Wednesday 21 October 2020

নবীজী ﷺ এর জন্ম ও মৃত্যুর বিশুদ্ধ তারিখ

 *নবীজী ﷺ এর জন্ম ও মৃত্যুর বিশুদ্ধ তারিখ*


আমরা শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মত। তাই আমাদেরকে তাঁর জন্ম ও মৃত্যুর সঠিক তারিখ জানা উচিত। নির্ভরযোগ্য ইতিহাসবেত্তাদের উদ্ধৃতির আলোকে আমরা নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম ও মৃত্যুর সঠিক তারিখ নির্ণয়ের চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।


নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখঃ


নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের নিকট মতানৈক্য রয়েছে। তবে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের কোনো এক সোমবার হয়েছে, এ ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য সকল ইতিহাসবিদ উলামায়ে কেরাম একমত। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/২৮২)


জন্ম তারিখ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের বর্ণনা পাওয়া যায়। নিম্নে বর্ণনাগুলো উল্লেখ করা হলোঃ


১.রবিউল আউয়াল এর দুই তারিখ।

২.রবিউল আউয়াল এর আট তারিখ।

৩.রবিউল আউয়াল এর দশ তারিখ।

৪.রবিউল আউয়াল এর বার তারিখ।

৫.রবিউল আউয়াল এর সতের তারিখ।

৬.রবিউল আউয়াল এর আট দিন বাকী থাকতে।

৭.রমযান মাসের বার তারিখ। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/২৮২)


এসব বর্ণনার মধ্য থেকে হাফেজ ইবনে কাছির রহ. ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ এর মধ্যে ‘দুই’ ‘আট’ ও ‘বার’ তারিখের কথা গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন। তাই আমরা শুধু এই তিনটি তারিখ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। ইনশাআল্লাহ।


আর মুহাম্মাদ বিন সাআদ রহ. ‘তবাকাতুল কুবরা’ নামক গ্রন্থে দুই ও দশ তারিখের মতকে গ্রহণ করেছেন। বার তারিখের মতটি প্রসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এ মতটির আলোচনা তাঁর কিতাবে স্থান পায়নি। দুই ও দশ তারিখের পক্ষে পেশ কৃত তার দলীলসমূহ সনদসহ উল্লেখ করা হলোঃ


দুই তারিখের দলীলঃ 


قال محمد بن سعد اخبرنا محمد بن عمربن واقد الاسلمى الواقدى قال: كان ابومعشر نجيح بن عبد الرحمن المدنى يقول: ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم الاثنين لليلتين خلتامن شهر ربيع الاول.


‘ইবনে সাআদ তার উস্তাদ ওয়াকেদী এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আবূ মা‘শার আল-মাদানী বলতেন, রবিউল আউয়াল মাসের দুই তারিখ সোমবার নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্ম গ্রহণ করেছেন।’ (তবাকাতে ইবনে সাআদ ১/৪৭)


এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল, এ বর্ণনার রাবী ওয়াকেদী ও তার উস্তাদ আবূ মা‘শার উভয়েই ‘যয়ীফ’। রিজাল শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ ইমাম হাফেজ ইবনে হাজার আসকলানী রহ. ওয়াকেদী সম্পর্কে বলেনঃ متروك مع سعة علمه ‘প্রশস্ত জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি পরিত্যাজ্য।’ তাকরীবুত তাহযীব পৃ.৪৯৮) আর আবূ মা‘শার সম্পর্কে বলেছেনঃ ضعيف ‘সে যয়ীফ’ (তাকরীব পৃ. ৫৫৯)


অতএব দুই তারিখের বর্ণনাটির বর্ণনাকারীরা মাতরুক ও যয়ীফ হওয়ায় এমতটি গ্রহণ করা গেল না।


দশ তারিখের দলীলঃ 

দশ তারিখের দলীলের সূত্রেও ওয়াকেদী রয়েছেন। তাই দশ তারিখের দলীলটিও মাতরুক বিবেচিত হবে। (তবাকাতুল কুবরা ১/৪৭)


আট তারিখের দলীলঃ

জেনে রাখা উচিত যে, হস্তি বাহিনী যে বছর মক্কায় হামলা করেছিল সেবছরই রবিউল আউয়াল মাসে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হয়। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সকল ইতিহাসবিদ উলামায়ে কেরাম একমত।


ইবনে কাছীর রহ. বলেনঃ


قال ابن اسحاق: وكان مولده عليه السلام عام الفيل وهذا هو المشهور عند الجمهور. قال ابراهيم بن المنذر الحزامى: هو الذى لايشك فيه احدمن علمائنا انه عليه السلام ولد عام الفيل.


‘ইমামুল মাগাযী ইবনে ইসহাক বলেছেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হস্তি বাহিনীর বছর হয়েছিল। এটিই জমহুরের নিকট প্রসিদ্ধ অভিমত। আর ইবরাহীম বিন মুনযির রহ. বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হস্তি বাহিনীর বছর হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের উলামাদের নিকট কোনো সন্দেহ নেই।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/২৮৩)


অতএব, এতটুকু নিশ্চিতভাবে সাব্যস্ত হলো যে, হস্তি বাহিনীর মক্কায় আক্রমণের বছর নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হয়েছিল। এখন প্রশ্ন থেকে যায় যে, হস্তি বাহিনীর হামলার কয়দিন পর নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হয়ে ছিল? হাফেজে হাদীস ইমাম সুহায়লী, ইমাম ইবনে কাছীর, ইমাম মাসঊদী রহ. এর নিকট বিশুদ্ধতম মত হল, হস্তি বাহিনী মক্কায় হামলার পঞ্চাশ দিন পর নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্ম গ্রহণ করেছেন। আবূ বকর মুহাম্মাদ বিন মূসা আল খাওয়ারেযেমী রহ. বলেন, হস্তি বাহিনী মক্কায় হামলা করে মুহাররম মাসের তের দিন বাকী থাকতে। তখন থেকে পঞ্চাশ দিন পর নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্ম গ্রহণ করলে জন্ম দিবস আটই রবিউল আউয়াল হয়। অতএব, সাব্যস্ত হলো যে, উল্লেখিত বড় বড় ইমামদের মতে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হয়েছিল আটই রবিউল আউয়াল। আরো বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ ১/৩৩৫)


আল্লামা আহমাদ বিন মুহাম্মাদ আল কসতালানী আট তারিখের মতকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বলেনঃ 


وقيل لثمان خلت منه, قال الشيخ قطب الدين: هو اختيار اكثر اهل الحديث, ونقل عن ابن عباس و جبير بن مطعم وهو اختيار من له معرفة بهذا الشان, واختاره الحميدى و شيخه ابن حزم , وحكى القضاعى فى عيون المعارف اجماع اهل الزيج(اى الميقات) عليه, ورواه الزهرى عن محمد بن جبير بن مطعم وكان عارفا بالنسب وايام العرب اخذ ذالك عن ابيه.


‘কারো কারো মতে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের আট তারিখ জন্ম গ্রহণ করেন। শায়েখ কুতুবউদ্দিন (আবূ বকর মুহাম্মদ বিন আহমাদ) বলেছেন, এ মতটিই অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণ গ্রহণ করেছেন এবং এ মতটিই হযরত ইবনে আব্বাস এবং জুবাইর বিন মুতইম রা. থেকে বর্ণিত আছে। তাছাড়া ইতিহাস সম্পর্কে যার নূন্যতম ধারণা আছে সেও এমতটিই গ্রহণ করবে। হুমাইদি ও তার উস্তাদ ইবনে হাযম রহ.ও এ মতটি গ্রহণ করেছেন এবং কুযায়ী (আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন সালাম) ‘উয়ূনুল মাআরেফ’ নামক গ্রন্থে আট তারিখে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম গ্রহণ সম্পর্কে মীকাতবাসীদের ঐক্যমতের কথা উল্লেখ করেছেন। এমতটিকেই হাফেজ যুহরী রহ. মুহাম্মাদ বিন জুবাইর বিন মুতইম থেকে বর্ণনা করেছেন। আর মুহাম্মাদ বিন জুবাইর নসবনামা ও আরবের ইতিহাস সম্পর্কে পণ্ডিত ছিলেন। মুহাম্মাদ তার পিতা জুবাইর বিন মুতইম থেকে এ বিষয়ে পাণ্ডিত্য গ্রহণ করেছেন।’ (আল মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যাহ ১/৮৫)


আল্লামা যারকাশী রহ.ও ‘শরহে যারকাশী আলাল মাওয়াহেব’ এর মধ্যে আট তারিখের মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (শরহে যারকাশী আলাল মাওয়াহেব ১/২৪৬)


সুপ্রসিদ্ধ ইতিহাসবেত্তা হাফেজ ইবনে কাছীর রহ. ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ এর মধ্যে আট তারিখের মতকে যেভাবে উল্লেখ করেছেন তার দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝে আসে যে, তিনিও আট তারিখের প্রবক্তা। তিনি বলেনঃ 


وقيل لثمان خلون منه, حكاه الحميدى عن ابن حزم ورواه مالك وعقيل ويونس بن يزيد عن الزهرى عن محمد بن جبيربن مطعم, ونقل ابن عبد البر عن اصحاب التاريخ انهم صححوه, وقطع به الحافظ الكبير محمد بن موسى الخوارزمى, ورجحه الحافظ ابو الخطاب بن دحية فى كتابه التنوير فى مولد البشير النذير.


‘কেউ কেউ বলেছেন নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্ম গ্রহণ করেছেন রবিউল আউলায় এর আট তারিখ। এ মতটি হুমাইদী রহ. ইবনে হাযাম রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম মালেক রহ., উকাইল (ইবনে খালেদ) ও ইউনুস বিন ইয়াযীদ ইমাম যুহরী এর সূত্রে, আর ইমাম যুহরী মুহাম্মদ বিন জুবাইর বিন মুতইম এর সূত্রে আট তারিখের কথা বর্ণনা করেছেন। সুপ্রসিদ্ধ স্প্যানিশ আলেম ইবনে আব্দুল বার বলেছেন, ইতিহাসবেত্তাগণ আট তারিখের অভিমতকেই বিশুদ্ধ বলেছেন। তাছাড়া হাফেজে হাদীস মুহাম্মদ বিন মূসা আল খাওয়ারেযেমী নিশ্চিতভাবে আট তারিখকে সঠিক বলেছেন। আরেক হাফেজে হাদীস আবুল খাত্তাব উমর ইবনে হাসান ইবনে দিহইয়া স্বীয় গ্রন্থ ‘আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর’ এর মধ্যে আট তারিখের অভিমতকেই প্রধান্য দিয়েছেন। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/২৮২)


বার তারিখের দলীলঃ 

হাফেজ ইবনে কাছীর রহ. বার তারিখের দলীল সম্পর্কে বলেনঃ


وقيل لثنتي عشرة خلت منه, نص عليه ابن اسحاق ورواه ابن ابى شيبة فى مصنفه عن عفان بن مسلم عن سعيد بن مينا عن جابر وابن عباس رضى الله عنهما انهما قالا: ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول وفيه بعث وفيه عرج به الى السماء وفيه هاجر وفيه مات, وهذا هوالمشهور عند الجمهور و الله اعلم.


‘ইবনে ইসহাক রহ. বার তারিখের মতটি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। আর ইবনে আবী শাইবা তার ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে আফফান ইবনে মুসলিম এর সূত্রে সাঈদ ইবনে মীনা থেকে বর্ণনা করেন যে, জাবের (রাযি.)ও ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেছেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হস্তি বাহিনীর মক্কায় আক্রমণের বছর রবিউল আউয়াল মাসের বার তারিখ সোমবার জন্ম গ্রহণ করেন। আর রবিউল আউয়াল মাসে তাকে নবুওয়াত দেয়া হয় এবং এ মাসে তাঁর মে‘রাজ হয় এবং এ মাসেই তিনি হিজরত করেন আর এ মাসেই তিনি ইন্তিকাল করেন। (হাফেজ ইবনে কাছীর বলেন,) জমহুরের নিকট এ মতটিই প্রসিদ্ধ। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/২৮৩)


এখানে দুইটি বিষয় লক্ষণীয়ঃ


১. বার তারিখের দলীল হিসেবে একটি হাদীস পেশ করা হল। এই হাদীসের রাবী আফফান বিন মুসলিম ও সাঈদ বিন মীনা উভয়ে নির্ভরযোগ্য। তবে আফফান বিন মুসলিম সাঈদ বিন মীনা থেকে সরাসরি হাদীস শুনতে পাননি। কারণ সাঈদ বিন মীনার ইন্তেকাল হয় ১১০ হিজরীর দিকে। আর আফফান বিন মুসলিমের জন্মই হয় ১৩৪ হিজরীর দিকে। (সূত্রঃ সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৯/২৫) এর দ্বারা বুঝা গেল যে, আফফান বিন মুসলিম এবং সাঈদ বিন মীনা উভয়ের মাঝে একজন রাবী আছে যার নাম এই সনদে উল্লেখ করা হয় নি। তাই এই হাদীসটি মুনকাতে হয়ে গেল। আর মুনকাতে হাদীস দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।


২. হাফেজ ইবনে কাছীর রহ. এই মতটি বর্ণনা করার পর বলেছেন, ‘এই মতটি জমহুরের নিকট প্রসিদ্ধ’ লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই মতটিকে তিনি প্রসিদ্ধ বলেছেন বটে কিন্তু বিশুদ্ধ বলেননি; বরং আট তারিখের মতকেই তিনি প্রকারান্তরে বিশুদ্ধ বলেছেন। জেনে রাখা উচিত যে, সব প্রসিদ্ধ বিষয়ই বিশুদ্ধ হয় না; বরং সমাজে অনেক এমন প্রসিদ্ধ বিষয় রয়েছে যা বিশুদ্ধ নয়। আমাদের মনে হয় এখানেও তেমনটিই ঘটেছে।


যাই হোক উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা একথা সাব্যস্ত হল যে, বড় বড় মুহাদ্দিস ইমাম ও ইতিহাসবিদগণের মতে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের আট তারিখ সোমবার জন্ম গ্রহণ করেছেন। ঐতিহাসিক বিবেচনায় এটাই বিশুদ্ধ অভিমত। বার তারিখের দলীল সম্পর্কীয় হাদীস ‘মুনকাতে’। তাই বার তারিখের অভিমত প্রসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বিশুদ্ধ নয়।


জ্যোতির্বিজ্ঞান ও নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখঃ


নিকট অতীতের ভারত উপ-মহাদেশের কয়েকজন বরণীয় আলমের মতামত হল, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৯ই রবিউল আউয়াল সোমবার জন্ম গ্রহণ করেছেন। আল্লামা শিবলী নু‘মানী ও শায়খ সুলাইমান নদভী কর্তৃক যৌথভাবে উর্দূ ভাষায় রচিত ‘সীরাতুন নবী’ নামক গ্রন্থে এবং শায়খ সফীউর রহমান কর্তৃক আরবী ভাষায় রচিত ‘আররাহীকুল মাখতূম’ নামক গ্রন্থে এই মতামত উল্লেখ করা হয়েছে। এই মতের পথে দলীল বর্ণনা করতে গিয়ে ‘সীরাতুন নবীর’ গ্রন্থকার বলেছেন, বিগত শতাব্দীর মিশরের প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী আলেম মাহমূদ পাশা ফালাকী রহ. তার রচিত ‘নাতায়েজুল ইফহাম ফী তাকবীমিল আরব কাবলাল ইসলাম ওয়া ফী তাহকীকে মাউলিদিন নাবিয়্যি আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম’ নামক গ্রন্থে গাণিতিক প্রমাণাদির মাধ্যমে সাব্যস্ত করেছেন যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম মূলত রবিউল আউয়াল এর নয় তারিখ হয়েছে। তিনি দলীল সম্পর্কে যে কয়েক পৃষ্ঠা ব্যাপী আলোচনা করেছেন তার সারাংশ এরূপঃ


১. সহীহ বুখারীতে আছে যে, দশম হিজরীতে যখন নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সর্বকনিষ্ঠ ছেলে ইবরাহীম (রাযি.) ইন্তেকাল করেন তখন সূর্য গ্রহণ হয়েছিল। আর তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স ৬৩ বছর চলছিল। 


২. গাণিতিক হিসেবে সাব্যস্ত হয় যে, দশম হিজরীর সেই সূর্য গ্রহণ খ্রিষ্টীয় ৬৩২ সালের জানুয়ারি মাসে সকাল আটটা ত্রিশ মিনিটে হয়েছিল।


৩. চান্দ্র মাস হিসেবে এ সময় থেকে ৬৩ বছর পিছনে ফিরে গেলে দেখা যায় যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম ৫৭১ সালে হয়ে ছিল। আর এ সময় রবিউল আউয়াল মাসের প্রথম তারিখ মোতাবেক ১২ই এপ্রিল হয়।


৪. জন্ম তারিখ সম্পর্কে যদিও মতভেদ রয়েছে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে সবাই একমত যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের কোনো এক সোমবার হয়েছে। আর নির্ভরযোগ্য মতগুলো ৮-১২ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ।


৫. রবিউল আউয়াল এর ৮-১২ তারিখের মধ্যে সোমবার হয় নয় তারিখ। এসব কারণে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম খ্রিষ্টীয় ৫৭১ সালের ২০শে এপ্রিল হয়েছিল। (সীরাতুন নবী ১/১১৭)


নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তেকালের তারিখঃ


ইন্তেকালের তারিখ সম্পর্কেও মতভেদ রয়েছে। কারো মতে রবিউল আউয়াল এর বার তারিখ সোমবার, কারো মতে রবিউল আউয়াল মাসের দুই তারিখ সোমবার আর কারো মতে রবিউল আউয়াল মাসের এক তারিখ সোমবার নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ইন্তেকাল করেছেন। প্রত্যেকেই নিজের দাবির পথে প্রমাণ পেশ করেছেন, কিন্তু বার ও দুই তারিখের পথে যে-সব দলীল পেশ করা হয়েছে তা আমাদের তাহকীক অনুযায়ী বিশুদ্ধ নয় কিংবা যুক্তিযুক্ত নয়। তাই আমরা বার তারিখ এবং দুই তারিখের মতটি গ্রহণ করিনি। আমাদের তাহকীক অনুযায়ী নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের এক তারিখ সোমবার ইন্তেকাল করেছেন। এক তারিখ সম্পর্কীয় দলীল নিম্নে পেশ করা হলোঃ


নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তেকালের ব্যাপারে যেসব বিষয়ে ইমামগণ একমত তা নিম্নরূপঃ


১. নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যু বরণ করেন ১১ হিজরীতে।

২. রবিউল আউয়াল মাসে।

৩. সোমবার।

৪. এক তারিখ থেকে বার তারিখের মধ্যে মৃত্যুর তারিখ সম্পর্কে হাদীসের মৌলিক গ্রন্থসমূহে স্পষ্ট কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। সীরাতাজ্ঞ ও ইতিহাসবিদগণ এ সম্পর্কে তিনটি মত উল্লেখ করে থাকেনঃ এক, দুই ও বারই রবিউল আউয়াল। এই তিনটি মতকে সবরকম যাচাই বাছাইয়ের পর ১ম রবিউল আউয়াল এর মতটিই যুক্তিযুক্ত মনে হয়। কেননা সহীহ বুখারীর হাদীসের মাধ্যমে একথা সাব্যস্ত যে,  اليوم اكملت لكم دينكم...  শীর্ষক আয়াতটি দশম হিজরীর যিলহজ্জ মাসের নয় তারিখ শুক্রবার আরাফার ময়দানে নাযিল হয়েছিল। (বুখারী, কিতাবুত তাফসীর) এই হিসাব ঠিক রেখে চান্দ্রমাসের সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করলে রবিউল আউয়াল এর এক তারিখ সোমবার সাব্যস্ত হয়।


নিম্নে বিস্তারিত একটি নকশার মাধ্যমে একথা আরো স্পষ্ট করে দেওয়া হলোঃ


ক. যিলহজ্জ ৩০, মুহাররম ৩০ ও সফর ৩০


১. যিলহজ্জ, মুহাররম ও সফর, সবগুলো মাস যদি ৩০ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ১ম সোমবার ৬ তারিখ হয়।


২. যিলহজ্জ, মুহাররম ও সফর, সবগুলো মাস যদি ৩০ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ২য় সোমবার ১৩ তারিখ হয়।


৩. যিলহজ্জ, মুহাররম ও সফর, সবগুলো মাস যদি ৩০ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ৩য় সোমবার ২০ তারিখ হয়।


খ. যিলহজ্জ ২৯, মুহাররম ২৯ ও সফর ২৯


১. যিলহজ্জ, মুহাররম ও সফর, সবগুলো মাস যদি ২৯ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ১ম সোমবার ২ তারিখ হয়।


২. যিলহজ্জ, মুহাররম ও সফর, সবগুলো মাস যদি ২৯ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ২য় সোমবার ৯ তারিখ হয়।


৩. যিলহজ্জ, মুহাররম ও সফর, সবগুলো মাস যদি ২৯ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ৩য় সোমবার ১৬ তারিখ হয়।


গ. যিলহাজ্জ, মুহাররম২৯ ও সফর ৩০


১. যিলহজ্জ, মুহাররম  মাস যদি ২৯ দিনের হয় ও সফর মাস যদি ৩০ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ১ম সোমবার ১ তারিখ হয়।


২.যিলহজ্জ, মুহাররম  মাস যদি ২৯ দিনের হয় ও সফর মাস যদি ৩০ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ২য় সোমবার ৮ তারিখ হয়।


৩.যিলহজ্জ, মুহাররম  মাস যদি ২৯ দিনের হয় ও সফর মাস যদি ৩০ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ৩য় সোমবার ১৫ তারিখ হয়।


ঘ. যিলহাজ্জ ৩০ ও মুহাররম, সফর ২৯


১. যিলহজ্জ মাস যদি ৩০ দিনের হয় এবং মুহাররম  ও সফর মাস যদি ২৯ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ১ম সোমবার ১ তারিখ হয়।


২. যিলহজ্জ মাস যদি ৩০ দিনের হয় এবং মুহাররম  ও সফর মাস যদি ২৯ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ২য় সোমবার ৮ তারিখ হয়।


৩. যিলহজ্জ মাস যদি ৩০ দিনের হয় এবং মুহাররম  ও সফর মাস যদি ২৯ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ৩য় সোমবার ১৫ তারিখ হয়।


ঙ. যিলহজ্জ ২৯, মুহাররম ৩০, সফর ২৯


১. যিলহজ্জ মাস যদি ২৯ দিনের হয় এবং মুহাররম ৩০ ও সফর মাস যদি ২৯ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ১ম সোমবার ১ তারিখ হয়।


২. যিলহজ্জ মাস যদি ২৯ দিনের হয় এবং মুহাররম ৩০ ও সফর মাস যদি ২৯ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ২য় সোমবার ৮ তারিখ হয়।


৩. যিলহজ্জ মাস যদি ২৯ দিনের হয় এবং মুহাররম ৩০ ও সফর মাস যদি ২৯ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ৩য় সোমবার ১৫ তারিখ হয়।


চ. যিলহজ্জ ৩০, মুহাররম ২৯, সফর ৩০


১. যিলহজ্জ মাস যদি ৩০ দিনের হয় এবং মুহাররম ২৯ ও সফর মাস যদি ৩০ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ১ম সোমবার ৭ তারিখ হয়।


২. যিলহজ্জ মাস যদি ৩০ দিনের হয় এবং মুহাররম ২৯ ও সফর মাস যদি ৩০ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ২য় সোমবার ১৪ তারিখ হয়।


৩. যিলহজ্জ মাস যদি ৩০ দিনের হয় এবং মুহাররম ২৯ ও সফর মাস যদি ৩০ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ৩য় সোমবার ২১ তারিখ হয়।


ছ. যিলহজ্জ ৩০, মুহাররম ৩০, সফর ২৯


১. যিলহজ্জ ও মুহাররম মাস যদি ৩০ দিনের এবং সফর মাস যদি ২৯ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ১ম সোমবার ৭ তারিখ হয়।


২. যিলহজ্জ ও মুহাররম মাস যদি ৩০ দিনের এবং সফর মাস যদি ২৯ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ২য় সোমবার ১৪ তারিখ হয়।


৩. যিলহজ্জ ও মুহাররম মাস যদি ৩০ দিনের এবং সফর মাস যদি ২৯ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ৩য় সোমবার ২১ তারিখ হয়।


জ. যিলহজ্জ ২৯, মুহাররম ও সফর ৩০


১. যিলহজ্জ মাস যদি ২৯ দিনের হয় এবং মুহাররম ও সফর মাস যদি ৩০ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ১ম সোমবার ৭ তারিখ হয়।


২. যিলহজ্জ মাস যদি ২৯ দিনের হয় এবং মুহাররম ও সফর মাস যদি ৩০ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ২য় সোমবার ১৪ তারিখ হয়।


৩. যিলহজ্জ মাস যদি ২৯ দিনের হয় এবং মুহাররম ও সফর মাস যদি ৩০ দিনের হয়, তাহলে রবিউল আউয়াল মাসের এর ৩য় সোমবার ২১ তারিখ হয়।


এই তারিখগুলোর মধ্য থেকে ৬, ৭, ৮, ৯, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ২০, ও ২১ তারিখ আলোচনার বাহিরে। কেননা এসব তারিখের কোনো প্রবক্তা নেই। (বি.দ্র. নকশায় দেখা যাচ্ছে যে, বার তারিখ কোনো ভাবেই সোমবার হচ্ছে না। তাই বার তারিখ সোমবার না হওয়া আরো স্পষ্টভাবে সাব্যস্ত হল।) এখন রইল শুধু এক আর দুই তারিখ। আমরা নকশায় দেখতে পাচ্ছি যে, এক অবস্থায় দুই তারিখ সোমবার হতে পারে। অর্থাৎ উল্লেখিত তিনটি মাসকে একাধারে উনত্রিশা ধরলে। আর জেনে রাখা উচিত যে, চান্দ্রমাস একাধারে তিনবার উনত্রিশা হওয়া চান্দ্রমাসের সাধারণ নিয়ম এর পরিপন্থী। তাই দুই তারিখের মতটি যুক্তিযুক্ত নয়। পক্ষান্তরে উল্লেখিত তিনটি মাসের যেকোনো দুইটিকে উনত্রিশা ধরলে যিলহজ্জ মাসের নয় তারিখ শুক্রবার হওয়া হিসেবে রবিউল আউয়াল মাসের এক তারিখ সোমবার হয়। আর স্বাভাবিকভাবেও চান্দ্রমাস পর পর দুই বার উনত্রিশা হয় কিংবা একটি উনত্রিশা এবং পরেরটি ত্রিশা হয়ে থাকে। অতএব যুক্তির সাথে সাথে হাফেজ মূসা ইবনে উকবা, লাইস বিন সাআদ, মুহাম্মদ বিন মূসা আলখাওয়ারেযমী প্রমুখ ইমামগণের উক্তি এক তারিখের মতকে সমর্থন করায় আমরা এক তারিখের মতটি গ্রহণ করছি। (সীরাতুন নবী ২/৪৭৭)


তাছাড়া তাফসীরে তবারী ও তাফসীরে ইবনে কাছীরে ইমাম ইবনে জুরাইজ তবারী থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হল’ শীর্ষক আয়াতটি নাযিল হওয়ার দিন থেকে নিয়ে ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত মোট একাশি দিন নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত ছিলেন।’ (তাফসীরে তবারী ৬/৯৬)


ইমাম ইবনে জুরাইজ এর এই উক্তি অনুযায়ীও উল্লেখিত আয়াত নাযিল হওয়ার দিন থেকে নিয়ে একাশিতম দিন রবিউল আউয়াল এর এক তারিখ সোমবার হয়, যদি জিলহজ্জ, মুহাররাম ও সফর এই তিন মাসের যেকোনো দুইটিকে উনত্রিশা ধরা হয়। অতএব, রবিউল আউয়াল মাসের এক তারিখ সোমবার নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তেকাল হয়েছে। এটিই বিশুদ্ধ ও যুক্তিযুক্ত মত। আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ (‘সীরাতুন নবী’ ২/৪৭৭)

দীনি শিক্ষার গুরুত্ব

 #ছেলে_এ্যাডভোকেট_বাবার_জানাযার_সময়_কান্না,

জানাযার নামাজ অনুষ্টিত হচ্ছে ইমাম সাহেব প্রথম তাকবীর ও দ্বিতীয় তাকবীর দিলেন।

তৃতীয় তাকবীরের সময় এ্যাডভোকেট জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে কেঁদে দিলো।

হুজুর যথারীতি নামায শেষ করলেন।

ইমাম সাহেব এ্যাডভোকেট সাহেবকে সান্তনার বাণী শোনাতে লাগলেন।

দুনিয়া তো ক্ষণস্থায়ী,সবাই চলে যাবে একদিন, ইত্যাদি!

চোখের পানি মুছে এ্যাডভোকেট সাহেব বললেন, হুজুর!

আপনি ভেবেছেন আমি আব্বাজানের শোকে এভাবে  কাঁদছি? না!

নামাযের মধ্যে জোরে চিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠার কারণ এটা ছিল না হুজুর।

তো কী কারণ ছিলো?

হুজুর! আমি এতো বড় শিক্ষিত মানুষ। উকালতিতে অনেক নাম কুড়িয়েছি কিন্তু আমি যে জানাযার নামাযের দুআটা পর্যন্ত পড়তে পারি না।

আমার বাবা আজ চলে গেলেন,শেষ বেলায় তার জানাযা নামাযে দুআ পড়তে পারলাম না,

এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কিছু হতে পারে?

এই কষ্টে আমি কেঁদে উঠেছি।

আমাদের এ কি শিক্ষা?

আমরা এতো বড় শিক্ষিত হয়েও জানাযার দুআটি জানি না।

এরপর এ্যাডভোকেট সাহেব উপস্থিত লোকদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, সন্তানদেরকে দ্বীনি শিক্ষা দিবেন, এই একটি অনুরোধ রইলো।

আজকাল অভিভাবকরা কতটুকু সচেতন তাদের সন্তানদের ইসলামের নূন্যতম প্রয়োজনীয় মৌলিক বিষয়াদি শিক্ষাদানে ???

আল্লাহ আমাদের সবাইকে দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করার তাওফিক দান করুন..।

আমিন।

সংগৃহীত

Thursday 3 September 2020

ছেলে-মেয়েদের অবৈধ সম্পর্ক : ইসলাম কী বলে?

