Thursday 21 November 2019

শিশুর নামাজের বয়স সাত বছর কেন ?

শিশুর নামাজের বয়স সাত বছর কেন ?

আবু বকর সিরাজী

শিশুরা বড়দের অনুকরণ করতে চায়। এ কারণে দেখা যায়, তারা সতীর্থদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে যেতে এবং বড়দের মতো মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করতে আগ্রহী থাকে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, সাত বছর বয়স হলে শিশু জাগতিক বিষয়গুলো অনুধাবন, অনুসরণ ও উপলব্ধি করতে শেখে। যুক্তরাজ্যের শিশুদের অর্থচিন্তা নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণা করেছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তারা বলেছেন, টাকার উৎস ও ক্ষমতা সম্পর্কে শৈশবের উপলব্ধিই একজন মানুষের পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন আর্থিক সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। তারা গবেষণা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হন যে, সাত বছর বয়সী অধিকাংশ শিশু টাকা গুনতে পারে এবং এটি উপার্জনের গুরুত্ব বোঝে। সংশ্লিষ্ট গবেষক ডেভিড হোয়াইটব্রেড বলেন, মা-বাবা, শিক্ষক ও অন্যদের কাছ থেকে শৈশবে অর্জিত ধারণাগুলো মানুষের ভাবনা ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে সারা জীবনই ঘুরেফিরে প্রভাব বিস্তার করে। অর্থচিন্তার বিষয়টি এসবের মধ্যে অন্যতম।'

সুতরাং এ গবেষণা অনুযায়ী একটি শিশু যেহেতু এ বয়সে জাগতিক বিষয়ের ওপর মৌলিক ধারণা গ্রহণ করতে থাকে, তাই এ সময় তাকে সর্বপ্রথম আখেরাতের জ্ঞানদান করা এবং নামাজিরূপে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ শুরু করা উচিত। রাসুল (সা.) মানবসত্তার বিকাশের স্তর ও সময় মেপেই সাত বছর বয়স থেকে তাদের নামাজ পড়ার আদেশ এবং ১০ বছর বয়সে প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার আদেশ করেছেন। সন্তানকে সুশিক্ষা ও দ্বীন শিক্ষা দেয়া, নামাজি হিসেবে গড়ে তোলা নিঃসন্দেহে অনেক কঠিন কাজ। অনেক মা-বাবা সন্তানকে সুশিক্ষা এবং দ্বীন শেখাতে না পারার পরবর্তী পরিণতি নিয়ে আফসোস, আক্ষেপ এবং কান্নাকাটি করে থাকেন। তাই যদি শুরুতেই সফল পদ্ধতি অবলম্বন করা যায় তবে অধিক ইতিবাচক ফল পাওয়া সম্ভব।

সন্তানের মধ্যে নামাজ ও দ্বীন শিক্ষার বিস্তৃতির জন্য সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে মা-বাবা নিজেরা নামাজের ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নবান হওয়া। নামাজের যাবতীয় রোকন, শর্ত উত্তমভাবে আদায় করা, অজু-গোসল যত্নের সঙ্গে করা এবং তা সন্তানের সামনে করা। বিশেষ করে বড় সন্তানকে এ বিষয়গুলো শেখানো। কেননা ছোটরা তার অনুসরণ করবে। ফলে পরবর্তী সময় মা-বাবার কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। কেননা ছোটরা তোতা পাখির মতো বড় ভাইবোন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবকিছু শেখার চেষ্টা করে। সুতরাং তারা নামাজ ও দ্বীনি বিষয়ে যত্নবান হলে ছোটরাও যত্নবান হবে।

আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার। এ কাজগুলো শুধু দায়িত্ব ও করণীয় মনে করে করা ঠিক নয়। বরং এতে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অশেষ সওয়াব, বিনিময় এবং ভবিষ্যৎ বংশধরকে দ্বীনের ওপর অটল ও টিকিয়ে রাখার অপরিসীম নেকি। এসব বিষয় মাথায় রেখে সন্তানের নামাজ এবং দ্বীন শিক্ষাদানের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখলে তাদের জন্য তা শেখা সহজ হবে এবং মা-বাবা এভাবে ভালো ফল লাভ করবেন।

Ref: আলোকিত বাংলাদেশ।

2 comments: