Tuesday 22 June 2021

কি কি কাজ করলে শিরক হয় ?

 কি কি কাজ করলে শিরক হয় ?

শিরক সম্পর্কে জানলেন না তো আপনার এ জীবন-ই বৃথা! নামাজ, রোজা, হজ্জ,দানের মতো বড় বড় ইবাদতকে এটা ধ্বংস করে দেয়। আর শেষ ফলাফল হলো স্থায়ী ভাবে জাহান্নামে অবস্থান।


🔘আল্লাহ্ ব্যাতিত অন্য কারো নামে কসম করা শিরক।

__(আবু দাউদ :৩২৩৬(ইফা)


🔘কোন কিছুকে শুভ-অশুভ লক্ষণ বা কুলক্ষণ মনে করা শিরক।

__(বুখারি:৫৩৪৬,আবু দাউদ:৩৯১০)


🔘মাজার ও কোন পীর-ফকির কিংবা কারো নিকট সিজদা দেয়া শিরক।

__(সূরা জীন:২০,মুসলিম :১০৭৭,আবু দাউদ, মুওাফাকুন আলাই)


🔘আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো বা যেকোন পীর-আওলিয়া কিংবা মাজারের নামে মানত করা শিরক।

__(সহীহ বুখারি:অধ্যায়:তাকদির)


🔘কেউ পেছন দিক থেকে ডাক দিলে কিংবা নিজে যাএার সময় পিছন ফিরে তাকালে যাএা অশুভ হয় এই ধারণা বিশ্বাস করা শিরক।

__(বুখারি,আবু দাউদ :৩৯১০)


🔘কোন বিপদে পড়ে আল্লাহকে বাদ দিয়ে “ও মা,ও বাবা” ইত্যাদি বলে এই রকম গায়েবি ডাকা শিরক। বিপদে পড়লে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন” বলতে হয়।

__(সূরা বাকারাহ:১৫৬)


🔘তোর ভবিষ্যত অন্ধকার,’তোর কপালে বহুত কষ্ট আছে, এই ধরনের গায়েবি কথা কাউকে বলা শিরক।

__(সূরা নমল:৬৫,আল জিন :২৫-২৬,আনাম:৫৯)


🔘হোঁচট খেলে কিংবা পেচা ডাকলে সামনে বিপদ আছে এই ধারনা শিরক।

__(সূরা আনাম:১৭,ইউনুস :১০৭)


🔘রোগ ব্যাধি বা বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেতে শরীরে পিতলের বালা, শামুক, ঝিনুকের মালা, সুতা, কিংবা যেকোন প্রকারের বস্ত লটকানো শিরক।

__(তিরমিযী, আবু দাউদ ও হাকেম)


🔘সকালে বেচাকেনা না করে কোন কষ্টমারকে বাকি দিলে কিংবা সন্ধ্যার সময় কাউকে বাকি দিলে ব্যাবসায় অমঙ্গল হয় এই ধারনা করা শিরক।

__(আবু দাউদ :৩৯১০)


🔘সফলতা কিংবা মঙ্গল লাভের জন্য এবং অমঙ্গল থেকে রক্ষা পেতে যেকোন প্রকার আংটি ব্যবহার করা শিরক।

__(সূরা আনাম:১৭,ইউনুস:১০৭)


🔘যে কোন জড় বস্তুকে সম্মান দেখানো তথা তাযীম করা বা তার সামনে নিরবতা পালন করা শিরক।

যেমন:পতাকা,স্মৃতিসৌধ, শহিদ মিনার কিংবা মাজার ইত্যাদি।

__(সূরা বাকারাহ:৩২৩৮,আহকাফ:৫,ফাতহুল বারি ৭/৪৪৮,আবু দাউদ :৪০৩৩)


🔘আল্লাহর ছাড়া অন্য কারো সন্তষ্টি অর্জনের জন্য কিংবা লোক দেখানো ইবাদত করা শিরক।

__(সূরা আনাম:১৬২,বাইয়িনাহ:৫,কাহফ:১১০,ইমরান:৬৪,ইবনে মাজাহ হা নং ৫২০৪)


🔘আল্লাহ্ ব্যাতিত কোন গনক বা অন্য কেউ গায়েবে জানে এই কথা বিশ্বাস করা শিরক।

__(সূরা নমল:৬৫,আল জিন:২৬,আনাম:৫৯)


🔘পায়রা/কবুতর উড়িয়ে শান্তি কামনা করা শিরক, কারণ শান্তিদাত একমাত্র আল্লাহ্

__(সূরা হাশর:২৩)


🔘আল্লাহর ছাড়া কোন পীর আওলিয়া এবং কোন মাজারের নিকট দোয়া করা বা কোন কিছু চাওয়া শিরক।

__(সূরা ফাতিহা :৪আশ

শোআরা:২১৩,গাফির:৬০,তিরমিযী)


🔘”আপনি চাইলে এবং আল্লাহ্ চাইলে এই কাজটি হবে”এই কথা বলা শিরক।

–(নাসাঈ শরিফ) এখানে শুধু আল্লাহ্ চাইলে হবে, বলা যেতে পারে।


এইরকম আরো অসংখ্য শিরক সমাজে বিদ্যামান।


আল্লাহ্ বলেন, অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে,কিন্তু সাথে শিরকও করে।

__(সূরা ইউসুফ :১০৬)


মনে রাখবেন,,

শিরক এমন একটি গুনাহ যা করলে ঈমান এবং পূর্বের সমস্ত আমল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ যেকোন গুনাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিবেন কিন্তু শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না।

আল্লাহ্ বলেন,,

নিসন্দেহে আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে যেকোন গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন কিন্তু শিরকের গুনাহ কখনো ক্ষমা করবেন না।

__(সূরা নিসা :৪৮,১১৬)


নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং জাহান্নামকে অবধারিত করে দেন।

__(সূরা মায়িদাহ:৭২)


রাসুল্লাহ্ (সাঃ)বলেছেন,,

“আমার সামনে জিব্রাঈল আবির্ভৃত হলেন,তিনি বললেন,আপনি আপনার উম্মতদের সুসংবাদ দিন,যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা অবস্থায় মারা যাবে,সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম,যদিও সে যিনা করে এবং যদিও সে চুরি করে থাকে?তিনি বললেন:যদিও সে যিনা করে এবং যদিও সে চুরি করে থাকে।

__(সহীহ বুখারি:১২ ৩৭,মুসলিম :৯৪)


শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় ধ্বংসাত্মাক বিষয়, শত পাপ করলেও কিয়ামতের দিন তা ক্ষমার সম্ভবনা আছে কিন্তু শিরকের পাপ ক্ষমার কোন সম্ভবনাই নেই এবং তা নিসন্দেহে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।


আল্লাহ্ সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন ৷

Copied

Monday 19 April 2021

মুফতী তাকী উসমানী সাহেবের রমজান বিষয়ক আধুনিক ৩০টি মাসআলা

 মুফতী তকী উসমানী সাহেবের রমজান বিষয়ক আধুনিক ৩০টি মাসআল👇



পবিত্র মাহে রমজানের রোজা ভঙ্গ হওয়া এবং না হওয়ার বিষয়ে মুফতী তকী উসমানী কর্তৃক সময়োপযোগী ৩০ টি মাসআলা।


১. ইনজেকশন (Injection): ইনজেকশন নিলে রোযা ভাঙ্গবে না। (জাওয়াহিরুল ফতওয়া)


২. ইনহেলার (Inhaler): শ্বাসকষ্ট দূর করার লক্ষ্যে তরল জাতীয় একটি ঔষধ স্প্রে করে মুখের ভিতর দিয়ে গলায় প্রবেশ করান হয়, এভাবে মুখের ভিতর ইনহেলার স্প্রে করার দ্বারা রোজা ভেঙ্গে যাবে। (ইমদাদুল ফতওয়া)


৩. এনজিও গ্রাম (Angio Gram): হার্ট ব্লক হয়ে গেলে উরুর গোড়া দিয়ে কেটে বিশেষ রগের ভিতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত যে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয় তার নাম এনজিও গ্রাম। এযন্ত্রটিতে যদি কোন ধরনের ঔষধ লাগানো থাকে তারপরেও রোজা ভাঙ্গবে না। (ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা)


৪. এন্ডোস কপি (Endos Copy): চিকন একটি পাইপ যার মাথায় বাল্ব জাতীয় একটি বস্তু থাকে। পাইপটি পাকস্থলিতে ঢুকানো হয় এবং বাইরে থাকা মনিটরের মাধ্যমে রোগীর পেটের অবস্থা নির্নয় করা হয়। এ নলে যদি কোন ঔষধ ব্যবহার করা হয় বা পাইপের ভিতর দিয়ে পানি/ঔষধ ছিটানো হয়ে থাকে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে, আর যদি কোন ঔষধ লাগানো না থাকে তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)

 

৫. নাইট্রোগ্লিসারিন (Nitro Glycerin): এরোসল জাতীয় ঔষধ, যা হার্টের জন্য দুই-তিন ফোটা জিহ্বার নীচে দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে।ঔষধটি শিরার মাধ্যমে রক্তের সাথে মিশে যায় এবং ঔষধের কিছু অংশ গলায় প্রবেশ করার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। অতএব- এতে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)


৬.  লেপারোস কপি (Laparoscopy): শিক্ জাতীয় একটি যন্ত্র দ্বারা পেট ছিদ্র করে পেটের ভিতরের কোন অংশ বা গোশত ইত্যাদি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বের করে নিয়ে আসার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র। এতে যদি ঔষধ লাগানো থাকে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে অন্যস্থায় রোযা ভাঙ্গেব না। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)


৭. অক্সিজেন (Oxygen): রোজা অবস্থায় ঔষধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোযা ভাঙ্গবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)


৮. মস্তিস্ক অপারেশন (Brain Operation): রোজা অবস্থায় মস্তিস্ক অপারেশন করে ঔষধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক রোজা ভাঙ্গবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)


৯.  রক্ত নেয়া বা দেয়া : রোজা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের করলে বা শরীরে প্রবেশ করালে রোজা ভাঙ্গবে না। (আহসানুল ফতওয়া)


১০. সিস্টোসকপি (cystoscopy): প্রসাবের রাস্তা দিয়ে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে যে পরীক্ষা করা হয় এর দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে না। (হেদায়া)


১১. প্রক্টোসকপি (proctoscopy): পাইলস, পিসার, অর্শ, হারিশ, বুটি ও ফিস্টুলা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোসকপ বলে।মলদ্বার দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। রোগী যাতে ব্যথা না পায় সে জন্য নলের মধ্যে গ্লিসারিন জাতীয় কোন পিচ্ছল বস্তু ব্যবহার করা হয়। নলটি পুরোপুরী ভিতরে প্রবেশ করে না। চিকিৎসকদের মতানুসারে ঐ পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সাথে মিশে থাকে এবং নলের সাথেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না। আর থাকলেও তা পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে। যদিও শরীর তা চোষে না কিন্তু ঐ বস্তুটি ভিজা হওয়ার কারণে রোজা ভেঙ্গে যাবে।(ফতওয়া শামী)


১২. কপার-টি (Coper-T): কপার-টি বলা হয় যোনিদ্বারে প্লাস্টিক লাগানোকে, যেন সহবাসের সময় বীর্যপাত হলে বীর্য জরায়ুতে পৌছাতে না পারে। এ কপার-টি লাগিয়েও সহবাস করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।কাযা কাফফারা উভয়টাই ওয়াজিব হবে।


১৩. সিরোদকার অপারেশন(Shirodkar Operation): সিরোদকার অপারেশন হল অকাল গর্ভপাত হওয়ার আশংখা থাকলে জরায়ুর মুখের চতুষ্পার্শ্বে সেলাই করে মুখকে খিচিয়ে রাখা।এতে অকাল গর্ভপাত রোধ হয়।যেহেতু এতে কোন ঔষধ বা বস্তু রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালি স্থানে পৌছে না তাই এর দ্বারা রোযা ভাঙ্গবে না।


১৪. ডি এন্ড সি (Dilatation and Curettage): ডি এন্ড সি হল আট থেকে দশ সপ্তাহের মধ্য Dilator এর মাধ্যমে জীবত কিংবা মৃত বাচ্চাকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করে নিয়ে আসা। এতে রোযা ভেঙ্গে যাবে। অযথা এমন করলে কাযা কাফফারা উভয়টি দিতে হবে এবং তওবা করতে হবে।(হেদায়া)


১৫. এম আর(M.R): এম আর হল গর্ভ ধারণের পাঁচ থেকে আঁট সপ্তাহের মধ্যে যোনিদ্বার দিয়ে জরায়ুতে এম,আর সিরন্জ প্রবেশ করিয়ে জীবত কিংবা মৃত ভ্রণ নিয়ে আসা। যারপর ঋতুস্রাব পুনরায় হয়। অতএব মাসিক শুরু হওয়ার কারণে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। কিন্তু যদি রাতের বেলা করা হয় তাহলে দিনের রোজা কাযা করতে হবে না। (ফতহুল কাদীর)


১৬. আলট্রাসনোগ্রাম (Ultrasongram): আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষায় যে ঔষধ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সবই চামড়ার উপরে থাকে, তাই আলট্রাসনোগ্রাম করলে রোযা ভাঙ্গবে না। (হেদায়া)


১৭. স্যালাইন (Saline): স্যালাইন নেয়া হয় রগে, আর রগ যেহেতু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয়, তাই স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙ্গবে না, তবে রোজার কষ্ট লাঘবের জন্য স্যালাইন নেয়া মাকরূহ। (ফতওয়ায়ে দারাল উলূম)


১৮. টিকা নেয়া (Vaccine) : টিকা নিলে রোজা ভাঙ্গবে না। কারণ, টিকা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তায় ব্যবহার করা হয় না। (আপকে মাসায়াল)


১৯.  ঢুস লাগানো (Douche): ঢুস মলদ্বারের মাধ্যমে দেহের ভিতরে প্রবেশ করে, তাই ঢুস নিলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। ঢুস যে জায়গা বা রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে এ জায়গা বা রাস্তা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য স্থান । (ফতওয়া শামী)


২০. ইনসুলিন গ্রহণ করা: (Insulin): ইনসুলিন নিলে রোজা ভাঙ্গবে না। কারণ, ইনসুলিন রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে না এবং গ্রহণযোগ্য খালী জায়গায় প্রবেশ করে না।(জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)


২১. দাঁত তোলা: রোজা অবস্থায় একান্ত প্রয়োজন হলে দাঁত তোলা জায়েয আছে। তবে অতি প্রয়োজন না হলে এমনটা করা মাকরূহ। ঔষধ যদি গলায় চলে যায় অথবা থুথু থেকে বেশী অথবা সমপরিমান রক্ত যদি গলায় যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (আহসানুল ফতওয়া)


২২. পেস্ট, টুথ পাউডার ব্যবহার করা : রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় টুথ পাউডার, পেস্ট, মাজন ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরূহ। কিন্তু গলায় পৌঁছালে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)


২৩. মিসওয়াক করা : শুকনা বা কাঁচা মিসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজার দ্বারা রোজার কোন ক্ষতি হয় না। চাই যখনই করা হোক না কেন। (ফতওয়া শামী)


২৪. মুখে ঔষধ ব্যবহার করা : মুখে ঔষধ ব্যবহার করে তা গিলে ফেললে বা ঔষধ অংশ বিশেষ গলায় প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। গলায় প্রবেশ না করলে রোজা ভাঙ্গবে না। (ফতওয়া শামী)


২৫. রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। তবে খুব বেশী পরিমাণে রক্ত দেয়া যার দ্বারা শরীরে দুর্বলতা আসে, তা মাকরূহ।


২৬. ডায়াবেটিসের ‍সুগার মাপার জন্য সুচ ঢুকিয়ে যে একফোটা রক্ত নেয়া হয়, এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না।


২৭. নাকে ঔষধ দেয়া : নাকে পানি বা ঔষধ দিলে যদি তা খাদ্য নালীতে চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। (ফতওয়া রাহমানিয়া)


২৮. চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করা : চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করার দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় অনুভব হয়। (হেদায়া)