 *ছেলে-মেয়েদের অবৈধ সম্পর্ক : ইসলাম কী বলে?*



পরনারীর প্রতি আসক্তি মানুষের বিকৃত মানসিকতা ও মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ। মানবতা ও বিশুদ্ধতার একমাত্র জীবন ব্যবস্থা দিয়েছে ইসলাম। কোনো গর্হিত কাজই ইসলাম অনুমোদন দেয় না। আর বিবাহবহির্ভূত নারী-পুরুষের আসক্তি কিংবা সম্পর্ক সবচেয়ে গর্হিত নিষিদ্ধ কাজ।


প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর জন্য ‘ঘনিষ্ঠ আত্মীয়’ দেবরকে (স্বামীর ভাইকে স্ত্রীর জন্য) মৃত্যুর সমতুল্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ঠিক স্বামীর জন্য স্ত্রীর বোনও (শ্যালিকাও) অনুরূপ।


স্ত্রীর জন্য দেবর আর স্বামীর জন্য শ্যালিকা মৃত্যুর সমতুল্য মানেই হলো একে-অপরের সঙ্গে অবাধ দেখা-সাক্ষাৎ এবং আসক্তিমূলক সম্পর্ক হারাম বা নিষিদ্ধ। ইসলামে এ সবের শাস্তিও খুব ভয়াবহ।


দেবর কিংবা শ্যালিকার ব্যাপারে যদি ইসলামের এ রকম কঠোর নির্দেশনা আসে তবে পরনারী কিংবা পরপুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিধান কেমন হতে পারে? তা বিবেকবানদের জন্য অনুমেয়।


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ওই নারীকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভাল, যে নারী তার জন্য হালাল নয়।’ (তাবারানি)


ইসলামে বিবাহবিহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক, আসক্তিমূলক আচরণ, সামাজিকতার নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফাহেশা কথা-বার্তা বা চ্যাটিং সবই হারাম তথা নিষেধ।


যৌন সম্পর্ক, অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা তো দূরের কথা, বিবাহবহির্ভূত নারী-পুরুষরা কোমল বা নরম ভাষায় সরাসরি, মোবাইলে কিংবা চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে আসক্তিমূলক কথা-বার্তাও বলা যাবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন-


‘হে নবি পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মতো নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। যার ফলে সে ব্যক্তির কুবাসনা সৃষ্টি হয়, যার অন্তরে আসক্তি আছে। তোমরা উত্তম (সংযত) কথাবার্তা বলো।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ৩২)


আবার নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি বিনিময়েও রয়েছে সুস্পষ্ট হুকুম। এ প্রসঙ্গে কুরআনে পাকে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট নীতিমালা ঘোষণা করেছেন।


> পুরুষদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-


‘(হে রাসুল! আপনি) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তাআলা সে ব্যাপারে খবর রাখেন।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩০)


> আবার নারীদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-


‘(হে রাসুল! আপনি) ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। সাধারণতঃ প্রকাশমান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের ওপরে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, বাবা, শ্বশুর, ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, স্ত্রীলোক অধিকারভূক্ত বাদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও (এমন) বালক- যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত অন্য কারো সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। (এমনকি) তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তাওবা কর; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩১)


কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা হলো, মুসলিম নারী-পুরুষ উভয়ে অবৈধ সংস্পর্শ, কথা-বার্তা ও দেখা-সাক্ষাৎ, আসক্তি ও সাজ-সজ্জা থেকে বেঁচে থাকা। নিজেদের দ্বীন ও আত্মসম্মান রক্ষা করা।


সুতরাং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই ছোট হাদিসটির ওপর আমল করা জরুরি। যার বাস্তবায়নে তিনি মুসলিম উম্মাহকে দিয়েছেন জান্নাতের গ্যারান্টি। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জিহ্বা ও লজ্জাস্থান হেফাজত করবে; আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর নারী-পুরুষ উভয়কে অবৈধ আসক্তি, সম্পর্ক, দেখা-সাক্ষাৎ, কথা-বার্তা ও যৌন লালসা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন। 

(সংগৃহীত)

Tuesday 25 August 2020

আশুরাঃ তাৎপর্য, ফযীলত, করণীয় ও বর্জনীয়

 *আশুরাঃ তাৎপর্য, ফযীলত, করণীয় ও বর্জনীয়*


      আশুরা মুহাররম মাসের ১০ তারিখকে বলা হয়। ইসলাম ধর্মে এই দিবসটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এই দিনে ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাবলী সংঘটিত হয়েছে। 


      *যেমনঃ* হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে যে, (একদা) নবী কারীম ﷺ ইয়াহুদীদের কতিপয় এমন লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন, যারা আশুরার দিনে রোযা রেখেছিল। নবী কারীম ﷺ তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন “এটা কিসের রোযা?” উত্তরে তারা বলল, “এই দিনে আল্লাহ তা‘আলা হযরত মূসা আ. ও বনী ইসরাঈলকে ডুবে যাওয়া থেকে উদ্ধার করেছিলেন। (অন্য বর্ণনায় আছে ফিরআউনের নির্যাতন থেকে মুক্ত করেছিলেন।) এবং ফিরআউনকে দল-বল সহ নিমজ্জিত করেছিলেন। আর এই দিনেই হযরত নূহ আ.- এর কিশতী জূদী পর্বতে স্থির হয়েছিল। ফলে এই দিনে হযরত নূহ আ. ও হযরত মূসা আ. কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রোযা রেখেছিলেন। তাই আমরাও এই দিনে রোযা রাখি।” তখন নবী করীম ﷺ বললেন, “মূসা আ.-এর অনুসরণের ব্যাপারে এবং এই দিনে রোযা রাখার ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে বেশী হক্বদার।” অতঃপর তিনি ﷺ সেদিন (আশুরার দিন) রোযা রাখেন এবং সাহাবাদেরকেও রোযা রাখতে আদেশ করেন। (বুখারীঃ হাঃ নং ২০০৪, মুসলিমঃ হাঃ নং ১১৩০, মুসনাদে আহমাদ হাঃ নং-৩৬০)


                   _*ফযীলত:*_ 


 *১.* হযরত আবূ কাতাদাহ রাযি.থেকে বর্ণিত যে নবী কারীম ﷺ ইরশাদ করেন, “আমি আশাবাদী যে, আশুরার দিনের রোযার উসীলায় আল্লাহ তা‘আলা অতীতের এক বৎসরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।” (তিরমিযীঃ হাঃনং ৭৫১)


 *২.* হযরত আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত অপর হাদীসে নবী কারীম ﷺ ইরশাদ করেন, “রমযানের রোযার পর মুহাররম মাসের রোযা সর্বোত্তম।” (মুসলিমঃ হাঃ নং ১১৬৩)


                        _*করণীয়ঃ*_ 


 *১.* আশুরার দিনে রোযা রাখা। তবে এর সাথে ৯ তারিখ বা ১১ তারিখ মিলিয়ে রাখা। কারণ নবী কারীম ﷺ ইরশাদ করেন, “তোমরা আশুরার দিনে রোযা রাখ। তবে এ ক্ষেত্রে ইয়াহুদীদের থেকে ভিন্নতা অবলম্বন করতঃ তোমরা আশুরার পূর্বে অথবা পরের একদিন সহ রোযা রাখবে।” (মুসনাদে আহমাদ-হাঃ নং ২৪১)


 *২.* এই দিন  বেশী বেশী তাওবা-ইস্তিগফার করা। কারণ নবী কারীম ﷺ ইরশাদ করেন, মুহাররম হলো আল্লাহ তা‘আলার (নিকট একটি মর্যাদাবান) মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যাতে তিনি অতীতে একটি সম্প্রদায়কে ক্ষমা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অপরাপর সম্প্রদায়কে ক্ষমা করবেন। (তিরমিযীঃ নং ৭৪১)


 *৩.* দীনের খাতিরে এই দিনে হযরত হুসাইন রাযি. যে ত্যাগ-তিতিক্ষা প্রদর্শন করেছেন তা থেকে সকল মুসলমানের দীনের জন্য যে কোন ধরনের ত্যাগ ও কুরবানী পেশ করার শিক্ষা গ্রহণ করা।

 

                        _*বর্জনীয়ঃ*_ 


 *১.* তা’যিয়া বানানো অর্থাৎ, হযরত হুসাইন রাযি. এর নকল কবর বানানো। এটা বস্তুত এক ধরণের ফাসেকী শিরকী কাজ। কারণ মূর্খ লোকেরা ‘হযরত হুসাইন রাযি. এতে সমাসীন হন’ এই বিশ্বাসে এর পাদদেশে নযর-নিয়ায পেশ করে, এর সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ায়, এর দিকে পিঠ প্রদর্শন করাকে বেয়াদবী মনে করে, তা’যিয়ার দর্শনকে ‘যিয়ারত’ বলে আখ্যা দেয় এবং এতে নানা রকমের পতাকা ও ব্যানার টাঙ্গিয়ে মিছিল করে; যা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। এছাড়াও আরো বহুবিধ কুপ্রথা ও গর্হিত কাজের সমষ্টি হচ্ছে এ তা’যিয়া। (ইমদাদুল ফাতাওয়াঃ ৫/২৯৪,৩৩৫,   কিফায়াতুল মুফতীঃ ৯/৩২, ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়াঃ ২/৩৪৩)


       *স্মর্তব্য:* তা’যিয়ার সামনে যে সমস্ত নযর-নিয়ায পেশ করা হয় তা গাইরুল্লাহর নামে উৎসর্গ করা হয় বিধায় তা খাওয়া হারাম। (সূরা মাইদাহঃ ৩)


 *২.* মর্সিয়া বা শোকগাঁথা পাঠ করা, এর জন্য মজলিস করা এবং তাতে অংশগ্রহণ করা সবই নাজায়িয। (ইমদাদুল ফাতাওয়াঃ ৫/২৯৪, কিফায়াতুল মুফতীঃ ৯/৩২, ৪২)


 *৩.* ‘হায় হুসেন’, ‘হায় আলী’ ইত্যাদি বলে বলে বিলাপ ও মাতম করা এবং ছুরি মেরে নিজের বুক ও পিঠ থেকে রক্ত বের করা। এগুলো করনেওয়ালা, দর্শক ও শ্রোতা উভয়ের প্রতি নবী কারীম ﷺ অভিসম্পাত করেছেন। (আবূ দাউদ, হাঃ নং ৩১২, ইবনে মাজাহঃ হাঃ নং ১৫৮৪) 


 *৪.* কারবালার শহীদগণ পিপাসার্ত অবস্থায় শাহাদতবরণ করেছেন তাই তাদের পিপাসা নিবারণের জন্য বা অন্য কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে এই দিনে লোকদেরকে পানি ও শরবত পান করানো। (ইমদাদুল ফাতাওয়াঃ ৫/২৮৯, কিফায়াতুল মুফতীঃ ৯/৪০)


 *৫.* হযরত হুসাইন রাযি. ও তাঁর স্বজনদের উদ্দেশ্যে ঈছালে সাওয়াবের জন্য বিশেষ করে এই দিনে খিচুড়ি পাকিয়ে তা আত্মীয়-স্বজন ও গরীব মিসকীনকে খাওয়ানো ও বিলানো। একে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ যেহেতু নানাবিধ কু-প্রথায় জড়িয়ে পড়েছে তাই তাও নিষিদ্ধ ও না-জায়িয। (কিফায়াতুল মুফতীঃ ৯/৪০)


 *৬.* হযরত হুসাইন রাযি.-এর নামে ছোট বাচ্চাদেরকে ভিক্ষুক বানিয়ে ভিক্ষা করানো। এটা করিয়ে মনে করা যে, ঐ বাচ্চা দীর্ঘায়ু হবে। এটাও মুহাররম বিষয়ক কু-প্রথা ও বিদ‘আত। (ইসলাহুর রুসূম)


 *৭.* তা’যিয়ার সাথে ঢাক-ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো। (সূরা লুকমানঃ৬)


 *৮.* আশুরার দিনে শোক পালন করা; চাই তা যে কোন সূরতেই হোক। কারণ শরী‘আত শুধুমাত্র স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা স্ত্রীর জন্য ৪ মাস ১০ দিন আর বিধবা গর্ভবতীর জন্য সন্তান প্রসব পর্যন্ত এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুতে সর্বোচ্চ ৩ দিন শোক পালনের অনুমতি দিয়েছে। এই সময়ের পর শোক পালন করা জায়িয নেই। আর উল্লেখিত শোক পালন এগুলোর কোনটার মধ্যে পড়ে না। (বুখারীঃ হাঃ নং ৫৩৩৪, ৫৩৩৫, ৫৩৩৬, ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়াঃ ২/৩৪৪)


      উল্লেখ্য যে শরী‘আত কর্তৃক অনুমোদিত শোক পালনের অর্থ হলো শুধুমাত্র সাজ সজ্জা বর্জন করা। শোক পালনের নাম যাচ্ছেতাই করার অনুমতি শরী‘আতে নেই। (দুররে মুখতারঃ২/৫৩০)


 *৯.* শোক প্রকাশ করার জন্য কালো ও সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক পরিধান করা। (ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়াঃ ২/৩৪৪)


 *১০.* এই দিনের গুরুত্ব ও ফযীলত বয়ান করার জন্য মিথ্যা ও জাল হাদীস বর্ণনা করা। কারণ হাদীসে “মিথ্যা হাদীস” বর্ণনাকারীকে জাহান্নামে ঠিকানা বানিয়ে নিতে বলা হয়েছে। (বুখারীঃ হাঃ নং ১০৭)


      এখানে আশুরার দিনের নিন্দিত ও গর্হিত কাজসমূহের কিছু নমুনা পেশ করা হলো মাত্র। মূলকথা, বক্ষ্যমাণ পর্চার ‘করনীয়’ শিরোনামের অধীনে উল্লেখিত ৩টি আমল ব্যতীত এই দিনে আর কোন বিশেষ আমলের কথা শরী‘আতে প্রমাণিত নেই। তাই এই হলো ব্যতীত আশুরাকে কেন্দ্র করে বিশেষ যে কোন কাজই করা হবে তা বিদ‘আত ও মনগড়া আমল হবে।


      আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে শিরক, বিদ‘আত ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করুন।

(সংগৃহীত ও জনস্বার্থে প্রচারিত)

Friday 14 August 2020

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিমদের অবদান

 ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিমদের অবদান: বিশিষ্ট লেখক চৌধুরী আতিকুর রহমান

চৌধুরী আতিকুর রহমান : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস দেখলে মনে হবে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বিরাই স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছে। জেল খাটাদের মধ্যে নাম আছে গান্ধীর, নেহেরুর, মতিলালের, সুভাষ বোসের, কৃষ্ণ মেনন, সরোজিনী নাইড়ু, অরবিন্দ, চিত্তরঞ্জন দাসের নাম। থাক তাঁদের নাম। আমরা তাঁদের আত্মবিসর্জনে গর্বিত। যাঁরা প্রান দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে ক্ষুদিরাম, বাঘাযতীন, প্রফুল্ল  চাকী, বিনয়, বাদল, দীনেশ, ভগত সিং, প্রীতিলতা, সুর্যসেন। বিপ্লবী দলের মধ্যে নাম আছে অনুশীলন আর যুগান্তরের। ইতিহাসে যাদের নাম উল্লেখ আছে অবশ্যই তারা আমাদের সন্মানীয়, কিন্তু এই তালিকায় কোথাও কোন মুসলমানের নাম নেই। থাকলে কয়েকজনের।


১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ এই একশো নব্বুই বছরে হাজার হাজার মুসলমান স্বাধীনতা সংগ্রামী জীবন দিয়েছেন, জেল খেটেছেন।


সিরাজ, মজনুশাহ, টিপুসুলতান, কৃষক বিদ্রোহ, তিতুমীর, দুদুমিয়া নামগুলি সজোরে উচ্চারিত হয় না।


কোলকাতা সিটি কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রধান ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর  শ্রী শান্তিময় রায় “ভারতের মুক্তি সংগ্রাম ও মুসলিম অবদান” নামে এক গবেষণা মুলক গ্রন্থ রচনা করেন। সেখানে উঠে আসে সব বীরত্বের কথা যা চেপে রাখা হয়েছিল এবং এখনো হচ্ছে।


তেহরিক ই রেশমি রুমাল দেওবন্দি আলেমদের একটি প্রয়াস যা ভারতের ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল। ১৯১৩ থেকে ১৯২০ এই আট বছর ধরে চলা আন্দোলনটি ওসমানিয়া তুর্কি, জার্মানি ও আফগানিস্থানকে নিয়ে একটি সশস্ত্র বিপ্লব ঘটানোর উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছিল (অন্যমতে রাশিয়াকেও যুক্ত করা হয়)।


১৮৭৭-এই মৌলানা মাহমুদুল হাসান (র.) দারুল উলুম-এর প্রথম ছাত্র থাকাকালীনই ‘সামরাতু তারবিয়াত’ নামক একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন যে সংগঠন সশস্ত্র সংগ্রামের কথা বলত যা ৩০ বছর ধরে তাদের কাজ চালায়, এরপর ১৯০৯-এ ‘জামিয়াতুল আনসার’ নামে আর একটি সংগঠন গড়েন যা ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯১৩-তে জামিয়াতুল আনসার নিষিদ্ধ হল আর সঙ্গে সঙ্গে দিল্লিতে তৈরী হল ‘নিজারাতুল মা’রিফ’ যার নেতৃত্বে থাকলেন শাইখুল হিন্দ ও ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি উদ্দেশ্য ভারতের স্বাধীনতা, কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু (১৯১৪) হয়ে গেলে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ব্রিটিশ শাসনের মূলে কুটারাঘাত করার জন্যে একটি আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।


মৌলানা মাহমুদুল হাসান ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মোদাররেস (শাইখুল হিন্দ)। তিনি ও মৌলানা মহম্মদ মিঞা মনসুর আনসারি ১৯১৫-র সেপ্টেম্বরে হেজায গমণ করেন উদ্দেশ্য আন্দোলনের খরচ খরচার জন্যে অর্থের ব্যবস্থা করা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঝঞ্চাবিক্ষুদ্ধ সময়ে ১৯১৫-র অক্টোবর নাগাদ মৌলানা উবায়দুল্লাহ সিন্ধি ও মৌলানা হাসান কাবুল পৌঁছান, উদ্দেশ্য ছিল পেশোযার-জালালাবাদ এলাকার দুর্ধর্ষ উপজাতিদের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া। মৌলানা সিন্ধি আফগান আমিরকে প্ররোচনা দেন ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে


