার খুৎবাহ শেষ করেন৷
أَفَمَنْ أَسَّسَ بُنْيَٰنَهُۥ عَلَىٰ تَقْوَىٰ مِنَ ٱللَّهِ وَرِضْوَٰنٍ خَيْرٌ أَم مَّنْ أَسَّسَ بُنْيَٰنَهُ عَلَىٰ شَفَا جُرُفٍ هَارٍ فَٱنْهَارَ بِهِ فِى نَارِ جَهَنَّمَ وَٱللَّهُ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلظَّٰلِمِينَ
অর্থঃ আচ্ছা! যে ব্যক্তি তার ভিত্তি গড়েছে আল্লাহ্‌র প্রতি ধর্মনিষ্ঠতা ও সন্তষ্টির উপরে সে ভালো, নাকি যে ব্যাক্তি স্বীয় গৃহের ভিত্তি রেখেছে কোন গর্তের কিনারায় যা ধ্বসে পড়ার নিকটবর্তী, অতঃপর তা তাকে নিয়ে দোযখের আগুনে পতিত হয়। আর আল্লাহ জালেমদের পথ দেখান না।
সূরা আত-তাওবাহ্‌ (التوبة), আয়াত: ১০৯

আল্লাহ তাআলা শাইখকে জালিমের কারাগার থেকে মুক্তি দান করুন, এবং যুবসমাজকে শাইখের কথা গুলো অনুধাবন করে আমল করার তাওফীক দান করুন, আমীন৷

কপি করা হয়েছে ।