২৯. কানে ঔষধ প্রদান করা : কানে ঔষধ, তেল ইত্যাদি ঢুকালে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তবে গোসল করার সময় অনিচ্ছায় যে পানি কানে ঢুকে তাতে রোযা ভঙ্গ হবে না। অবশ্য এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যেন পানি গলায় না চলে যায়। (মাকালাতুল ফিকহীয়া)


৩০. নকল  দাঁত মুখে রাখা: রোজা রেখে নকল দাঁত মুখে স্থাপন করে রাখলে রোজার কোন ক্ষতি হয় না। (ইমদাদুল ফতওয়া)।

রমজানের ফজিলত

রমযানে কেউ যদি একবার পড়ে "সুবহানাল্লাহ" তাহলে সে একটা ফরজের সমান সওয়াব পাবে। কেউ যদি একশত বার পড়ে "সুবহানাল্লাহ" তাহলে সে ১০০ টা ফরজের সমান সওয়াব পাবে। যদি কেউ "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" ১ বার পড়ে, তাহলে একটা ফরজের সমান সওয়াব পাবে। কেউ যদি ১০ বার  পড়ে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" তাহলে সে দশটা ফরজের সমান সওয়াব পাবে। কেউ যদি ১ টাকা দান করে, সে একটা নফল কাজ করল। তাহলে সে একটা ফরজের সওয়াব পাবে। অনুরূপভাবে কেউ যদি একশত টাকা দান করে তাহলে সে ১০০ টা ফরজের সমান সওয়াব পাবে।যদি কেউ এক বার দুরুদ শরীফ পড়ে,তাহলে সে একটা নফল আমল করল।আর এক বার দুরুদ শরীফ পড়ার কারণে সে একটা ফরজের সমান সওয়াব পেয়ে যাবে। কেউ যদি দশবার দরুদ শরীফ পড়ে, তাহলে সে ১০টা ফরজ আদায় করার সওয়াব পেয়ে যাবে। কেননা :

  🌹রমযানে কেউ যদি ১টা ফরজ আমল করে তাহলে সে ৭০ টা ফরজের  সওয়াব পেয়ে যাবে।
- ইবনে খুযাইমাহ, বাইহাকী, সহীহ ইবনে হিব্বান।🌹
🌾সংগৃহীত এবং জনস্বার্থে প্রচারিত ।

Thursday 11 February 2021

ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়াল প্রতিপালন করার বিধান

 *السَّـــــــلَامُ عَلَيــْــكُمْ وَرَحْمَةُ اللّٰهِ وَبَرَكَـــاتُهُ*

(আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু)


*بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحَيْمِ*

(শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু)


প্রশ্নঃ- ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়াল প্রতিপালন করার বিধান কি?


উত্তরঃ- ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়াল প্রতিপালনে কোন বাধা নাই। তবে বিড়ালকে পর্যাপ্ত খাদ্য-পানীয় সরবরাহ করতে হবে এবং তার প্রতি দয়া করতে হবে। তাকে কষ্ট দেয়া বা তার উপর জুলুম-অত্যাচার করা যাবে না। অন্যথায় গুনাহগার হতে হবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এক মহিলা বিনা কারণে একটি বিড়ালকে বন্দী রেখে না খাইয়ে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলার কারণে জাহান্নামি হয়েছে। 

আব্দুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِي هِرَّةٍ سَجَنَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ فَدَخَلَتْ فِيهَا النَّارَ لاَ هِيَ أَطْعَمَتْهَا وَسَقَتْهَا إِذْ حَبَسَتْهَا وَلاَ هِيَ تَرَكَتْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ

“এক মহিলাকে একটি বিড়ালের জন্য আজাব দেয়া হয়েছে এজন্য যে, সে বিড়ালটিকে আটকে রাখায় সেটি সেটি মারা গিয়েছিলো। ফলে সে জাহান্নামে গেছে। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিলো কিন্তু নিজেও তাকে খাবার-পানীয় দেয় নি আবার ছেড়েও দেয় নি যে, সে জমিনের পোকামাকড় খেয়ে বাঁচতে পারে।" [সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৪৫, অধ্যায়: সালাম, পরিচ্ছদ: বিড়াল হত্যা করা হারাম-হাদিস একাডেমি]


• কুকুর, বিড়াল, মুরগি, পাক-পাখালি সহ আল্লাহর যে কোনও সৃষ্টির প্রতি দয়া করলে এবং তাদেরকে খাবার-পানীয় দান করলে দয়াময় আল্লাহও দয়া করেন এবং দান করেন অজস্র সওয়াব। (সুবহানাল্লাহ! ইসলাম কতই না মহান জীবনাদর্শ!)


আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمَنُ ارْحَمُوا أَهْلَ الْأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ

"দয়াশীলদের উপর দয়াময় আল্লাহও দয়া করেন। তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদেরর প্রতি দয়া করবেন।"

[সুনান আবু দাউদ, ৩৬/ শিষ্টাচার, পরিচ্ছেদ: ৬৬. দয়া সম্পর্কে, হা/৪৯৪১]


হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنَّ لَنَا فِي هَذِهِ الْبَهَائِمِ لأَجْرًا فَقَالَ ‏"‏ فِي كُلِّ كَبِدٍ رَطْبَةٍ أَجْرٌ

(সাহাবীগণ) প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসূল, পশুপাখিদের মধ্যেও আমাদের জন্য সওয়াব রয়েছে? তিনি বললেন, "প্রতিটি তাজা কলিজায় সওয়াব রয়েছে।" [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ৪০-সালাম, পরিচ্ছেদ: ৪১. যে কোন পশু-পাখিকে পান করানো ও খাবার দেয়ার ফজিলত]

এ ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তার ওজুর পাত্র থেকে পানি পান করানো এবং সাহাবী আবু হুরায়রা রা. এর বিড়াল প্রীতির কথা প্রসিদ্ধ।

আল্লাহু আলাম।



_*আরও পড়ুন:*_


_*নিরাপরাধ বিড়াল হত্যা করার গুনাহ এবং তার কাফফারা:*_


*প্রশ্নঃ- কেউ ব্যক্তি যদি কোনও বিড়াল হত্যা করে তাহলে কি তার কোন কাফফারা আছে? এ ক্ষেত্রে তার কী করণীয়?*


*উত্তরঃ-* ইসলামের দৃষ্টিতে বিশেষ কয়েকটি প্রাণী ছাড়া সব ধরণের প্রাণীকে বিনা কারণে হত্যা করা হারাম।

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, এক মহিলা বিনা কারণে বন্দী অবস্থায় না খাইয়ে কষ্ট দিয়ে একটি বিড়ালকে মেরে ফেলার কারণে জাহান্নামী হয়েছে। যেমন আবদুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ


عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِي هِرَّةٍ سَجَنَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ فَدَخَلَتْ فِيهَا النَّارَ لاَ هِيَ أَطْعَمَتْهَا وَسَقَتْهَا إِذْ حَبَسَتْهَا وَلاَ هِيَ تَرَكَتْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ

“একজন মহিলাকে একটি বিড়ালের জন্য আযাব (শাস্তি) দেয়া হয় এজন্য যে, সে বিড়ালটিকে আটকে রেখেছিল, পরিশেষে সেটি মারা গেল। যার জন্য সে জাহান্নামে গেল। যে মেয়ে লোকটি বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছে, নিজেও পানাহার করায়নি আর সেটিকে সে ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে জমিনের পোকামাকড় খেয়ে বাঁচতে পারে। (সহীহ মুসলিম, হা/5745,অধ্যায়ঃ সালাম (كتاب السلام)-পরিচ্ছদঃ বিড়াল হত্যা করা হারাম-হাদীস একাডেমী)


তবে কেউ যদি নিরাপরাধ কোন বিড়ালকে মেরে ফেলে তাহলে তার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে আল্লাহর নিকট তওবা করা আবশ্যক। সেইসাথে আর কখনো যেন এমন না করে সে জন্য আল্লাহর নিকট অঙ্গীকার করবে। তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। এতে তার জন্য আলাদা কোন কাফফারা নেই। আল্লাহু আলাম।

الله أعلم بالصواب



উত্তর প্রদানে:

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব ।

সংগৃহীত ও জনস্বার্থে প্রচারিত।