মৌলানা হাসান জার্মান ও তুরস্কের সাহায্যের দিকটি দেখার দায়িত্ব নিলেন। ৯-ই অক্টোবর (১-ম জিলহজ্জ ১৩৩৩ হিজরি) মৌলানা হাসান হেজায অভিমুখে যাত্রা করেন এবং তুর্কি গভর্ণর গালিব পাশার সঙ্গে মিলিত হয়ে উপমহাদেশের স্বাধীনতার জন্যে খলিফার সমর্থন আদায় করলেন। ইতিমধ্যে নিরেপেক্ষ থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্স, ব্রিটেন, রাশিয়ার পক্ষ নিলে ১-ম বিশ্বযুদ্ধের দৃশ্যপটই পালটে গেল, জার্মান, তুরস্ক হেরে গেল। মৌলানা হাসান পরিকল্পনা একটু পরিবর্তন করে নিলেন।


মৌলানা হাসানের নির্দেশে মৌলানা উবায়দুল্লাহ সিন্ধি (র.) আফগান আমিরের সঙ্গে হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং কাবুলে বসে যাবতীয় পরিকল্পনা আঞ্জামের ব্বস্থা করেন। ইতিমধ্যে বার্লিন-ইন্ডিয়ান কমিটি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এলাকার উপজাতিদের মধ্যে বিদ্রোহ ঘোষণার উদ্দেশ্যে গমণ করলে দেওবন্দি আলেমদের সঙ্গে মিলিত হন।বার্লিন ইন্ডিয়ান কমিটির কাছে ছিল কায়জার, আনওয়ার পাশা ও মিসরের হটিয়ে দেওয়া খেদিভের চিঠি।


কাবুলের ঘটনা প্রবাহ অবগত করার জন্যে মৌলানা সিন্ধি ও আনসারি শাইখুল হিন্দের উদ্দেশ্যে একটি লম্বা চিঠি পাঠান যা লেখা হয়েছিল একটি রেশমি কাপড়ের উপর। এই চিটিতে মৌলানা সিন্ধি ও আনসারি কাবুলে তাদের কার্যক্রম, পুরো বিদ্রোহের রূপরেখা, সংশ্লিষ্ট মানুষজন ও স্থানের নাম দিযে পাঠান যার মধ্যে ছিল দেশের প্রতিটি কোণ থেকে সশস্ত্র বিপ্লব একইসঙ্গে গণজাগরণের প্রস্তুতি।ছিল নির্বাসিত সরকারের কর্মপদ্ধতি এবং জুনুদ ই রাব্বানিয়াহর নীল নক্সা। চিঠিটি শেখ আব্দুর রহিম সিন্ধির মাধ্যমে মদিনায় অবস্থানরত শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসানের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা হল। প্রসঙ্গক্রমে কাবুলে অবস্থানরত রাজা মহেন্দ্রপ্রতাপের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য।


কিন্তু বিদ্রোহের গোপণ চিঠি সহ উক্ত ব্যক্তি ধরা পড়ে গেলেন, রাস্তাতেই টিঠিটি মুলতানের অনোরারি ম্যাজিস্ট্রেট রব নাওয়াজের হাতে গিয়ে পড়ে এবং তিনি তা পৌঁছে দেন মুলতানের ব্রিটিশ কমিশনারের হাতে, চিঠিটিতে তারিখ উল্লেখ ছিল ৮-৯ রমযান ১৩৩৪ হিজরি (৯-১০ জুলাই ১৯১৬) তার মানে ২০১৬ হল সিল্ক লেটার মুভমেন্টের ১০০ বছর।


শায়খুল হিন্দ মৌলানা মাহমুদুল হাসান ও পরবর্তী শায়খ হুসেন আহম্মদ মাদানি (র.) মক্কায় তৎকালীন হেজায শাসক শরিফ হুসাইন বিন আলির বিশ্বাসঘাতকতায় ইংরেজদের হাতে ধরা পড়ে যান এবং মাল্টা দ্বীপে বন্দি হিসাবে কাটান। অতঃপর তাঁরা মুক্ত হয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।


জানুয়ারী ২০১৩ নাগাদ ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি রেশমি রুমাল আন্দোলনকে স্বীকৃতি জানিয়ে একটি ডাকটিকিট বার করেন –


জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ অর্ধস্বাধীনতা ব্যবস্থাকে নস্যাৎ করে সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার কথা বলেন।


মওলানা সওকত আলি ও মহম্মদ আলি ভ্রাতৃদ্বয় হাকিম আজমল খাঁ ছিলেন সর্ব ভারতের কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট। সেই সময়ের বিখ্যাত চিকিৎসক। দিল্লীর বাইরে গেলে ফি নিতেন সেইসময়ে এক হাজার টাকা। গরীবদের কাছে থেকে কোন পয়সা নিতেন না। কংগ্রেস নেতা হিসেবে জেল খেটেছেন বহু বছর।


মওলানা আজাদ বহুবার জেল খেটেছিলেন।


‘৪০-এর দশকে কয়েকটি ঘটনা ঘটে। স্যার স্টাফোর্ড ক্রিপস ১৯৪২-এ ভারতে আসেন। ভারতের স্বাধীনতা প্রদানের রূপরেখা নির্ণয়ই ছিল তাঁর আগমণের হেতু। অপরটি হল কংগ্রেসের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক। জমিয়তে উল উলেমায়ে হিন্দের শাইখুল হিন্দ মৌলানা সৈয়দ আহমদ মাদানি একটি প্রস্তাব দেন, যার নাম হল মাদানি ফর্মুলা।

‘স্বাধীন রাষ্ট্রে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ভারতবাসীর ভোটাধিকার থাকবে, রাষ্ট্রব্যবস্থা ফেডারেল হবে। কয়কটি সাধারণ বিষয় ছাড়া যা কেন্দ্রের হাতে থাকবে প্রতিটি প্রদেশ স্বাধীন হবে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম ইত্যাদি সুরক্ষিত থাকবে, ব্যক্তিগত আইন হেফাজত করা হবে, কেন্দ্রীয় আইন সভায় মুসলিম/হিন্দু অনুপাত হবে ৪৫% করে অন্য সম্প্রদায় ১০%।’


সামান্য পরিবর্তন সাপেক্ষে এই ফর্মুলা গৃহীত হয় যা প্রথমে কংগ্রেস ও পরে মুসলিম লিগের হটকারিতার জন্যে কার্যকর হয়নি।


শ্যামা-হক মন্ত্রীসভার উত্থান-পতন নিয়ে বলি। অপরদিকে সম্ভবত মন্ত্রীসভাকে টিকিয়ে রাখার জন্যে শ্যমা বাবু ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করে গভর্ণর স্যার জন হার্বার্টকে চিঠি লিখলেও দ্বিচারিতা করে তিনিই আবার মেদিনিপুরে ব্রিটিশ পুলিশের কংগ্রেসি আন্দোলনকারীদের উপর লঠিচার্জের প্রতিবাদ করে পদত্যাগ করলেন।


এদিকে নেতাজি অন্তরীন অবস্থা থেকে দেশ ছাড়লে মন্ত্রীসভার অংশীদার ফরোয়ার্ড ব্লকের জন্যে ব্রিটিশ গভর্ণর চাপ দিতে থাকে, এবং মন্ত্রীসভাকে উপেক্ষা করে সীদ্ধান্ত নিতে থাকে। তারই ফল হল লাঠিচার্জ। শ্যামাবাবুর পদত্যাগের অব্যবহিত পরেই মন্ত্রীসভার পতন হয় (১৯৪৩)। কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভার অবিমৃষ্যকারিতার ফল হল মুসলিম লিগ ছাড়া বাংলায় মুসলিমদের আর কোন দল থাকল না।


ফজলুল হক সাহেব নতুন করে তাঁর পুরনো দল কৃষক-প্রজা পার্টিকে পুনরুজ্জীবিত করেন। কিন্তু ১৯৪৩-এ খাজা নাজিমুদ্দিনের মুসলিম লিগ ক্ষমতায় এসেই হক সাহেবের জনপ্রিয়তার জায়গাগুলিতে হাত দেয়। সোহরাওয়ার্দি ও আবুল হাশিম দেশ ভাগ নিয়ে ছাত্র-যুবাদের মধ্যে উন্মাদনা তৈরী করেন। হক সাহেবকে কংগ্রেসও হিন্দু মহাসভা সংস্রবের জন্যে বিশ্বাসঘাতক রূপে রূপায়িত করেন। ফল হল ১৯৪৫-এর নির্বাচনে ১১৯ টির মধ্যে হক সাহেবের দল পেল মাত্র ৬ টি আসন। স্পষ্ট (বাংলা) দেশভাগের লক্ষণ। যদিও ভোটাধিকার ছিল ধনী, শিক্ষিত ও জমিদারদের। মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার অনুযায়ী এটাই নিয়ম ছিল। দেশের ৯০% দলিত-মুসলিমের ভোটাধিকার ছিল না।


এর পরেও দেশভাগ রোধের একটি চেষ্টা হয়। মাদানি সূত্রানুযায়ী কেন্দ্রের হাতে বিদেশ, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ ইত্যাদি রেখে তিনটি বিভাগ করা হল১) হিন্দু প্রধান এলাকা ২) মুসলিম প্রধান এলাকা ৩) বাংলা, আসাম। জিন্না এই প্রস্তাব মেনে নিয়ে দেশভাগ রদ করলেন। কংগ্রেস প্রস্তাব মেনে নিল। কিন্তু কয়েকদিন পরই কয়েকজন কংগ্রেসি নেতা বেকে বসলেন।


অতঃপর হক সাহেবও শেষ, মাদানি সূত্রও শেষ।


খাজা আব্দুল মজিদ, ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করেন। নেহেরুর সমসাময়িক কংগ্রেস নেতা। তিনি ও তাঁর স্ত্রী দুজনেই জেল খেটেছেন বহু বছর।


নেতাজী সুভাষ বসুর ডানহাত ও বামহাতের মতো ছিলেন, আবিদ হাসান এবং শাহেনেওয়াজ খান। তাঁর রাজনৈতিক সংগ্রামে আর আজাদ হিন্দ ফৌজে ছিলেন, আজিজ আহমেদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল যেড কিয়ানি, ডি এম খান, আব্দুল করিম গনি, কর্নেল জিলানী। ইতিহাসে কারো নাম নেই।


নেতাজি মওলানা জিয়াউদ্দিনের ছদ্মবেশে আফগানিস্থান হয়ে জার্মানি যান। একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন এই পথেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রেশমি রুমাল আন্দোলনকারীরা বিদেশি সাহায্যের জন্যে গিয়েছিলেন। গোলাম আহমদ মুর্তাজা তাঁর চেপে রাখা ইতিহাস বইয়ে বলেছেন, ওবাইদুল্লা সিন্ধির সংসর্গে এসে নেতাজি অনুপ্রাণিত হন।

অমৃতসরের জালিয়ানয়ালাবাগ সমাবেশে হত্যাকান্ডের কথা আমরা জানি। সেই সমাবেশ হয়েছিল কংগ্রেস নেতা সাইফুদ্দিন কিচলুর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে। তিনি ছিলেন অতি জনপ্রিয় নেতা। জনতা তাঁর গ্রেপ্তারের সংবাদে ফুসে উঠেছিল। জার্মানি থেকে ওকালতি পাশ করে আসা সাইফুদ্দিন কিচলুকে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরে পাঠানো হয়।


জালিয়ানোয়ালাবাগে জেনারেল ডায়েরের কথা জানি যিনি গুলি চালানোর আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এই প্রতিবাদের প্রাণপুরুষ ছিলেন ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন কিচলু।


গোপন বিপ্লবী দল অনুশীলন, যুগান্তরে মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু ইনকেলাব পারটিতে সকলের প্রবেশ অবাধ ছিল। নেতা ছিলেন পাহলয়ান শিশু খান। তিনি ইংরেজ বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শাহাদাত বরন করেন।


ক্ষুদিরাম কিংস্ফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিংসফোর্ডের বদলে ভুলে দুজন ইংরেজ নারী নিহত হয়। ক্ষুদিরাম আমাদের কাছে বীর, তাঁর পালক মুসলিম মাসিকে চিনি না। মহম্মদ আব্দুল্লাহ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নরম্যান যিনি অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে নিষ্ঠুরভাবে প্রহসনমুলক বিচারে ফাসির আদেশ দিয়েছিলেন তাঁকে একাই কোর্টের সিড়িতে অসমসাহসে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করেন ১৭৭১ সালের ২০ শে সেপ্টেম্বর। মহম্মদ আব্দুল্লাহ ইতিহাসে স্থান পান নাই।


বীর বিপ্লবী শের আলীর কথা না বললে আজকের লেখা অসম্পুর্ণ থেকে যাবে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্য তাঁর ১৪ বছর জেল হয়। শের আলী আন্দামানে জেল খাটছিলেন। এমন সময় কুখ্যাত লর্ড মেয়ো আন্দামান সেলুলার জেল পরিদর্শনে আসে। শের আলী সুযোগ বুঝে বাঘের মতোই রক্ষীদের পরাস্ত করে তাঁর উপরে ঝাপিয়ে পড়েন।


ভারতে দু’শো বছরের বৃটিশ শাসনের ইতিহাসে একজন মাত্র বড়লাট বিপ্লবীদের হাতে নিহত হয়েছিলেন, তার নাম লর্ড মেয়ো। ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে বড়লাট লর্ড মেয়ো আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার জেল পরিদর্শনে গেলে সেখানে নির্বাসন দণ্ডপ্রাপ্ত বিপ্লবী মোহাম্মদ শের আলী শাবলের আঘাতে লর্ড মেয়োকে হত্যা করেন। পরে ইংরেজরা শের আলীকে ফাঁসি দেয়। তার এই হত্যা, ব্রিটেন তথা ভারতের ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি নাড়িয়ে দেয়।


শের আলি আফ্রিদি বা শের আলি খান খাইবারপাসের জামরুদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।


বিপ্লবী মোহাম্মদ শের আলীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

সংগৃহীত।।

#সবার_ইনসাফ👍

Sunday 26 July 2020

কুরবানীর মাসায়েল



# কুরবানীর মাসায়েল
  -------------------------------------
(জনস্বার্থে প্রচারিত)
(লেখক) মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া
কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব।
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’-মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫
ইবাদতের মূলকথা হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পাদন করা। এ উদ্দেশ্যে এখানে কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল উল্লেখ হল।
কার উপর কুরবানী ওয়াজিব
মাসআলা : ১. প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫
নেসাবের মেয়াদ
মাসআলা ২. কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২
কুরবানীর সময়
মাসআলা : ৩. মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা উত্তম। -মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫
নাবালেগের কুরবানী
মাসআলা : ৪. নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬
মুসাফিরের জন্য কুরবানী
মাসআলা : ৫.  যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৪, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫
নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী
মাসআলা : ৬. নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া অভিভাবকের উপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব।-রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫
দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুম
মাসআলা : ৭. দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২
কুরবানী করতে না পারলে
মাসআলা : ৮. কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে ছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪, ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫
প্রথম দিন কখন থেকে কুরবানী করা যাবে
মাসআলা : ৯. যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমা ও ঈদের নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিনেও কুরবানী করা জায়েয।-সহীহ বুখারী ২/৮৩২, কাযীখান ৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮
রাতে কুরবানী করা
মাসআলা : ১০.  ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতেও কুরবানী করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৯২৭; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, কাযীখান ৩/৩৪৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়ের পর যবাই করলে
মাসআলা : ১১. কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১
কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে
মাসআলা : ১২.  উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫
নর ও মাদা পশুর কুরবানী
মাসআলা : ১৩. যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫
কুরবানীর পশুর বয়সসীমা
মাসআলা : ১৪. উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।
উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬
এক পশুতে শরীকের সংখ্যা
মাসআলা : ১৫. একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯, কাযীখান ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮
সাত শরীকের কুরবানী
মাসআলা : ১৬. সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭
মাসআলা : ১৭. উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭
কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে
মাসআলা : ১৮. যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯
কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ
মাসআলা : ১৯. কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে।-তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২
মাসআলা : ২০. শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।
মাসআলা : ২১. যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরীক করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে শরীক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিবে।-কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০
কুরবানীর উত্তম পশু
মাসআলা : ২২. কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম।-মুসনাদে আহমদ ৬/১৩৬, আলমগীরী ৫/৩০০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
খোড়া পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৩. যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানী জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩, আলমগীরী ৫/২৯৭
রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৪. এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী ৫/২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪
দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৫. যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয নয়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫, আলমগীরী ৫/২৯৮
যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে
মাসআলা : ২৬. যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে
মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানী করা জায়েয। -জামে তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪, আলমগীরী ৫/২৯৭
কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৭. যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ ১/৬১০, ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮
অন্ধ পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৮. যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪
নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে
মাসআলা : ২৯. কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কুরবানীদাতা গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি কুরবানী করাই উত্তম। -সুনানে বায়হাকী ৫/২৪৪, ইলাউস সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯, কাযীখান ৩/৩৪৭
গর্ভবতী পশুর কুরবানী
মাসআলা : ৩০. গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। -কাযীখান ৩/৩৫০
পশু কেনার পর দোষ দেখা দিলে
মাসআলা : ৩১. কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর কুরবানী সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫
পশুর বয়সের ব্যাপারে বিক্রেতার কথা
মাসআলা : ৩২. যদি বিক্রেতা কুরবানীর পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। -আহকামে ঈদুল আযহা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. ৫
বন্ধ্যা পশুর কুরবানী
মাসআলা : ৩৩. বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫
নিজের কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা
মাসআলা : ৩৪. কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা উত্তম। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা পুরুষ হলে জবাইস্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। -মুসনাদে আহমদ ২২৬৫৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২২-২২৩, আলমগীরী ৫/৩০০, ইলাউস সুনান ১৭/২৭১-২৭৪
জবাইয়ে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে
মাসআলা : ৩৫. অনেক সময় জবাইকারীর জবাই সম্পন্ন হয় না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ যবাইয়ের আগে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ পড়তে হবে। যদি কোনো একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানী সহীহ হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৪
কুরবানীর পশু থেকে জবাইয়ের আগে উপকৃত হওয়া
মাসআলা : ৩৬. কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন হালচাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি।সুতরাং কুরবানীর পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে পশমের মূল্য, হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে।-মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, নায়লুল আওতার ৩/১৭২, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০০
কুরবানীর পশুর দুধ পান করা
মাসআলা : ৩৭. কুরবানীর পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর
কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না। প্রয়োজনে ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিবে। -মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭,
রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৯, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১
কোনো শরীকের মৃত্যু ঘটলে
মাসআলা : ৩৮. কয়েকজন মিলে কুরবানী করার ক্ষেত্রে জবাইয়ের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার
স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫১
কুরবানীর পশুর বাচ্চা হলে
মাসআলা : ৩৯. কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।-কাযীখান ৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩
মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী
মাসআলা : ৪০. মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫২
কুরবানীর গোশত জমিয়ে রাখা
মাসআলা : ৪১. কুরবানীর গোশত তিনদিনেরও অধিক জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, সহীহ মুসলিম ২/১৫৯, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৮, ইলাউস সুনান ১৭/২৭০
কুরবানীর গোশত বণ্টন
মাসআলা : ৪২. শরীকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়।-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযীখান ৩/৩৫১
মাসআলা : ৪৩. কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০
গোশত, চর্বি বিক্রি করা
মাসআলা : ৪৪. কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১
জবাইকারীকে চামড়া, গোশত দেওয়া
মাসআলা : ৪৫. জবাইকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।
জবাইয়ের অস্ত্র
মাসআলা : ৪৬. ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
পশু নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা
মাসআলা : ৪৭. জবাইয়ের পর পশু
নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরূহ। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
অন্য পশুর সামনে জবাই করা
মাসআলা : ৪৮. এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই করবে না। জবাইয়ের সময় প্রাণীকে অধিক কষ্ট না দেওয়া।
কুরবানীর গোশত বিধর্মীকে দেওয়া
মাসআলা : ৪৯. কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয।-ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০
অন্য কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চাইলে
মাসআলা : ৫০. অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।
কুরবানীর পশু চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে
মাসআলা : ৫১. কুরবানীর পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কুরবানীদাতার উপর পূর্ব থেকে কুরবানী ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। গরীব  হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯
পাগল পশুর কুরবানী
মাসআলা : ৫২. পাগল পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে যদি এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না তাহলে সেটার কুরবানী জায়েয হবে না। -আননিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ১/২৩০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৫২
নিজের কুরবানীর গোশত খাওয়া
মাসআলা : ৫৩. কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। -সূরা হজ্ব ২৮, সহীহ মুসলিম ২২/১৫৯, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৯০৭৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪
ঋণ করে কুরবানী করা
মাসআলা : ৫৪. কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তিও ঋণের টাকা দিয়ে কুরবানী করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে কুরবানী করা যাবে না।
হাজীদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী
মাসআলা : ৫৫. যেসকল হাজী কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে তাদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে হাজী কুরবানীর কোনো দিন মুকীম থাকবে সামর্থ্যবান হলে তার উপর ঈদুল আযহার কুরবানী করা জরুরি হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৬৬
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা
মাসআলা : ৫৬. সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়্যত করেছিলেন। তাই তিনি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী দিতেন। -সুনানে আবু দাউদ ২/২৯, জামে তিরমিযী ১/২৭৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, মিশকাত ৩/৩০৯
কোন দিন কুরবানী করা উত্তম
মাসআলা : ৫৭. ১০, ১১ ও ১২ এ তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিন কুরবানী করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন, এরপর তৃতীয় দিন। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬
খাসীকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী
মাসআলা : ৫৮. খাসিকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী করা উত্তম। -ফাতহুল কাদীর ৮/৪৯৮, মাজমাউল আনহুর ৪/২২৪, ইলাউস সুনান ১৭/৪৫৩
জীবিত ব্যক্তির নামে কুরবানী
মাসআলা : ৫৯. যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয তদ্রূপ জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ইসালে সওয়াবের জন্য নফল কুরবানী করা জায়েয। এ কুরবানীর গোশত দাতা ও তার পরিবারও খেতে পারবে।
বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্রে করা
মাসআলা : ৬০. বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।
কুরবানীদাতা ভিন্ন স্থানে থাকলে কখন জবাই করবে
মাসআলা : ৬১. কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮
কুরবানীর চামড়া বিক্রির অর্থ সাদকা করা
মাসআলা : ৬২. কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। -আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১
কুরবানীর চামড়া বিক্রির নিয়ত
মাসআলা : ৬৩. কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১, কাযীখান ৩/৩৫৪
কুরবানীর শেষ সময়ে মুকীম হলে
মাসআলা : ৬৪. কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে মুসাফির থাকার পরে ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুকীম হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে প্রথম দিনে মুকীম ছিল অতপর তৃতীয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে তাহলেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব থাকবে না। অর্থাৎ সে কুরবানী না দিলে গুনাহগার হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৬, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৯
কুরবানীর পশুতে ভিন্ন ইবাদতের নিয়তে শরীক হওয়া
মাসআলা : ৬৫. এক কুরবানীর পশুতে আকীকা, হজ্বের কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, আলমাবসূত সারাখছী ৪/১৪৪, আলইনায়া ৮/৪৩৫-৩৪৬, আলমুগনী ৫/৪৫৯
কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা
মাসআলা : ৬৬. ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম নিজ কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নত। এই সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য। ১১ বা ১২ তারিখের গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। -জামে তিরমিযী ১/১২০, শরহুল মুনয়া ৫৬৬, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬, আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৩
কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি
মাসআলা : ৬৭. কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১
রাতে কুরবানী করা
মাসআলা : ৬৮.  ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতে কুরবানী করা জায়েয। তবে রাতে আলোস্বল্পতার দরুণ জবাইয়ে ত্রুটি হতে পারে বিধায় রাতে জবাই করা অনুত্তম। অবশ্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাতে জবাই করতে কোনো অসুবিধা নেই। -ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫১০
কাজের লোককে কুরবানীর গোশত খাওয়ানো
মাসআলা : ৬৯. কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে।-আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/২৩৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলবাহরুর রায়েক ৮/৩২৬, ইমদাদুল মুফতীন
জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া
মাসআলা : ৭০. কুরবানী পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫
মোরগ কুরবানী করা 
মাসআলা : ৭১. কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে মোরগ কুরবানী করার প্রচলন আছে। এটি না জায়েয। কুরবানীর দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয়, তবে কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৪, ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২০০ ।
(সংগৃহীত) ।

Sunday 12 July 2020

ভারতবর্ষে ইতিহাসের পাতায় শাসক দলের তালিকা : মুহাম্মদ গুরি থেকে নরেন্দ্র মোদী।

ভারতবর্ষে ইতিহাসের পাতায় শাসক দলের তালিকা :
 গৌরি সাম্রাজ্য থেকে নিয়ে নরেন্দ্র মুদি পর্যন্ত ।

1, মুহাম্মদ গৌরি।        1193
2,  কুতুব উদ্দিন আইব্যাক         
                                 1206
3, আরাম শাহ             1210
4,আল্তামিস।               1211
5, রুকনউদ্দিন ফিরুজ
   শাহ।                        1236
6, রাজিয়া সুলতান।      1236
7, মুইজ উদ্দিন বাহরাম
    শাহ ।                       1240
8, আলাদিন মাসুদ শাহ 1242
9, নাসির উদ্দিন মাহমুদ1246
10,  গিয়াস উদ্দিন বলবন
                                   1266
11,  রঙ খসরু             1286
12, মজদন কে কুবাদ   1287
13, সামস উদ্দিন কে
       মরস।                 1290

    গৌরি সাম্রাজ্য ( শাসনকাল অন্ততপক্ষে   97  শাল )
    খিলজি সাম্রাজ্য :
1, জালাল উদ্দিন ফিরুজ।           
     খিলজি ।              1290
2, ইলাহ দিন খিলজি  1292
3, শিহাব উদ্দিন উমর
   শাহ।                      1316
4,কুতুব উদ্দিন মুবারক
   শাহ।                     1316
5, নাসির উদ্দিন খসরু
    শাহ।                    1320
   খিলজি সাম্রাজ্যের সমাপ্তি "
( শাসনকাল অন্ততোপক্ষে 30
শাল )
    তুগলক সাম্রাজ্য ;-
1, গিয়াস উদ্দিন তুগলক 1st
                                   1320
2, মুহাম্মদ বিন তুগলক 2nd
                                   1325
3, ফিরুজ শাহ তুগলক 1351
4, গিয়াস উদ্দিন 2nd    1388
5,আবু বক্কর শাহ          1389
6, মুহাম্মদ তুগলক 3rd 1389
7, আলেক  জান্ডার
    শাহ 1st                   1394
8,নাসির উদ্দিন শাহ 2   1394
9,নুসরত শাহ               1395
10,    নাসির   উদ্দিন
      মুহাম্মদ শাহ 2nd  1399
11,দৌলত শাহ             1413

তুগলক সাম্রাজ্য সমাপ্ত:- (শাসনকাল অন্ততপক্ষে 37 শাল )

শয়িদ সাম্রাজ্য ;-
1,খিজির খান।             1414
2, মুয়ীজ উদ্দিন মুবারক
  শাহ 2nd।                  1421
3, মুহাম্মদ শাহ 4rt।      1434
4,ইলাহদ্বিন আলম শাহ 1445
   শয়িদ সাম্রাজ্য সমাপ্ত : ( শাসনকাল প্রায়  37 শাল )

লোধী সাম্রাজ্য :-
 1, বাহলুল লোধী।        1451
2, আলেকজান্দার
    লোধী 2nd               1489
3,ইব্রাহিম  লোধি।         1517
   
লোধী সাম্রাজ্য সমাপ্ত ;-
 ( শাসনকাল অন্ততপক্ষে 75 শাল )
মুগল সাম্রাজ্য ;-
1, জহির উদ্দিন বাবর।  1526
2, হুমায়ুন।                   1530
   মুগল সাম্রাজ্যের আংসিক পতন ":

 শুরি সাম্রাজ্য :-
1, সের শাহ শৌরি।        1539
2, ইসলাম শাহ শৌরি।   1545
3,মাহমুদ শাহ শৌরি।     1552
4,ইব্রাহিম শৌরি।          1553
5,পারবেজ শাহ শৌরি  1554
6মুবারক খান শৌরি    1554
7, আলেকজান্ডার শৌরি
                                  1555 শৌরি সাম্রাজ্য সমাপ্ত "; ( শাসনকাল প্রায়  16 শাল )

 মুগল সাম্রাজ্যের পুনঃ আগমন :-
1, হুমায়ুন পুণ: সিংহাসন   
     দখল                      1555
2,জালাল উদ্দিন আকবর
                                   1556
3, জাহাঙ্গির সালিম।     1605
4, শাহজাহান।              1628
5, আওরঙ্গজেব।          1659
6,শাহ আলম 1st         1707
7, বাহাদুর শাহ।            1712
8,ফারুক শের।             1713
9, রিফাথ রাজিদ।        1719
10,রিফাথ দৌলা।         1719
11,নি কাশিয়ার।          1719
12 মাহমুদ শাহ।           1748
13, আহমদ শাহ।          1748
14, আলমগীর।            1754
15, শাহ আলম।           1759
16, আকবর শাহ          1806
17,বাহাদুর শাহ জাফর 1837
 
    মুগল সাম্রাজ্য সমাপ্ত ; ( শাসনকাল প্রায় 315 শাল )

      বৃটিশরাজ  ;------
1, লার্ড কিং।               1858   
2,লার্ড জেমস ব্রুসিলিং1862
3, লার্ড জেন্স লোরেন্স 1864
4, লার্ড রিচার্ড মিউ।     1869
5, লার্ড নুরথবক।        1872
6, লার্ড এডুর্ড লাতিন।  1876
7, লার্ড জিব্রেজ রিপেন1880
8,লার্ড ডেফরীন।         1884
9, লার্ড হান্নি লেসেদুন। 1888
10, লার্ড বিক্টর ব্রুশিলিং
                                  1894
11, লার্ড জিব্রেজ কৃজণ
                                  1899
12,লার্ড গ্যালভার্ড মিন্টু1905
13, লার্ড চার্লস হার্ডজ  1910
14,লার্ড ফ্রিডার্কস লামস
      ফোর্ড।                  1916
15,লার্ড রেডস আইজেক
      রিডাগ।                  1921
16,লার্ড এডর্ড এরন।    1926
17,লার্ড   ফার্ম্যান  ভী                 
      লিবডান                1931
18,লার্ড   এলেকজাদ             
         লানলাতঘু          1936
19,লার্ড আরকিবালড
     ভ্যাবেল।                 1943
20,লার্ড মাউন্ট বেটন।  1947


     বৃটিশ  সাম্রাজ্যবাদী সমাপ্ত
     
   ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকা :------
 1, পন্ডিত জওহরলাল     
         নেহেরু   ।          1947
2, গুলজারিলাল নন্দা 1964
3, লালবাহাদুর শাস্ত্রী   1964
4,গুলজারিলাল নন্দা  1966
5, ইন্দিরা গান্দী।         1966
6, মুরার্জি দেশাই।       1977
7, চরণ  শিং।              1979
8, ইন্দিরা গান্দী।          1980
9, রাজিব গান্দী।          1984
10,বিশ্বনাথ প্রথাপসা।   1989
11, চন্দ্রশেখর।             1990
12,  পি   ভি  নরসিমা
        রাও।                   1991
13,       অটলবিহারী
       বাজপায়ী।            1992
14,এইচ   ডি দেবগৌড়া 1996
15,  L K গুজরাল।       1997
16, অটলবিহারী বাজপেয়ী
                                   1998
17, মনমোহন সিং         2004
 18 নরেন্দ্র মোদি। 
                                   2019
   
  অনুবাদক : -
মুফতি হুছাইন আহমদ ক্বাছিমী   
  দয়াপুর উধারবন্দ কাছাড় ।
(সংগ্রহিত)

Monday 18 May 2020

امسال عید کی نماز کیسے ادا کریں ؟

*منجانب مفتی شبیر احمد قاسمی مرادآباد*

_بسم الله الرحمن الرحيم_

*امسال عید کی نماز کیسے ادا کریں؟*

ہفتوں سے ملک کے طول و عرض سے اہل علم کی طرف سے امسال عید کی نماز کی ادائیگی سے متعلق سوالات آتے رہے ، اور یہی جواب دیا جاتا رہا کہ عید کا دن قریب آنے دیا جائے اس کے بعد حالات کے اعتبار سے غور کیا جائے گا۔ اور اب عید کا دن قریب آنے والا ہے اور لاک ڈاون کی پابندی میں کسی قسم کی نرمی کی کوئی شکل نظر نہیں آ رہی ہے؛ اس لئے چند جملے پیش خدمت ہیں! ہو سکتا ہے کہ اس سے مسلمانوں کو آسانی پیدا ہوجائے جو حسب ذیل ہیں۔

یہ بات ذہن نشین ہونی چاہیے کہ جمعہ کی نماز کی صحت کے لئے جو شرائط ہیں حضرات حنفیہ کے نزدیک عید کی نماز کی صحت کے لئے بھی وہی شرائط ہیں، نیز عید کی نماز میں تکبیرات زوائد کا اضافہ بھی لازم ہے جو جمعہ کی نماز میں نہیں ہوتی ہے اور جمعہ کی نماز میں خطبہ واجب ہوتا ہے اور نماز سے پہلے ہوتا ہے اور عید کی نماز میں خطبہ واجب نہیں ہوتا ہے بلکہ سنت ہوتا ہے اور نماز کے بعد ہی ہوتا ہے۔

اب اس تمہید کے بعد امسال عید کی نماز کے بارے میں حسب ذیل گزارشات ہیں۔
عید کی نماز کے اعتبار سے امسال مسلمان دو قسموں پر نظر آ رہے ہیں:

 *1*: وہ مسلمان جو کسی بھی درجہ میں چند افراد کے ساتھ عید کی نماز کے شرائط و واجبات کی رعایت کرتے ہوئے عید کی نماز ادا کرسکیں گے اور ایسے لوگ کروڑوں مسلمانوں میں سے بہت ہی کم تعداد میں ہونگے؛کیونکہ کروڑوں مسلمانوں میں سے پانچ دس فیصد بھی ایسے مسلمان مشکل سے ہونگے جو عید کی نماز میں امامت کر سکیں گے،
نیز حکومت کی طرف سے ایسی۔‌ پابندیاں اور سختیاں جاری ہیں کہ جن کی وجہ سے ایک امام کے پیچھے محلہ کے دس، بیس، پچاس آدمی اکٹھا ہو کر نماز نہیں پڑھ سکتے،
 اور ایک ایک محلہ میں نماز پڑھنے والے سینکڑوں اور ہزاروں کی تعداد میں ہوتے ہیں اور ہزار میں سے امامت کرنے کی ہمت ایک دو کو بھی مشکل سے ہوتی ہے،
اگر حکومت کی پابندی کی رعایت کی جائے تو پانچ ہزار میں سے ایک ہزار امامت کرنے والوں کی تعداد ہونی چاہیے اور یہ ممکن دکھائی نہیں دیتا؛
اس لیے امسال کتب فقہ کی تصریحات کے مطابق عید کی نماز اپنے شرائط کے مطابق ادا کرنے والے کروڑوں مسلمانوں میں سے بہت ہی کم تعداد میں ہونگے۔
اور بہت سے لوگ حضرت انس رضی اللہ عنہ کے اثر کے مطابق عمل کریں گے اور حضرت انس رضی اللہ عنہ کا اثر یہ ہے کہ انہوں نے بصرہ سے کچھ فاصلہ پر زاویہ نامی گاؤں میں رہائش اختیار فرمایا تھا، وہ عید کے دن اپنے گھر والوں کو اکھٹا کرکے اپنے آزاد کردہ غلام کے ذریعے عید کی نماز اسی طرح ادا کرتے تھے جس طرح شہر اور قصبات میں ادا کی جاتی ہے،
اس اثر کو حضرات حنفیہ نے اختیار نہیں فرمایا
حضرت انس رضی اللہ عنہ کا اثر ذیل میں مذکور ہے:
كان انس رضي الله عنه اذا فاتته صلاه العيد مع الامام جمع اهله فصلى بهم مثل صلاه الامام في العيد.
 ويذكر عن انس بن مالك انه اذا كان بمنزله بزاوية فلم يشهد العيد بالبصرة جمع مواليه وولده ثم يأمر مولاه عبد الله بن ابي عتبه فيصلي بهم كصلاة اهل مصر ركعتين يكبربهم كتكبيرهم.
(السنن الكبرى للبيهقي كتاب الصلاة العيدين،باب صلاة العيدين سنة اهل الاسلام حيث كانوا، مكتبه دار الفكر بيروت ٨٩/٥ رقم ٦٣٢٩
معرفه السنن والاثار: كتاب صلاة العيدين، باب الامام يأمر من يصلي بضعفة الناس العيد في المسجد، مكتبه دار الكتب العلميه بيروت ٥٩/٣ تحت رقم ١٩٤٥
تغليق التعليق: كتاب العيدين، باب اذا فاته العيد يصلي ركعتين، المكتبه الاثرية باكستان ٣٨٦/٢
وذكره البخاري تعليقا كتاب العيدين،تحت ترجمة اذا فاته العيد يصلي ركعتين،النسخة الهندية ١٣٤/١ قبل رقم ٩٨٧،٩٧٧

یہ بات بھی یاد رکھیں کہ حضرت انس رضی اللہ کے اثر کو ان حضرات نے اختیار فرمایا ہے جنہوں نے دیہات میں جمعہ اور عیدین کو جائز قرار دیا ہے۔

*2*: دوسری قسم: ملک کے طول عرض میں وہ مسلمان نظر آرہے ہیں جو کسی بھی امام کے پیچھے عید کی نماز ادا نہیں کر پائیں گے ایسے لوگوں کی تعداد پورے ملک کے اندر 60، 70 فیصد سے کم نہیں ہوں گے۔

اور جن اہل علم کی طرف سے سوالات آئے ہیں ان میں سے اکثر ایسے مسلمانوں کے بارے میں ہے جو شہروں اور قصبات میں رہتے ہیں اور خود عید کی نماز پڑھنے اور پڑھانے پر قادر نہیں ہیں مگر عید کی نماز کے لیے‌ شوق اور آرزو رکھتے ہیں،ان کے لیے شریعت کا کیا حکم ہوگا ؟
 اور شہر میں رہتے ہوئے ایسے لاکھوں مسلمان موجود ہوتے ہیں جو صرف مغرب کی نماز پڑھانے پر بھی قادر نہیں ہوتے ہیں تو یہ لوگ عید کی نماز کیسے پڑھیں گے اور کیسے پڑھائیں گے؟
اور اگر ایک جگہ چار پانچ آدمی اکھٹا ہونے پر بھی قادر ہوں اور شرائط بھی موجود ہوں لیکن ان کو نماز پڑھانے والا کوئی نہ ہوگا چونکہ عید کا دن سال بھر میں ایک مرتبہ آتا ہے اور جو مسلمان کبھی کوئی جمعہ بھی نہ پڑھتا ہو وہ بھی عید کی نماز پڑھنے کی کوشش کرتا ہے اور عید کی نماز فوت ہوجانے پر اپنے آپ کو بہت بڑا محروم سمجھتا ہے،تو ایسے لوگوں کے لئے امسال مسئلہ کا حل کیا ہوگا ؟
تو ایسے مسلمانوں کے بارے میں گزارش یہ ہے کہ وہ ہرگز غمزدہ نہ ہوں ،فقہاء کی تصریحات کے مطابق وہ  عید کے دن عید کی نماز کے اوقات کے اندر چار رکعت یا دو رکعت نفل نماز پڑھ لیں اور اللہ سے ثواب کی امید رکھیں !
اور بعض روایات میں مخصوص سورتوں کے ساتھ چار رکعت پڑھنے پر عظیم ترین اجر وثواب کا وعدہ بھی مذکور ہے، جس کی تصریح کتب فقہ میں ہے۔
اور چار رکعت کے بارے میں حضرت عبداللہ بن مسعود رضی اللہ عنہ کی روایت صراحت کے ساتھ موجود ہے اور یہ چار رکعت اگرچہ نفل ہونگی مگر امسال کے حالات کی مجبوری کی وجہ سے ان کا ثواب انشاءاللہ عید کی نماز سے کم نہیں ہوگی۔
اور عبداللہ بن مسعود رضی اللہ عنہ کی روایت اور فقہاء کی مختصر تصریحات ذیل میں درج ہے:

عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه: "من فاتته العيد فليصل اربعا"

المعجم الكبير للطبراني: مكتبه دار احياء التراث العربي ٣٠٦/٩ رقم ٩٥٣٣،٩٥٣٢
المصنف لعبد الرزاق: كتاب صلاة العيدين، باب من صلاها غير متوضئ ومن فاته العيدان، مكتبه دار الكتب العلميه بيروت ١٧٢/٣ رقم ٥٧٣٠
مصنف لابن ابي شيبه: كتاب الصلاة، باب الرجل تفوته الصلاه في العيدين كم يصلي؟ مكتبه مؤسسه علوم القران بتحقيق الشيخ محمد عوامة ٢٣٥/٤ رقم ٥٨٥٠
مجمع الزوائد: كتاب الصلاة، باب في من فاتته صلاة العيد، مكتبه دار الكتب العلميه بيروت ٢٠٥/٢
جمع الفوائد: كتاب الصلاة، باب صلاة العيدين، مكتبة مجمع الشيخ محمد زكريا السهارنفور ١٩٢/٢ رقم ١٥٨٩

وروي في ذلك عن النبي صلى الله عليه وسلم وعدا جميلا وثوابا جزيلا.

المحيط البرهاني: صلاه العيدين مكتبه المجلس العلمي ٤٩٩/٢ تحت رقم ٢٢٦٩
فتاوى قاضيخان: كتاب الصلاة، باب صلاة العيدين، مكتبه زكريا جديد ١١٥/١
البنايه شرح الهداية, مكتبة الاشرفيه ديوبند ١٢٠/٣

*خلاصہ* :

 *1*: عید کی نماز جو لوگ بغیر روک ٹوک کے کسی امام کے پیچھے پڑھنے پر قادر ہوں اور عید کی شرائط بھی پوری ہوں ان کے اوپر عید کی نماز پڑھنا واجب ہے۔

 *2*:  عید کی نماز واجب ہے اور خطبہ دینا مسنون ہے لہذا اگر کہیں عید کی نماز ادا کرنے کے لیے سارے اسباب موجود ہوں اور نماز پڑھانے والا بھی موجود ہو لیکن خطبہ دینے پر قادر نہ ہو تو ایسی صورت میں بھی عید کی نماز پڑھنا ان پر واجب ہے کیونکہ بغیر خطبہ کے بھی عید کی نماز صحیح ہو جاتی ہے۔

 *3* : بہت سے مقامات میں یہ صورت بھی پیش آنے والی ہے کہ بغیر روک ٹوک کے عید کی نماز اپنی شرائط کے ساتھ ادا کر سکتے ہیں لیکن نماز پڑھانے والا کوئی نہ ہوگا تو ایسے لوگوں پر امسال کی موجودہ حالات میں عید کی نماز واجب نہیں ہوگی،بلکہ ایسے لوگوں سے عید کی نماز معاف ہو جائے گی۔
اور چاشت کی نماز کی طرح چار رکعت نماز پڑھنا ان کے لیے مستحب اور باعث اجر ثواب ہوگا اور ایسے لوگوں کی تعداد ملک بھر کے اندر لاکھوں کروڑوں میں ہونگے۔

 *4*:  ایسے مقامات ہزاروں کی تعداد میں ہونگے جہاں کے لوگوں کو عید کی نماز کے لیے کسی طرح کی سہولت میسر نہیں ہوگی اور وہ اپنے اپنے گھروں میں ایک ایک دو دو تین تین مردوں کے دائرے میں ہوں گے وہ کسی طرح سے عید کی نماز کی صحت کے لیے تعداد کو پوری نہیں کر سکیں گے اگرچہ ان میں نماز پڑھانے کی صلاحیت کیوں نہ ہو،
تو ایسے لوگوں کے اوپر سے بھی تعداد پوری نہ ہونے کی وجہ سے عید کی نماز کا وجوب ساقط ہو جائے گا  اس لیے کہ عید کی نماز صحیح ہونے کے لئے امام کے علاوہ کم سے کم تین آدمی کا ہونا لازم ہے۔
اور یہ لوگ بھی تنہا تنہا چار رکعت نفل نماز چاشت کی طرح ادا کریں گے اور ان کو بھی انشاء اللہ پورا ثواب ملنے کی امید ہے۔

 *5*:  پورے ملک میں ایسے لوگ بھی لاکھوں کی تعداد میں ہونگے جن کو عید کی نماز ادا کرنے کے لیے تعداد کی شرط حاصل ہوگی لیکن ان میں کوئی عید کی نماز پڑھانے والا نہیں ہوگا،تو ایسے لوگوں کے اوپر سے بھی عید کی نماز پڑھنا معاف ہوجائے گا اور یہ لوگ بھی اپنی اپنی رہائش گاہوں میں تنہا تنہا چاشت کی نماز کی طرح چار رکعت ادا کریں گے ان کو بھی انشاءاللہ پورا ثواب ملے گا۔

 *6*:  ایسے لوگ بھی ملک میں بھاری تعداد میں ہونگے جن میں صحت عید کے لئے افراد کی تعداد پوری ہوگی اور نماز پڑھانے والا بھی ہوگا مگر جس جگہ پر وہ لوگ ہیں وہ جگہ جمعہ اور عیدین کی صحت کے لیے شرائط پوری نہیں کرسکتی ان کے یہاں زنان خانے کے علاوہ ایسے باہری کمرہ یا بیٹھک بھی نہیں ہوگی جس میں اذن عام ہو اور اڑوس پڑوس کے لوگ آ جا سکتے ہوں، نیز آنے جانے میں سرکاری پابندی کا خطرہ الگ سے ہے اور نہ ہی یہ لوگ سرکاری پابندی کی وجہ سے اڑوس پڑوس میں جاکر عید کی نماز ادا کرسکتے ہیں اور پورے ملک میں ایسے مسلمانوں کی تعداد بہت زیادہ ہوگی،
تو ایسے لوگوں پر سے بھی عید کی نماز معاف ہوجائے گی اور یہ لوگ بھی بجائے عید کی نماز کے چاشت کی نماز کی طرح چار رکعت نفل ادا کریں گے،ان کو بھی انشاءاللہ پورا ثواب ملنے کی امید ہے۔

 *7*:  اگر کوئی چار رکعت نہ پڑھ کر دو رکعت نفل پڑھنا چاہتا ہے تو اس کے لیے صرف دو رکعت نفل پڑھنے کی بھی گنجائش ہے۔

 *8*:  یہ نوافل مستحب ہیں واجب اور لازم نہیں ہے لیکن اللہ سے موجودہ حالت میں اجر ثواب کی پوری امید ہے۔فقط والله أعلم


۔۔۔۔۔۔۔شبیر احمد قاسمی۔۔۔۔۔۔۔۔
 خادم الافتاء و الحدیث جامعہ قاسمیہ مدرسہ شاہی مرادآباد
٢٤ رمضان ١٤٤١ھ 18 مئی 2020ء

Wednesday 13 May 2020

Covid 19 থেকে ফিরে আসা একজনের অভিজ্ঞতা:---

আচ্ছলামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু,
আজ জনস্বার্থে (সংগৃহীত) একটি পোস্ট তুলে ধরলাম ।
Covid 19  থেকে ফিরে আসা একজনের অভিজ্ঞতা:---
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏

  1. ভিটামিন সি (যথাসম্ভব)
  2. ভিটামিন ই (ট্যাবলেট পাওয়া যায়)
  3. প্রতিদিন সকাল ১১টার মধ্যে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোদ পোহানো.
  4. কমপক্ষে একটি করে ডিম প্রতিদিন।
  5. প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুম।
  6. প্রতিদিন কমপক্ষে ১.৫ লিটার জল পান এবং প্রতি বেলায় গরম খাবার খাওয়া.
  এই কাজ গুলোই হাসপাতালে করা হয়।

•• করোনা ভাইরাসের দেহের pH এর মান 5.5 থেকে 8.5

•• তাই এর চেয়ে বেশি  pH level এর খাবার গ্রহনের মাধ্যমে আমরা এর রাসায়নিক গঠন ভেংগে দিতে পারি।

•• 5.5 থেকে 8.5 এর থেকে বেশি  pH level এর কিছু খাবার হল :
  * লেবু - 9.9 pH
  * পাতিলেবু - 8.2 pH
  *এভোকাডো - 15.6 pH
  * রসুন- 13.2 pH *
  * আম- 8.7pH
  * ছোট কমলা - 8.5pH
  * আনারস- 12.7 pH
  * ডালিয়া ফুল - 22.7 pH
  * কমলালেবু  - 9.2 pH

•• আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত?

  1. গলা চুলকাবে
  2. গলা শুকিয়ে আসবে
  3. শুকনা কাশি হবে
  4. তীব্র জ্বর
  5. শ্বাস ছোট হয়ে আসবে
  6. গন্ধ ও স্বাদের অনুভুতি চলে যাবে

•• তাই এই লক্ষনগুলো দেখার সাথে সাথে গরম জল ও লেবুর রস খেতে শুরু করুন।
শেয়ার করুন আপনি জানুন অন্যকে জানতে সহায়তা  করুন।


🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏

এই মেসেজ দ্রুত  সবাইকে অবশ্যই শেয়ার করবেন ।।সংগৃহীত

Monday 11 May 2020

সংক্ষিপ্ত যাকাতের মাসাইল

সংক্ষিপ্ত যাকাতের মাসাইল
=========  ===  =======

"নামাজ, রোজার মতই যাকাত দেওয়া ফরজ"
* যাদের উপর জাকাত ফরজ *
 পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারী-যার কাছে সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর নেসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এবং সে সম্পদের উপর এক বছর অতিবাহিত হয়েছে, তার উপর যাকাত ফরজ।
★যে জিনিসের উপর যাকাত ফরজ হয়
সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসার মালে (পণ্যে) যাকাত ফরয হয়।
★স্বর্ণের নেসাব সাড়ে সাত তোলা। রুপার নেসাব সাড়ে বায়ান্ন তোলা।
প্রয়োজনের উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা বা ব্যবসায়িক মালের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ হয়, তাহলে যাকাতের নিসাব পূর্ণ হয়েছে ধরা হবে এবং এর যাকাত দিতে হবে।
★যে সম্পদের ওপর যাকাত ওয়াজিব, তার ৪০ ভাগের এক ভাগ (২.৫০ শতাংশ) জাকাত দেওয়া ওয়াজিব।
★সর্বনিম্ন কত টাকার মালিক হলে যাকাত ওয়াজিব হয়।
বর্তমান বাজারে ভরি প্রতি রূপার মূল্য ৭৫০ টাকা। মানভেদে কিছু কম বা বেশিও হয়। তাই আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রূপার মূল্য ভরি প্রতি মোটামুটি ৭৬২ টাকা ধরে সাড়ে ৫২ ভরি রূপার মূল্য আসে ৪০,০০৫ (চল্লিশ হাজার পাঁচ) টাকা।
অতএব, কেউ যদি ঋণমুক্ত হওয়া অবস্থায় সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর সর্বনিম্ন ৪০,০০০/- (চল্লিশ হাজার) টাকা বা এর সমপরিমাণ মূল্যমানের ব্যবসায়িক মালের মালিক হয়, তাহলে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে।
*হিসাব করে শতকরা আড়াই টাকা/হাজারে ২৫ টাকা/লাখে আড়াই হাজার টাকা হারে নগদ অর্থ কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে যাকাত আদায় করতে হবে।
অতএব ৪০ হাজার টাকায় ১০০০/- (এক হাজার) টাকা। এক লাখে ২,৫০০/- টাকা যাকাত আসবে জনাব মুহতারাম "জামিয়া শায়খ যাকারিয়্যা ঢাকা"  -------------------------------- 
 

              যাকাতের বিস্তারিত মাসাইল
            =====================

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد الأنبياء والمرسلين أما بعد:
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি স্তম্ভ হলো জাকাত। জাকাত মহান আল্লাহ তাবারকা ওয়া তাআলা ফরজ করে দিয়েছেন।
والزكاة أمر مقطوع به في الشرع يستغني عن تكلف الاحتجاج له، وإنما وقع الاختلاف في بعض فروعه، وأما أصل فرضية الزكاة فمن جحدها كفر.
‘জাকাত শরিয়তের এমন এক অকাট্য বিধান, যে সম্পর্কে দলিল-প্রমাণের আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। জাকাত সংক্রান্ত কিছু কিছু মাসআলায় ইমামদের মধ্যে মতভিন্নতা থাকলেও মূল বিষয়ে অর্থাৎ জাকাত ফরজ হওয়া সম্পর্কে কোনো মতভেদ নেই। জাকাতের ফরজিয়তকে যে অস্বীকার করে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়।’
ফাতহুল বারি, ৩/৩০৯
তবে জাকাত নামাজ-রোজার মতো সকলের উপর ফরজ নয়। জাকাতের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে এবং ফরজ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে।
ইনশাআল্লাহ আজকের এই প্রবন্ধে জাকাত সংক্রান্ত সমৃদ্ধ একটি আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

★জাকাতের সংজ্ঞা : জাকাত শব্দের অর্থ শুচিতা , পবিত্রতা শুদ্ধি ও বৃদ্ধি।
পরিভাষায় : মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিদেরকে মালিক বানিয়ে দেওয়ার নাম জাকাত।

★জাকাত আদায়ের উপকারিতা :
১) গরীবের প্রয়োজন পূর্ণ হয়। ২) ক্রমান্বয়ে পুঁজিতন্ত্রের মূলোৎপাটন হয়। ৩) জাকাতের মাধ্যমে সম্পদ কুক্ষিগত করার মানসিকতা শেষ হয়ে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি হয়।৪) গরীব-ধনীর মাঝে সেতুবন্ধন সৃষ্টি হয়।
৫) সম্পদে বরকত হয় এবং সম্পদ বৃদ্ধি পায়। ৬) জাকাত প্রদান করলে হৃদয়ের মাঝে গরীব-মিসকিন ও অভাবী মানুষের প্রতি মায়া-মমতা সৃষ্টি হয়। ৭) কৃপণতার মতো চরম নিন্দিত ও অসৎ গুণ জাকাতের মাধ্যমে দূরীভূত হয়। ৮) সর্বোপরি মহান আল্লাহর বিধান পালন করার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।

★জাকাত আদায় না করার অপকারিতা :
জাকাত আদায় না করার অনেক অপকারিতা রয়েছে।
★ জাকাত আদায়ের উল্লেখিত সকল উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হওয়া। এছাড়াও অনেক উপকারিতা রয়েছে।এ সম্পর্কে একটি আয়াত ও একটি হাদিস উল্লেখ করাই যথেষ্ট মনে করছি।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَ لَا یَحْسَبَنَّ الَّذِیْنَ یَبْخَلُوْنَ بِمَاۤ اٰتٰىهُمُ اللّٰهُ مِنْ فَضْلِهٖ هُوَ خَیْرًا لَّهُمْ ؕ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ ؕ سَیُطَوَّقُوْنَ مَا بَخِلُوْا بِهٖ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ ؕ وَ لِلّٰهِ مِیْرَاثُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِیْر

আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদেরকে দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তারা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, এটা তাদের জন্য মঙ্গল। না, এটা তাদের জন্য অমঙ্গল। যে সম্পদে তারা কৃপণতা করেছে কিয়ামতের দিন তা-ই তাদের গলায় বেড়ি হবে। আসমান ও জমিনের স্বত্ত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্পর্কে  বিশেষভাবে অবগত।
সুরা আলইমরান : ১৮০

হাদিস শরিফে এসেছে- ‘যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার জাকাত দেয়নি কিয়ামতের দিন তা বিষধর স্বর্পরূপে উপস্থিত হবে এবং তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার উভয় অধরপ্রান্তে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ঐ ধন, আমিই তোমরা পুঞ্জিভূত সম্পদ।’ (সহহ বুখারি)

★জকাত কার উপর ফরজ  ?
 স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারী-যার কাছে সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর নেসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এবং সে সম্পদের উপর এক বছর অতিবাহিত হয়েছে, তার উপর জাকাত ফরজ।
আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৯ বাদায়েউস সানায়ে ২/৭৯,৮২,মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৬/৪৬১-৪৬২

★যে সব সম্পদের উপর জকাত ফরজ হয় :
১) সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসার পণ্যে জাকাত ফরজ হয়।
২) স্বর্ণ ও রুপার অলংকার কখনো ব্যবহার করা হোক অথবা না হোক তার উপর জাকাত আসবে।
অলংকার ছাড়া স্বর্ণ ও রুপার অন্যান্য সামগ্রীর উপর‌ও জাকাত আসবে।
সুনানে আবু দাউদ ১/২৫৫;  সুনানে নাসায়ি হাদিস ২২৫৮; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৫৪-৭০৬১,৭০৬৩-৭০৬৫, ৭০৬১,৭০৬৬, ৭১০২ মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ,হাদিস  ৯৯৭৪;৬/৪৬৯-৪৭১

৩) জামা কাপড় ইত্যাদি সামগ্রীতে সোনা-রুপার কারুকাজ থাকলে সেগুলোর জাকাত দিতে হবে।
মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক হাদিস ৭০৬৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস    ১০৬৪৮,১০৬৪৯,১০৬৫১
সোনা-রুপা ছাড়া অন্য কোনো মূল্যবান ধাতুর উপর জাকাত ফরজ নয়। হীরা,মনি-মুক্তা ইত্যাদি এগুলোর উপর জাকাত ফরজ নয় ।তবে যদি এগুলো ব্যবসার জন্য হয় , তাহলে মূল্য হিসাব করে জাকাত দিতে হবে।
মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৬১-৭০৬৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৬/৪৪৭-৪৪৮

৪) টাকা-পয়সার উপর যাকাত ফরজ হয়।
৫) ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, সার্টিফিকেট,ব্যাংক ব্যালেন্স ইত্যাদিও নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের উপরও জাকাত ফরজ হয়।
উল্লেখ্য , টাকা পয়সার উপর জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ব্যবসায় লাগানো শর্ত নয়।বরং টাকা-পয়সা এমনিতে রেখে দিলেও সেগুলোর উপর জাকাত ফরজ হয়।
 আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৬২,৩০০

৬) হজ করার জন্য , ঘরবাড়ি নির্মাণ করার জন্য এবং ছেলে মেয়ের বিবাহ শাদীর জন্য যে টাকা পয়সা জমা রাখা হয় সেগুলোর উপর জাকাত ফরজ হয়। যদি সে অর্থ নেসাবের সমপরিমাণ হয় অথবা নেসাব যোগ্য অন্যান্য সম্পদের সাথে মিলে নেসাব সমপরিমাণ হয় এবং এর উপর এক বছর অতিবাহিত হয়।
মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস ৭০৩২; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস ১০৩২৫

৭) ব্যবসার নিয়তে কোনো কিছু ক্রয় করলে (চাই তা স্থাবর সম্পত্তি হোক অথবা অস্থাবর সম্পত্তি হোক) এগুলো ব্যবসায়ী দ্রব্য হিসেবে গণ্য হবে এবং তার মূল্যের উপর জাকাত আসবে। ঠিক তেমনিভাবে দোকানে ব্যবসার নিয়তে যে সকল পণ্য রাখা হয়েছে সেগুলোর মূল্যের উপর জাকাত আসবে।
وفى الهندية: الزكاة واجبة فى عروض التجارة كائنة ما كانت إذا بلغت نصابا من الورق والذهب الفتاوى الهندية-1/179

সুনানে আবু দাউদ ১/২১৮; সুনানে কুবরা বায়হাকি ৪/১৫৭; মুয়াত্তা ইমাম মালেক পৃ ১০৮; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক হাদিস ৭১০৩,৭১০৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস ১০৫৫৭, ১০৫৬০, ১০৫৬৩
হিন্দিয়া ,১/১৭৯

৯) মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্ধৃত টাকা-পয়সা যদি নেসাব পরিমাণ হয় এবং এক বছর স্থায়ী হয়, তাহলে বছর শেষে জাকাত ফরজ হয়।
মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৯১।

★নেসাবের বিবরণ :
স্বর্ণের ক্ষেত্রে জাকাতের নিসাব হলো বিশ মিসকাল। আধুনিক হিসাবে সাড়ে সাত ভরি।
সুনানে আবু দাউদ ১/২২১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক  হাদিস ৭০৭৭, ৭০৮২
রুপার ক্ষেত্রে নিসাব হলো দু’শ দিরহাম।
আধুনিক হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা
সহিহ বুখারি, হাদিস ১৪৪৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস ৯৭৯
এ পরিমাণ সোনা-রুপা থাকলে জাকাত দিতে হবে।
نِصَابُ الذَّهَبِ عِشْرُونَ مِثْقَالًا وَالْفِضَّةِ مِائَتَا دِرْهَمٍ كُلُّ عَشْرَةِ) دَرَاهِمَ (وَزْنُ سَبْعَةِ مَثَاقِيلَ) الخ (أَوْ) فِي (عَرْضِ تِجَارَةٍ قِيمَتُهُ نِصَابٌ) الْجُمْلَةُ صِفَةُ عَرَضٍ وَهُوَ هُنَا مَا لَيْسَ بِنَقْدٍ.
رد المحتار، كتاب الزكاة، باب زكاة المال-2/224-228

★প্রয়োজনের উদ্ধৃত টাকা পয়সা বা ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়, তাহলে জাকাত দিতে হবে।
★তেমনিভাবে সোনা-রুপা বা টাকা-পয়সা কিংবা ব্যাবসায়িক পণ্যের মূল্য যদি এককভাবে নেসাব সমপরিমাণ না হয়, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী রয়েছে - যেগুলো একত্রিত করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য সমপরিমাণ হয়, তাহলে এগুলোর জাকাত দিতে হবে।
মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস ৬৭৯৭,৬৮৫১,৭০৬৬,৭০৮১ মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস ৯৯৩৭।

★কারো কাছে সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য পৃথকভাবে বা সম্মিলিতভাবে নিসাব পরিমাণ ছিলো, বছরের মাঝে এ জাতীয় আরো কিছু সম্পদ কোনো সূত্রে পাওয়া গেলো, এক্ষেত্রে নতুন প্রাপ্ত সম্পদ পুরাতন সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে এবং পুরাতন সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের জাকাত দিতে হবে। বছরের মাঝে যা যোগ হয়েছে তার জন্য পৃথক বছর পূর্ণ হওয়া লাগবে না।
মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস ৬৮৭২,৭০৪০,৭০৪৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা , হাদিস ১০৩২৫,১০৩২৭।

★ভেড়া বা ছাগল প্রভৃতির জাকাতের নেসাব :
১) ১ থেকে ৩৯টি পর্যন্ত যাকাত প্রযোজ্য নয়।
২) ৪০থেকে ১২০টি পর্যন্ত একটি ভেড়া/ছাগল জাকাত দিতে হবে।
৩) ১২১ থেকে ২০০টি পর্যন্ত দুইটি ভেড়া/ছাগল জাকাত দিতে হবে।
৪) ২০১ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত ৩টি ভেড়া/ছাগল জাকাত দিতে হবে।
এর অতিরিক্ত প্রতি ১০০টির জাকাত
১টি করে ভেড়া/ছাগল দিতে হবে।

★গরু, মহিষ ও অন্যান্য গবাদি পশুর জাকাত আদায়ের নিয়ম :
১) ১ থেকে ২৯টি পর্যন্ত জাকাত প্রযোজ্য নয়।
২) ৩০ থেকে ৩৯টি পর্যন্ত এক বছর বয়সী ১টি বাছুর জাকাত দিতে হবে।
৩) ৬০টি এবং ততোধিক প্রতি ৩০টির জন্য ১ বছর বয়সী এবং প্রতি ৪০টির জন্য ২ বছর বয়সী বাছুর জাকাত দিতে হবে।

★সরকারী প্রতিষ্ঠানে বা যে সকল কর্পোরেশনে সরকারী নিয়মানুযায়ী প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তন করা হয়, উক্ত প্রভিডেন্ট ফান্ডের কর্তৃনকৃত টাকার উপর জাকাত ওয়াজিব হবে না। তবে এই টাকা গ্রহণ করার পর একবছর পূর্ণ হলে সম্পূর্ণ টাকার উপর জাকাত প্রদান করতে হবে।

★ব্যবসার জন্য গরু বকরি বা মুরগির ফার্ম করা হয় । তো এই ফার্মের গরু, বকরি ও মুরগির উপর জাকাত আসবে না। বরং এগুলোর বিক্রিত মূল্যের উপর জাকাত আসবে।
 ফাতাওয়া উসমানি : ২/৩৯

★বীমা কোম্পানিতে যে পরিমাণ টাকা রাখা হয়, সে টাকার জাকাত আদায় করতে হবে।
 ফাতাওয়া উসমানি : ২/৩৯

★কম্পানির লেনদেন যদি বৈধ হয় , তাহলে তার শেয়ার ক্রয় করা জায়েজ। এ ক্ষেত্রে শেয়ারের মূল্যের উপর জাকাত আসবে।
ফাতাওয়া উসমানি : ২/৩৯

★সিকিউরিটি মানি ও অ্যডভান্সের জাকাতের বিধান :
ভাড়াদাতা ভাড়াগ্রহীতা থেকে দুই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করে থাকে।
 ১) ভাড়াদাতা জামানত হিসেবে ভাড়াগ্রহিতা থেকে যে টাকাটা গ্রহণ করে থাকে, ভাড়ার চুক্তি শেষে তা আবার ভাড়াগ্রহিতাকে ফেরত দিয়ে দিতে হয়, যাকে সিকিউরিটি মানি বলে। ২) এককালীন গ্রহণ করা টাকা প্রতি মাসেই কিছু কিছু করে ভাড়া হিসাবে কাটা হয়, যাকে অ্যাডভান্স বলে।

সিকিউরিটি মানি ভাড়াদাতার কাছে থাকলেও এর মালিকানা থাকে ভাড়াটিয়ার। কারণ চুক্তি অনুযায়ী ভাড়ার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে  সিকিউরিটি মানি ভাড়াটিয়া ফেরত পায়। এজন্য সিকিউরিটি মানের জাকাত ভাড়াটিয়া প্রদান করবে।
অন্যদিকে অ্যাডভান্স হিসেবে প্রদানকৃত টাকার মালিকানা ভাড়াটিয়া থেকে ভাড়াদাতার কাছে চলে যায়। তাই তো এ টাকা পরবর্তীতে ফেরত দিতে হয় না। সুতরাং অ্যাডভান্স হিসেবে নেওয়া টাকার জাকাত ভাড়াদাতার উপর আবশ্যক হবে।
জাদিদ ফিকহি মাসায়েল : ১/১৪৭-১৪৮; মালে হারাম আওর উসকে মাসারেফ ওয়া আহকাম : ৮৫

আর যদি টাকাটা শুধু জামানত হিসেবে বা ঋণ হিসেবে দোকান ও বাড়ির মালিকের কাছে রাখা হয়, তাহলে এটাকার মালিক যিনি দোকান বা বাসা ভাড়া নিয়েছেন  তিনিই থাকেন, এজন্য এজন্য এটা কার জাকাত তার উপরে আসবে।

বর্তমানে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার জন্য সিকিউরিটি বাবদ কিছু টাকা রাখতে হয় । এ টাকা প্রতিষ্ঠান শুধু সংরক্ষণ করে ।নির্দিষ্ট মেয়াদ পরে টাকা প্রদানকারীকে ফেরত দেওয়া হয় । এজন্য এটাকার জাকাত প্রদানকারী আদায় করবে।
তেমনি ভাবে ব্যাংকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিকিউরিটি হিসেবে গ্যারান্টি মানি প্রদান করতে হয়। এটাকা একাউন্ট হোল্ডারের মালিকানায় থাকে। নির্দিষ্ট মেয়াদ পরে অ্যাকাউন্ট হোল্ডার গ্যারান্টি হিসেবে প্রদানকৃত উক্ত টাকা উত্তোলন করতে পারে।
এটাকাও জাকাতযোগ্য। এটাকার জাকাত অ্যাকাউন্ট হোল্ডার আদায় করবে।

বছরের শুরু ও শেষে জাকাত সমপরিমাণ  সম্পদ থাকলে বছর শেষে জাকাত দিতে হবে। বছরের মধ্যখানে  সম্পদ কমে গেলেও তাতে কোন সমস্যা নেই। তবে যদি সম্পদ একেবারে নষ্ট হয়ে যায় , তাহলে পুনরায় যখন নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তখন থেকে এক বছর পূর্ণ হওয়ার পরে জাকাত আদায় করবে।

★ফায়দা★
স্বর্ণের ক্ষেত্রে জাকাতের নিসাব হলো বিশ মিসকাল। রুপার ক্ষেত্রে নিসাব হলো দু’শ দিরহাম। এ পরিমাণ সোনা-রুপা থাকলে জাকাত দিতে হবে।
نِصَابُ الذَّهَبِ عِشْرُونَ مِثْقَالًا وَالْفِضَّةِ مِائَتَا دِرْهَمٍ كُلُّ عَشْرَةِ) دَرَاهِمَ (وَزْنُ سَبْعَةِ مَثَاقِيلَ) الخ (أَوْ) فِي (عَرْضِ تِجَارَةٍ قِيمَتُهُ نِصَابٌ) الْجُمْلَةُ صِفَةُ عَرَضٍ وَهُوَ هُنَا مَا لَيْسَ بِنَقْدٍ.
رد المحتار، كتاب الزكاة، باب زكاة المال-2/224

সুনানে আবু দাউদ ১/২২১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক  হাদিস ৭০৭৭, ৭০৮২
সহিহ বুখারি, হাদিস ১৪৪৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস ৯৭৯, রদ্দুল মুহতার ,২/২২৪
★এখন আমরা জানবো , ২০ মিসকাল এবং ২০০ দিরহামে কত তোলা হয় ?
বর্তমানে মার্কেটে দুই ধরনের তোলার হিসাব পাওয়া যায়।
১) ১২ মাশায় ১ তোলা। গ্রাম হিসেবে ১২ মাশায় ১১ গ্রাম ৬৬৪ মিলিগ্রাম হয়।
 তো ১২ মাশায় ১ তোলা করে হিসাব করলে ২০ মিসকালে হয় সাড়ে সাত তোলা।
আর ২০০ দিরহামে হয় সাড়ে বায়ান্ন তোলা।
গ্রাম হিসেবে বিশ মিসকাল বা সাড়ে সাত তোলায় ৮৭ গ্রাম ৪৮ মিলিগ্রাম হবে।
আর ২০০ দিরহাম বা সাড়ে বায়ান্ন তোলায় ৬১২ গ্রাম ৩৬ মিলিগ্রাম হবে।

২) ১০ গ্রামে ১ তোলা।এহিসাবে ২০ মিসকালে হবে ৮ তোলা ৭ গ্রাম ৪৮০ মিলিগ্রাম।
গ্রাম হিসাবে ৮৭ গ্রাম ৪৮০ মিলিগ্রাম হবে।
আর ২০০ দিরহামে ৬১ তোলা ২ গ্রাম ৩৬০ মিলিগ্রাম হবে।গ্রাম হিসাবে ৬১২ গ্রাম ৩৬০ মিলিগ্রাম হবে।

★যেসব জিনিসের জাকাত দিতে হয় না :
১) ব্যবহারের আসবাবপত্র এবং গার্হস্থ্য সামগ্রীর জাকাত দিতে হয় না।
মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক  হাদিস ৭০৯৩,৭১০২; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা হাদিস ১০৫৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫
২) পরিধেয় বস্তুর উপর জাকাত ফরজ হয় না।
রদ্দুল মুহতার ২/২৬৫

৩) নিজ ও পোষ্য পরিজনের খাবার, ব্যবহারের কাপড় ইত্যাদি, বাসস্থান এবং বাহনের উপর জাকাত ফরজ হয় না।
মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৯-২০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা হাদিস ১০২০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫

৪) দোকান-পাট , ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের যে সকল পণ্য ব্যবসার জন্য নয় , সেগুলোর উপর জাকাত ফরজ হয় না। তেমনিভাবে দোকান-পাট , ঘর-বাড়ি ইত্যাদি তৈরি করে ভাড়া দিলেও সেগুলোর উপর জাকাত ফরজ নয়। তবে বাড়ার মাধ্যমে অর্জিত টাকা যদি নেসাব পরিমাণ হয় বা অন্যান্য নেসাব যোগ্য সম্পদের সাথে মিলিয়ে নেসাব পরিমাণ হয়, তাহলে সেই টাকার উপর জাকাত আসবে।

★ঋণের উপর জাকাত আসবে কি না ?
ঋণ দুই ধরনের হয়ে থাকে।
১) প্রয়োজনাদি পূর্ণ করার জন্য বাধ্য হয়ে ঋণ নেওয়া ।
২) ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ঋণ নেওয়া।
প্রথম প্রকার ঋণ বাদ দেওয়ার পরে যদি কারো কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর জাকাত ফরজ হবে ।অন্যতায় ফরজ হবে না।
মুয়াত্তা মালেক ১০৭; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস ৭০০৩, ৭০৮৬, ৭০৮৯, ৭০৯০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৬/৫৪৭-৫৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৩
কিন্তু যে সকল ঋণ উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয়। যেমন কল-কারখানা বানানোর জন্য ঋণ নেওয়া, বিল্ডিং বানিয়ে বিক্রি করা বা ভাড়া দেওয়ার জন্য ঋণ নেওয়া, ব্যবসা সম্প্রসারণ করার জন্য ঋণ নেওয়া ইত্যাদি। তো এ ধরনের ঋণের কারণে জাকাতে কম করা যাবে না।
মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক , হাদিস ৭০৮৭

★কাউকে যদি টাকা ঋণ দেওয়া হয় অথবা কারো কাছে কোনো পণ্য বিক্রি করার কারণে তার কাছে টাকা পাওনা থাকে, তাহলে সে টাকার উপর জাকাত ফরজ হয়। তবে সে টাকা উসুল হওয়ার আগে জাকাত দেওয়া জরুরি নয়। তবে জাকাত দিলে তা আদায় হয়ে যাবে। যদি পাওনা টাকা কয়েক বছর পরে উসুল হয়, তাহলে উসুল হওয়ার পরে বিগত বছরের জাকাত আদায় করতে হবে।
মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস ৭১১১-৭১১৩,৭১২১,৭১২৩,৭১২৮, ৭১১৬,৭১২৯,৭১৩১মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ,হাদিস ,১০৩৪৭, ১০৩৫৬,১০৩৪৬,১০৩৫৬

★জাকাত কীভাবে আদায় করবে ?
১)জাকাত আদায় হওয়ার জন্য জাকাত প্রদানকারীর নিয়ত করা জরুরি । এ জন্য জাকাত আদায়ের সময় নিয়ত করে নিবে।
রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮

২)যে সম্পদের উপর জাকাত ফরজ হয়েছে সে সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ আদায় করা ফরজ। সম্পদের মূল্য হিসাব করে শতকরা আড়াই টাকা করে জাকাত আদায় করবে।
★ সর্বনিম্ন কত টাকার মালিক হলে জাকাত ওয়াজিব হয় ?
বর্তমান বাজারে ভরি প্রতি রুপার মূল্য ৭৫০ টাকা। মানভেদে কিছু কম বা বেশিও হয়। তাই আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রুপার মূল্য ভরি প্রতি মোটামুটি ৭৬২ টাকা ধরলে সাড়ে ৫২ ভরি রুপার মূল্য  ৪০,০০৫ (চল্লিশ হাজার পাঁচ) টাকা হয়।
সুতরাং কারো কাছে যদি ঋণ ও মৌলিক প্রয়োজন উদ্ধৃত ৪০ হাজার টাকা থাকে অথবা ৪০ হাজার টাকার সমপরিমাণ ব্যবসায়িক পণ্য থাকে , তাহলে তার উপর জাকাত আসবে।
হিসাব করে শতকরা আড়াই টাকা/হাজারে ২৫ টাকা/লাখে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ অর্থ কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে জাকাত আদায় করতে হবে।
সুনানে নাসায়ি হাদিস ২২৩০-২২৩৩; সুনানে আবু দাউদ হাদিস ১৫৭০-১৫৭২; সুনানে তিরমিযি হাদিস ৬২৩; সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস ১৮০৩ ; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদিস ৭১৩৩-৭১৩৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা হাদিস ১০৫৩৯-১০৫৮১
৪) ৪০ হাজার টাকায় জাকাত আসবে ১০০০ (এক হাজার) টাকা।

★যাদের জাকাত দেওয়া যাবে:
জাকাত কাকে দেওয়া যাবে - এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,

اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلْفُقَرَآءِ وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْعٰمِلِیْنَ عَلَیْهَا وَ الْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الْغٰرِمِیْنَ وَ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِ ؕ فَرِیْضَةً مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌ حَكِیْمٌ

জাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও যাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য, যাদের মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। এ আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
সূরা তাওবা : ৬০
★জাকাত শুধু মুসলমানদেরকেই দেওয়া যাবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা অন্য কোনো অমুসলিমকে জাকাত দেওয়া হলে জাকাত আদায় হবে না। তবে নফল দান-খায়রাত অমুসলিমকেও করা যায়।
মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদিস  ৭১৬৬,৭১৬৭, ৭১৭০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৬/৫১৬-৫১৭

১.ফকির অর্থাৎ যাদের নিকট সন্তান-সন্ততির প্রয়োজন সমাধা করার মত সম্বল নেই অথবা যাদের নিকট জাকাত ফেতরা ওয়াজিব হওয়ার পরিমাণ অর্থ সম্পদ নেই।
২. মিসকিন অর্থাৎ যারা সম্পূর্ণ রিক্তহস্ত অথবা যাদের জীবিকা অর্জনের ক্ষমতা নেই।
৩.ইসলামী রাষ্ট্র হলে তার জাকাত তহবিলের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ।
৪. যাদের উপর ঋণের বোঝা চেপেছে।
৫. যারা আল্লাহর রাস্তায় শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত।
৬. মুসাফির ব্যক্তি ( বাড়ীতে সম্পদশালী হলেও) সফরে রিক্তহস্ত হয়ে পরলে।
৭.জাকাত দাতার ভাই-বোন, ভাতিজা- ভাতিজী, ভগ্নিপতি, ভাগ্না- ভাগ্নী, চাচা-চাচী, খালা-খালু, ফুফা-ফুফী, মামা-মামী, স্বাশুড়ী, জামাই, সৎ বাপ ও সৎ মা ইত্যাদি (যদি এরা গরীব হয়)।
৮. নিজের গরিব চাকর-নওকর বা কর্মচারীকে দেওয়া যায়। তবে এটা বেতন বাবদ কর্তন করা যাবে না। ( আহকামে জিন্দিগী)
৯. যাদেরকে জাকাত দেওয়া হবে , তাদেরকে জাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে।

★যাদেরকে জাকাত দেওয়া যাবে না:

১) কাফির। ২) নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক এবং তার অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান। ৩)  বনু হাশেমের লোক। ৪) মা, বাবা, দাদা, দাদি, নানা, নানি একইভাবে ওপরের স্তরের কাউকে জাকাত দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ যাদের মাধ্যমে দুনিয়ায় এসেছ, তাদেরসহ ওপরের স্তরের কাউকে জাকাত দেওয়া যাবে না। ৫) নিজের মাধ্যমে যারা দুনিয়ায় এসেছে, অর্থাৎ ছেলে-মেয়ে ও তাদের সন্তানাদি একইভাবে তাদের সন্তানদের জাকাত দেওয়া যাবে না। ৬) মসজিদ, মাদরাসা , রাস্তা, পুল ও  অন্যান্য জনকল্যাণমূলক কাজে জাকাতের টাকা ব্যয় করা যাবে না। ৭) স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে জাকাত দিতে পারবে না।
ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৮৮, ১৮৯; তাতারখানিয়া : ৩/২০৬; আদদুররুল মুখতার :৩/২৯৪, ২৯৫)
৮) জাকাতের টাকা দিয়ে মৃত ব্যক্তির কাফনের ব্যবস্থা করা যাবে না।

মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝার তাওফিক দান করেন, এবং আমল করার তৌফিক দান করেন।
আলোচনা করেছেন
হজরত মাওলানা মুফতী  আবুল বসর সরাইলী হাফীজাহুললা।